খিদে মেটাতে সম্বল বুনো লতা, ইয়েমেনে অপুষ্টিতে ধুঁকছে ৪ লক্ষ শিশু


অপুষ্টিতে ধুঁকছে যুদ্ধ বিধ্বস্ত ইয়েমেন। খিদের জ্বালায় বুনো লতাপাতা ফুটিয়ে খেতে বাধ্য হচ্ছেন অধিবাসীরা। ধুঁকতে থাকা শিশুদের দেখে শিউরে উঠছেন ত্রাণকর্মীরা। 

গত কয়েক বছরের নিরন্তর গৃহযুদ্ধের প্রকোপে খাদ্য উত্‍পাদন শিকেয় উঠেছে ইয়েমেনে। তার সবচেয়ে ভয়াবহ প্রভাব পড়েছে দেশের উত্তর প্রান্তের গ্রামগুলিতে। উত্তর ইয়েমেনের আসলাম জেলার স্বাস্থ্য শিবিরে ভিড় করছে অস্থি-চর্মসার শিশুর দল। হাড় জিরজিরে শরীর, কুঁচকে যাওয়া ত্বক আর ঠিকরে বেরিয়ে আসা চোখ নিয়ে তারা অপুষ্টির চূড়ান্ত স্তরে পৌঁছে গিয়েছে। 
চলতি বছরে এই অঞ্চলে অন্তত ২০টি শিশু অপুষ্টির শিকার হয়ে মারা গিয়েছে। সারা দেশের হিসেব ধরলে সংখ্যাটি আরও অনেক বেশি বলে মনে করছেন ত্রাণকর্মীরা। এলাকার এক গ্রামে খিদের তাড়ায় মায়ের দিকে হাত বাড়াতে দেখা গিয়েছে ৭ মাস বয়সী শিশুকন্যা জারাকে। কিন্তু অপুষ্টির কারণে তাকে স্তন্যপান করাতে অপারগ তার হাড্ডিসার জননী। অসহায় নারী কবুল করেছেন, 'জন্মের সময় থেকেই তীব্র অভাবের কারণে ওর জন্য গুঁড়ো দুধ বা ওষুধ কিনতে পারিনি।'

স্বাস্থ্য কেন্দ্রে চিকিত্‍সার পরে আপাতত সুস্থ হয়ে বাড়ি ফিরেছে জারা। তবে কিছু দিনের মধ্যেই ফের সে অপুষ্টিতে আক্রান্ত হয়ে নেতিয়ে পড়ে। এদিকে স্বাস্থ্য কেন্দ্রে নিয়ে যাওয়ার জন্য কোনও গাড়ি বা মোটরবাইক ভাড়া করতে অসমর্থ তার দরিদ্র বাবা-মা। শেষ পর্যন্ত হয়তো মৃতের সংখ্যা বাড়ানোই হবে এই শিশুর ভবিতব্য। 

আসলাম জেলার ক্রমবর্ধমান অপুষ্টি থেকে বোঝা যায়, আন্তর্জাতিক ত্রাণ ব্যবস্থায় বেশ কিছু ফাঁক থেকে যাচ্ছে। তবু এই ত্রাণ সাহায্যের কারণেই এখনও পর্যন্ত তা মহামারীর আকার ধারণ করতে পারেনি। তবে দীর্ঘমেয়াদী যুদ্ধের ফলে এই পরিস্থিতি যে আসতে বাধ্য, তা আগাম সতর্কতায় জানিয়েছিলেন মানবাধিকার কর্মীরা।

অপুষ্টির বলি অসংখ্য শিশু।
রাষ্ট্রপুঞ্জের অধীনস্থ সংস্থাগুলির কাছে বিষয়টি অ্যাসোসিয়েটেড প্রেস সংস্থা জানালে তারা বিস্ময় ও উদ্বেগ প্রকাশ করে। কী কারণে চূড়ান্ত অপুষ্টিতে ভোগা পরিবারগুলির কাছে ত্রাণ পৌঁছচ্ছে না, তার অনুসন্ধান শুরু করেছে আন্তর্জাতিক ও স্থানীয় উদ্ধারকারী দলগুলি। 

প্রসঙ্গত, গত ৩ বছর যাবত্‍ শিয়াপন্থী হুউতিদের বিরুদ্ধে সৌদি আরবের নেতৃত্বাধীন ও আমেরিকার মদতপুষ্ট ফৌজের লড়াই চলেছে ইয়েমেনে। উত্তরাংশে ঘাঁটি গাড়া হুউতিদের বোমা বর্ষণ করে বশ করতে সচেষ্ট মিলিত সরকারি বাহিনী। তবে সহজে হাল ছাড়ছে না বিদ্রোহীরাও। এদিকে চূড়ান্ত অর্থাভাবের শিকার দেশের প্রশাসন তার নাগরিকদের খাদ্যের জোগান দিতে পুরোপুরি ব্যর্থ। এর জেরে প্রবল অপুষ্টির শিকার হয়েছেন প্রায় ২৯ লক্ষ নারী ও শিশু। খিদের জ্বালায় মৃত্যুর অপেক্ষায় রয়েছে আরও ৪ লক্ষ শিশু।