‘স্যার, আমিও একদিন বড় রান করব’ বলেছিল পৃথ্বী

স্মৃতি: ৫৪৬ রানের ইনিংসের পরে জাভেদ রিজ়ভির সঙ্গে পৃথ্বী।


বৃহস্পতিবার স্কুলে গিয়েই চমকে গিয়েছিলাম। ছাত্রেরা প্রায় নেই। অধিকাংশ ক্লাসই ফাঁকা। কী ব্যাপার? হঠাৎ মনে পড়ল, আজ তো রাজকোটে ওয়েস্ট ইন্ডিজের বিরুদ্ধে টেস্ট অভিষেক হচ্ছে আমাদের রিজ়ভি স্প্রিংফিল্ড স্কুলের গর্ব পৃথ্বী শ-র। ওর খেলা দেখার জন্যই গণছুটি নিয়েছে ছাত্রেরা। 

পৃথ্বীর টেস্ট অভিষেক দেখে আমার মনেও ভিড় করছিল অনেক পুরনো স্মৃতি। মনে পড়ে যাচ্ছিল, আমাদের স্কুলে ওর ভর্তি হওয়ার কাহিনি।

আমি সে দিন স্কুলেই ছিলাম। এক জন এসে বলল, বিরারে একটি দারুণ প্রতিভাবান ছেলে আছে। সে রিজ়ভি স্প্রিংফিল্ড স্কুলে ভর্তি হতে চায়। আমাদের স্কুল প্রচুর প্রতিযোগিতায় খেলে বলে, অনেকেই ভর্তি হতে চায়। তা ছাড়া আমাদের স্কুল ও কলেজের আবহ পুরোটাই ক্রিকেটীয়। একাধিক ক্রিকেটার এই স্কুল থেকে জাতীয় দলে প্রতিনিধিত্ব করেছে। পৃথ্বীর কথা শোনার পরে আমাদের কোচ রাজু পাঠককে বললাম, এই ছেলেটাকে নেটে দেখতে হবে। ওকে আসতে বলুন। নেটে পৃথ্বীকে দেখে মুগ্ধ রাজু আমাকে বলেছিলেন, এক দিন দেশের হয়ে খেলবে পৃথ্বী। দারুণ প্রতিভা নিয়ে জন্মেছে। কিন্তু সমস্যা হচ্ছে, পৃথ্বীরা থাকে বিরারে। আমাদের স্কুল বান্দ্রায়। একটা সংশয় ছিল মনের মধ্যে, ছোট্টো ছেলেটা কি পারবে প্রায় প্রায় ৭০ কিলোমিটার দূর থেকে রোজ স্কুলে আসতে। 

আমাকে অবাক করে প্রত্যেক দিন ঠিক সময়ে বাবার সঙ্গে স্কুলে আসত পৃথ্বী। একটা দিনের জন্যও দেরি হয়নি। ম্যাচের সময়ও তাই। সকাল ন'টায় হয়তো সবাইকে আসতে বলা হয়েছে। আমরা দেখতাম, পৌনে ন'টাতেই পৌঁছে গিয়েছে ও। পৃথ্বীর উত্থানের নেপথ্যে ওর বাবার অবদানও প্রচুর।

অসম্ভব শৃঙ্খলাপরায়ণ ছিল পৃথ্বী। আরও একটা কাহিনি মনে পড়ে যাচ্ছে। পৃথ্বী ছাড়াও আমাদের স্কুলে আরও দু'জন দারুণ সম্ভাবনাময় ক্রিকেটার ছিল। সরফরাজ খান ও আরমান জাফর। ৩৩০ রান করেছিল সরফরাজ। ৪৫০ রান করেছিল আরমান। পৃথ্বী সেই সময় ১৮০ বা ২০০ রান করছিল। এক দিন সরফরাজ ও আরমানের উদাহরণ দিয়ে আমি সবাইকে বললাম, ক্রিকেট কী ভাবে খেলতে হয় ওরা দু'জন দেখিয়ে দিয়েছে। চুপ করে আমার কথা শুনেছিল পৃথ্বী। বক্তব্য শেষ করার পরে আমার কাছে এসে বলল, স্যর আমিও বড় রান করব। সে দিন ওর আত্মবিশ্বাস দেখে মুগ্ধ হয়েছিলাম। বৃহস্পতিবার রাজকোটে ওয়েস্ট ইন্ডিজের বিরুদ্ধেও একই রকম আত্মবিশ্বাস নিয়ে খেলতে দেখলাম ওকে। 

এই নিয়ে তৃতীয় বার পৃথ্বীর জন্য দারুণ গর্ব অনুভব করছি। প্রথম বার হ্যারিস শিল্ডে ৫৪৬ রান করার পরে। দ্বিতীয় বার অধিনায়ক হিসেবে অনূর্ধ্ব-১৯ বিশ্বকাপে ভারতকে চ্যাম্পিয়ন করল। এ বার অভিষেকের টেস্টে শতরান। পৃথ্বী উত্থান অনেকের কাছে চমকপ্রদ হলেও আমার কাছে প্রত্যাশিত। পৃথ্বী প্রতিভা নিয়েই জন্মেছে। তবে অনেক প্রতিশ্রুতিমানই হারিয়ে যায়। পৃথ্বী শৃঙ্খলাপরায়ণ বলেই এই জায়গায় পৌঁছেছে। ওর আরও একটা গুণ, ফিটনেসের প্রতি জোর দেওয়া। সব সময় নিজেকে ফিট রাখার চেষ্টা করে। যা অত্যন্ত জরুরি এক জন ক্রীড়াবিদের কাছে। স্কুল শেষ করে রিজ়ভি স্প্রিংফিল্ড কলেজে ভর্তি হওয়ার পরেও বদলায়নি ওর মানসিকতা। 

এই মুহূর্তে পৃথ্বী অন্য ছাত্রদের কাছে উদাহরণ। অভিষেক টেস্টে সেঞ্চুরি দেখার পরে, খুব ইচ্ছে করছিল পৃথ্বীর সঙ্গে কথা বলার। ভেবে দেখলাম, এখন ওকে বিরক্ত করব না। ওর মনঃসংযোগ নষ্ট হয়ে যেতে পারে। পরে বড় করে সংবর্ধনা দেব। রোহিত শর্মা, অজিঙ্ক রাহানে-সহ স্কুল ও কলেজের অনেককেই আমন্ত্রণ জানানোর পরিকল্পনা রয়েছে।