পুজোর অনুদান বন্ধ নয়, তবে দিতে হবে হলফনামা


দুর্গাপুজোয় সরকারি অনুদান নিয়ে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের সরকার নিশ্চিন্তেই থাকল। পুজো উদ্যোক্তাদের ১০ হাজার টাকা বিলিতে সুপ্রিম কোর্ট কোনও স্থগিতাদেশ জারি করল না।

তবে কী ভাবে রাজ্য সরকার বিধানসভার সিলমোহর ছাড়াই নিজে নিজে দুর্গাপুজো কমিটিগুলিকে অর্থ বিলি করছে, তা নিয়ে আজ কড়া প্রশ্ন তুলেছে সুপ্রিম কোর্ট।

কলকাতা হাইকোর্ট এ বিষয়ে হস্তক্ষেপ না করার সিদ্ধান্ত নিলেও আজ সুপ্রিম কোর্টে বিচারপতি মদন বি লোকুর ও বিচারপতি দীপক গুপ্তর বেঞ্চ রাজ্যের কাছে জানতে চায়, কী ভাবে আপনারা নিজেরাই অর্থ বিলি করছেন?

রাজ্যের আইনজীবী কপিল সিব্বল জবাবে বলেন, রাজ্য নিজে থেকে অর্থ বিলি করছে না। রাজ্য পুলিশ ও কলকাতা পুলিশের মাধ্যমে এই অর্থ বিলি হচ্ছে। করদাতাদের টাকা এ ভাবে পুজো কমিটিকে বিলির বিরুদ্ধে মামলাকারী সৌরভ দত্ত এবং দ্যুতিমান বন্দ্যোপাধ্যায়ের হয়ে আইনজীবী বিকাশ ভট্টাচার্য বলেন, ধর্মনিরপেক্ষ দেশে ধর্মীয় অনুষ্ঠানে সরকারি অর্থ খরচ সংবিধান বিরোধী। করদাতাদের টাকা সরকার ধর্মীয় অনুষ্ঠানে খরচ করতে পারে না। তা সংবিধানের ২৭-তম অনুচ্ছেদের বিরোধী।

২৮ হাজার নথিভুক্ত ক্লাবের প্রত্যেককে দুর্গাপুজোর জন্য ১০ হাজার টাকা হিসেবে মোট ২৮ কোটি টাকা দেওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছিল মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের সরকার। সিব্বল যুক্তি দেন, পুজোর জন্য টাকা দেওয়া হচ্ছে না। পথ নিরাপত্তা সম্পর্কে সচেতনতা তৈরির জন্য প্রচারে এই অর্থ দেওয়া হচ্ছে। সরকারি বিজ্ঞপ্তিতেই তা স্পষ্ট করে বলা হয়েছে। পাল্টা বিকাশ আদালতে জানান, ওই বিজ্ঞপ্তি জারি হয়েছে হাইকোর্টে মামলার পরে। কোন নীতিনিয়ম মেনে ক্লাবগুলোকে টাকা দেওয়া হচ্ছে, কী ভাবে তাদের বাছা হয়েছে, তা নিয়েও প্রশ্ন তোলেন বিকাশ।

রাজ্যের লক্ষ্য ছিল, কোনও ভাবেই যেন টাকা বিলিতে সুপ্রিম কোর্ট বাধা না দেয়। যদিও প্রায় সব চেকই বিলি হয়ে গিয়েছে বলে সরকারি সূত্রের খবর। সিব্বল বলেন, টাকা চেকে দেওয়া হচ্ছে। অর্থ খরচের শংসাপত্রও জমা দিতে হবে ক্লাবগুলিকে। বিচারপতিরা রাজ্যকে হলফনামা দিয়ে বক্তব্য জানাতে বললে সিব্বল বলেন, ''আমার বয়ান নথিবদ্ধ করে নিন।'' তখন বিচারপতিরা বলেন, এ ভাবে হবে না। দীর্ঘ ক্ষণ আলোচনার পরে বিচারপতিরা জানান, ছয় সপ্তাহের মধ্যে হলফনামা দিয়ে রাজ্যকে তাদের বক্তব্য জানাতে হবে। বিলি করা টাকা ফেরতের প্রশ্ন উঠলে তা কী ভাবে করা হবে, এই প্রশ্নও উঠেছে আদালতে। মামলাকারীদের আইনজীবী শুভাশিস ভৌমিক জানান, সেই বিষয়টি চূড়ান্ত শুনানিতে ঠিক হবে বলে জানিয়েছেন বিচারপতিরা। একই সঙ্গে রাজ্য সরকারকে কথা দিতে হয়েছে যে, পুলিশের মাধ্যমেই টাকা বিলি করা হবে।