সিবিআইয়ের পর এ বার রদবলল ইডি-তে, প্রধান পদে ন্যাশনাল হেরাল্ড মামলার তদন্তকারী


সিবিআইয়ের পরে এ বার বদল এল এনফোর্সমেন্ট ডিরেক্টরেট (ইডি)-র শীর্ষ স্তরে। সেখানেও ছায়া পড়ল সিবিআইয়ের অন্তর্দ্বন্দ্বের। ইডি প্রধান পদে কার্নাল সিংহের মেয়াদ শেষ হচ্ছে আগামিকাল। আজ এক নির্দেশে নরেন্দ্র মোদী সরকার জানিয়েছে, আপাতত তিন মাসের জন্য ইডি প্রধানের অতিরিক্ত দায়িত্ব হিসেবে দেওয়া হয়েছে ১৯৮৪ ব্যাচের আইআরএস সঞ্জয় মিশ্রকে। তাঁকে ইডি-তে প্রধান বিশেষ অধিকর্তার মর্যাদা দেওয়া হয়েছে।  বর্তমানে দিল্লির মুখ্য আয়কর কমিশনারের পদে রয়েছেন সঞ্জয়। রাহুল ও সনিয়া গাঁধীর বিরুদ্ধে ন্যাশনাল হেরাল্ড মামলা-সহ বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ মামলার তদন্ত করেছেন তিনি। সরকারি সূত্রে খবর, ইডি প্রধানের পদমর্যাদায় অতিরিক্ত সচিবের সমতুল। সঞ্জয়কে  এখনও অতিরিক্ত সচিবের মর্যাদা দেওয়া হয়নি। সেই প্রক্রিয়া সম্পন্ন হলেই তিনি পাকাপাকি ভাবে ইডি প্রধান হিসেবে কাজ করবেন। 

প্রায় তিন বছর ইডি প্রধানের পদে ছিলেন ১৯৮৪ ব্যাচের আইপিএস কার্নাল সিংহ। ২০১৬ সালে অতিরিক্ত দায়িত্ব হিসেবে ইডি প্রধানের কাজ সামলাতে শুরু করেন তিনি। সেই সময়ে তিন মাস করে তিন বার ওই পদে তাঁর মেয়াদ বাড়ানো হয়েছিল। পরে আদালতের নির্দেশে তাঁকে ২০১৬ সালের অক্টোবর থেকে দু'বছরের জন্য পাকাপাকি ভাবে ইডি প্রধানের দায়িত্ব দেওয়া হয়। সেই সময়ে ভিভিআইপি কপ্টার কেলেঙ্কারি, পি চিদম্বরম ও তাঁর ছেলে কার্তির বিরুদ্ধে মামলা, বিজয় মাল্য-নীরব মোদীদের বিরুদ্ধে তদন্তের দায়িত্ব সামলেছে ইডি। সরকারি সূত্রের মতে, এই সময়ে ইডি-র দায়ের করা মামলার সংখ্যা ও বাজেয়াপ্ত করা সম্পত্তির পরিমাণ অনেক বেড়েছে।

সরকারি সূত্রের মতে, ইডি প্রধান হিসেবে কার্নাল সিংহের মেয়াদ বাড়ানো নিয়ে জল্পনা ছিল ঠিকই। কিন্তু সিবিআইয়ের শীর্ষ স্তরে অন্তর্দ্বন্দ্বের ফলে কার্নালই সরে দাঁড়ানোর সিদ্ধান্ত নেন। সিবিআই প্রধান অলোক বর্মার সঙ্গে দ্বন্দ্বের সময়ে ওই সংস্থার বিশেষ অধিকর্তা রাকেশ আস্থানা অভিযোগ করেন, ইডি-র যুগ্ম অধিকর্তা 

রাজেশ্বর সিংহ অলোকের ঘনিষ্ঠ। তাঁরা হাত মিলিয়ে আস্থানার ভাবমূর্তি নষ্ট করার চেষ্টা করছেন। দিল্লির সরকারি শিবিরে কার্নাল আবার রাজেশ্বরের ঘনিষ্ঠ হিসেবে পরিচিত। রাজেশ্বরের বিরুদ্ধে এক মামলায় সুপ্রিম কোর্টে সরকারের তরফে গুপ্তচর সংস্থা র'-এর একটি নোট পেশ করা হয়। তাতে জানানো হয়েছিল, রাজেশ্বরের সঙ্গে পাকিস্তানি গুপ্তচর সংস্থা আইএসআইয়ের যোগাযোগ আছে। তখন কার্নাল বিবৃতি দিয়ে রাজেশ্বরের পাশে দাঁড়ান। 

সিবিআইয়ের দ্বন্দ্বের জেরে অলোক ও রাকেশকে ছুটিতে পাঠানো হয়েছে। সেই সিদ্ধান্তকে চ্যালেঞ্জ করে সুপ্রিম কোর্টে মামলা করেছেন অলোক। তাতে যথেষ্ট বিব্রত সরকার। সরকারি সূত্রের মতে, সেই কারণেই কার্নালের মেয়াদ বাড়িয়ে ফের ঝুঁকি নিতে চাননি কেউই। আবার নতুন নিয়োগের ক্ষেত্রেও সতর্ক থাকতে হয়েছে সরকারকে। কারণ, কোনও বিতর্কিত অফিসার দায়িত্ব নিলে সিবিআই-ইডি কলহ বাড়তে পারত। রাজেশ্বর সিংহকেও 'নিয়ন্ত্রণে' রাখা প্রয়োজন বলে মনে করছেন সরকারের কর্তারা। এ ক্ষেত্রে সঞ্জয় 'নিরাপদ' বলেই মনে করছেন আমলারা। কারণ, সঞ্জয় প্রধানমন্ত্রীর দফতরের বিশেষ বিশ্বাসভাজন হিসেবে পরিচিত। তাঁর হাতেই কংগ্রেস শীর্ষ নেতাদের বিরুদ্ধে মামলার ভার ছিল। তাই তিনিই এই জটিল পরিস্থিতিতে ইডি-র দায়িত্ব ভাল ভাবে সামলাতে পারবেন বলে মনে করছেন শীর্ষ কর্তারা।