জীবন হবে আরও সরল ; তথ্যপ্রযুক্তিতে বাঙালি গবেষকের নয়া দিশা

গবেষক দীপশুভ্র গুহরায়
     
কলকাতা : জীবন হবে সরল। পরিচালন পদ্ধতি হবে আরও সহজ। প্রতিটি পদক্ষেপ থাকবে আপনার কন্ট্রোলে। গবেষক দীপশুভ্র গুহরায় এমনই এক ডিভাইস আবিষ্কার করে ফেলেছেন যার ফলে পালটে যাবে আমার আপনার দৈনন্দিন কাজের ধরন। বাড়ি হোক বা হাসপাতাল, চাষাবাদ হোক বা নিরাপত্তা ব্যবস্থা। ফ্লাইওভারের সমস্যা হোক বা ভয়াবহ আগুন। বারাসতের বাসিন্দা গবেষক দীপশুভ্র গুহরায়ের আবিষ্কৃত ডিভাইসের ব্যবহারে বিপদের আঁচ পাওয়া যাবে আগে থেকেই।

কিন্তু, কী এমন আবিষ্কার করেছেন দীপশুভ্র? তিনি জানান, পৃথিবীর মধ্যে সব থেকে কম খরচে এমন এক ডিভাইস তিনি তৈরি করেছেন যার মাধ্যমে আটকানো যাবে ডেটা বা তথ্য লস বা ডেটার জেনারেশন লস। উদাহরণ হিসেবে ধরে নেওয়া যাক আপনার বাড়িতে একটি পাখা আছে। যা মোবাইল ফোন দ্বারা নিয়ন্ত্রণ করা যায়। অফিসের তাড়ায় পাখা বন্ধ না করেই চলে গেছেন। অফিসে গিয়ে মোবাইলের মাধ্যমে আপনি সেই পাখা বন্ধ করার হুকুম করলেন। কিন্তু, পাখা বন্ধ হল হুকুম করার আধঘণ্টা পর। কেন এমন হল? কারণ, আপনি যেখানে আছেন বা যেখানে আপনার বাড়ি সেখানে মোবাইল টাওয়ারের সমস্যা বা ইন্টারনেটের সমস্যা। ফলে আপনার কাছে প্রযুক্তি থাকার পরও আপনার কাজ হল না। বিদ্যুৎও খরচ হল প্রচুর।

গবেষক দীপশুভ্রের বক্তব্য, তিনি এমন এক প্রযুক্তি আবিষ্কার করে ফেলেছেন যার ফলে এই মেসেজ পৌঁছানোর কোনও সমস্যা হবে না যতই টাওয়ার বা ইন্টারনেট সমস্যা থাক। মেসেজ বা ডেটার কোনও জেনারেশন লসও হবে না। অর্থাৎ, বোতাম টেপার সঙ্গে সঙ্গে কাজ হবে। আর কাজের ভুলচুক হওয়ারও কোনও উপায় নেই। প্রযুক্তির দিক দিয়ে এই জেনারেশন লস বা মেসেজ ডিলের দুটো নাম আছে। মেসেজ লস ও এন্ড টু এন্ড মেসেজ ডিলে। দীপশুভ্রের বক্তব্য, ‌ইন্টারনেট অফ থিংস বা IOT-র গবেষণার অঙ্ক বা অ্যালগরিদমে পরিবর্তন এনেছেন তিনি। অ্যালগরিদমে পরিবর্তন এনে নতুন ডেটা গেট ওয়ে বা চ্যানেল তৈরি করে ফেলেছেন। যার মাধ্যমে নির্দ্বিধায় ডেটা চলাচল করতে পারবে, আর ডেটা লসও আটকানো যাবে। 

মৌলানা আবুল কালাম আজ়াদ প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয় (আগের নাম-WBUT)-র গবেষক দীপশুভ্র জানাচ্ছেন, তিনি এক সেন্সর তৈরি করে ফেলেছেন যার ফলে আপনার অনুপস্থিতিতে বাড়িতে বন্ধ হবে পাখা, ফ্রিজ, TV। আমুল বদলে ফেলা যাবে গাড়ির অডিয়ো ও ভিডিয়ো প্রযুক্তি। বাড়িতে কোনও অসুস্থ রোগী থাকলে তাঁকে কখন কী পরিষেবা দিতে হবে, কখন অক্সিজেন দিতে হবে, কখন ওষুধ দিতে হবে তাও বলে দেবে এই প্রযুক্তি। কোথাও আগুন লাগলে কতক্ষণের মধ্যে জল দিতে হবে, কোনও ফ্লাইওভারে সমস্যা হলে তা কী ধরনের সমস্যা তাও বলে দেবে এই প্রযুক্তি। দীপশুভ্রকে গবেষণার ব্যাপারে কাজে সাহায্য করেছেন আরও দু'জন গবেষক। বিপাশা মাহাত ও গবেষণার সুপারভাইজ়ার অধ্যাপক দেবাশিস দে। এছাড়াও অস্ট্রেলিয়ার ইউনিভার্সিটি অফ মেলবোর্নের অধ্যাপক রাজকুমার বুইয়াও তাঁকে অনুপ্রেরণা জুগিয়েছেন।

ইনাডু বাংলার সঙ্গে কথা বলতে গিয়ে দীপশুভ্র বলেন, "আমরা এই প্রযুক্তিকে প্রোটোটাইপ বানিয়েছি। ইন্টারন্যাশনাল জার্নালে এই প্রযুক্তি স্বীকৃতিও পেয়েছে। এবার আমরা এটাকে বাণিজ্যিকরণ করার চেষ্টা করছি। আমরা এটা প্রমাণ করে দিয়েছি যে ইচ্ছে থাকলে কলকাতায় বসে ছোটো ল্যাবেও বিশ্বমানের কাজ করা যায়। এর ফলে জীবন হবে আরও স্মার্ট ও ভবিষ্যৎদর্শী।" দীপশুভ্র আরও বলেন, এই প্রযুক্তির একটা খারাপ দিক রয়েছে। এমনিতেই মানুষে মানুষে কথা এখন অনেক কমে গেছে। আত্মীয়তা বজায় রয়েছে মোবাইলে। তাই এই প্রযুক্তির ব্যবহারে আমরা আরও অলস হয়ে পড়তে পারি।"