দুর্গার কৃপায় লক্ষ্মী লাভ, ৫০০০ দুঃস্থকে বস্ত্রদান রাজমিস্ত্রির


তেহট্ট : দুর্গার কৃপা ভোলেননি গণেশ। এক সময়ে অভাব ছিল, এখন তা দূর হয়েছে। তিনি বিশ্বাস করেন, তাঁর এই সুসময়ে দুর্গা সহায়। তেহট্টের গণেশ মণ্ডল দুর্গাপুজো এলেই প্রস্তুতি শুরু করে দেন। গ্রামে তিনি এখন জিরো থেকে হিরো। তাই মা দুর্গার কৃপা স্মরণ করে প্রত্যেক বছরের মতো এই বছরেও কয়েক লক্ষ টাকা ব্যয় করে পুজো করছেন। পাঁচ হাজার দুঃস্থদের মধ্যে পোশাকও বিতরণ করেছেন।

এক সময় খুব অভাবের সংসার ছিল, বাবা দিনমজুরের কাজ করতেন। কোনওরকমে একচালা খড়ের ছাউনি দেওয়া ঘরেই বসবাস করতেন তিনি ও তাঁর পরিবার। এর মধ্যেই একদিন গণেশবাবুর বাবা বলহরি মণ্ডল মারা যান। এমন পরিস্থিতিতে তাঁর  মা রেখাদেবী আর্থিক বিপর্যয়ের মধ্যে পড়েন। অধিকাংশ দিন খালি পেটে স্কুলে যাওয়ার সময়ে গণেশের ভাবনা ছিল,  কী করে তাঁদের আগামী দিনগুলি চলবে। খুব কম বয়সেই সংসারের অভাব দূর করতে পাড়ি দিয়েছিলেন মুম্বই। তাঁর কথায়,  তখন বেতাই হাই স্কুলের সপ্তম শ্রেণিতে পড়তাম। মা অসুস্থ হয়ে বিছানায় পড়ে ছিলেন। সেদিন মনটা খুব খারাপ ছিল। কাউকে কিছু না বলে কলকাতাগামী বাসে উঠে পড়লাম। কোনও উদ্দেশ্য ঠিক ছিল না। অজানার পথে পাড়ি দিয়েছিলেন। বাসে যেতে যেতে এলাকার পরিচিত কয়েকজনের মুম্বই যাওয়ার কথা মনে হল। যেমন ভাবা তেমন কাজ। হাওড়া স্টেশন থেকে ট্রেনে চেপে পৌঁছে গেলেন মুম্বই। অচেনা জায়গায় দিশেহারা হয়ে ঘুরতে ঘুরতে একদিন কাজের সন্ধান পেয়ে গেলেন। সেখানে কাজ করতে গিয়ে কখনও রাজমিস্ত্রি আবার কখনও কাঠমিস্ত্রির সহকারী হয়ে কাজ শুরু করি। মা দুর্গার কৃপায় আর পিছন ফিরে তাকাতে হয়নি। কাজের সুবাদে অনেকের বিশ্বস্ত এবং প্রিয় হয়ে যান খুব তাড়াতাড়ি। পরে ঠিকাদারের কাজ করে সম্পন্ন গৃহস্ত হয়ে ওঠেন। মা দুর্গার কৃপায় ভাগ্য ফিরেছে। তাই মায়ের পুজো করে দুঃস্থদের হাতে জামাকাপড় তুলে দেওয়ার সিদ্ধান্ত নেন। এভাবেই চলছে এখন। গণেশবাবু নিজের মুখেই শোনালেন তাঁর কথা, 'পুজোর সময়ে যখন বাধ্য হয়ে পেটের তাগিদে মুম্বইয়ে থাকতাম তখন খুব মন খারাপ করতো। তাই পুজোর সময় একবার মানত করলাম,  মা যদি আমাকে কৃপা করো তবে প্রত্যেক বছর গ্রামের বাড়িতে তোমার পুজো দেব। শেষমেশ মা দুর্গার আশীর্বাদে গত ন'বছর ধরে গ্রামের বাড়িতে পুজো করি।'

এবার পঞ্চমীর দিন থেকেই বিভিন্ন অনুষ্ঠান চলছে। ষষ্ঠীর দিন থাকছে মহিলা ও পুরুষ মিলিয়ে প্রায় ৫০০০ জন দুঃস্থকে শীতবস্ত্র, শাড়ি ও ধুতি বিতরণ করেন। অষ্টমীতে প্রসাদ হিসাবে ছিল ৪০ কুইন্টালের বেশি ময়দার লুচি।  যা আগের দিন রাত থেকেই ৪০টি কড়াইয়ে ভাজা হয়েছে। সঙ্গে ছোলার ডাল ও সন্দেশ। গণেশবাবুর মা রেখাদেবী জানালেন,  'ছেলের বউ কণিকা সাংসারিক মেয়ে। দুর্গামায়ের আশীর্বাদে দুই নাতনি একতা ও গুঞ্জন এবং পরে আমার রাজলক্ষ্মী দাদুভাইয়ের জন্ম হয়েছে। তাই বিগত দিনের থেকে এই বছর একটু বেশিই আনন্দ করব। প্রতি বছর পুজোর দায়িত্বে থাকেন গণেশবাবুর খুড়তুতো ভাই পাঁচকড়ি মণ্ডল। তিনি বলেন,  "প্রত্যেক বছর এলাকার সকলের আশীর্বাদ ও সহযোগিতায় এই মহৎ অনুষ্ঠান ভালভাবেই সম্পন্ন হয়। এবারও তা-ই হবে বলে আশা করছি।"