মোবাইল-প্রেমের গেরো, কিশোরের কপালে জুটল মায়ের থেকেও বয়সে বড় বউ


ফোনটা লেগে গিয়েছিল ভুল নম্বরে।  অপর প্রান্তে যিনি ফোনটা ধরেছিলেন, তাঁর গলার  স্বরটা ভালো লেগে গিয়েছিল বছর পনেরোর কিশোরের।  এরপর কথা হতে থাকে দু-তিন দিন পর পর, ধীরে ধীরে বাড়তে থাকে কথা বলার সময়।  ফেসবুক থেকে ম্যাসেঞ্জার, ধীরে ধীরে হোয়াটসঅ্যাপে গান,  অন্যান্য তথ্য আদানপ্রদান শুরু হয়। ফোনে অপরপ্রান্তে মিষ্টভাষী মহিলা কন্ঠের প্রেমে পড়ে যায় কিশোর। মহিলাও তাতে রাজি। তবে প্রেমের প্রস্তাব নয়, বাড়িতে এসে সরাসরি অভিভাবককে দিতে হবে বিয়ের প্রস্তাব- দেখা করার একটাই শর্ত দিয়েছিলেন ওই সুকন্ঠী।  প্রেমে হাবুডুবু খাওয়া কিশোর  তখন তাতেই রাজি হয়ে যায়।

মোবাইলে মাস খানেক চুটিয়ে প্রেমের পর 'তাঁর' সঙ্গে দেখা করতে যায় সে।  আর দেখা করতে গিয়েই বিপত্তি ! যেন বাজ ভেঙে পড়ল অসমের গোয়ালপাড়ার  শিমলিতোলার হেপচাপাড়া গ্রামের ১৫ বছরের কিশোরের মাথায় ।

বরপেটা জেলার সুখারচর গ্রামে প্রেমিকার বাড়িতে পৌঁছতেই সে পায়  উষ্ণ অভ্যর্থনা। জমিয়ে হয় পেটপুজোও। কিন্তু ততক্ষণেও প্রেমিকার দেখা পায়নি সে। পরিবারের সদস্যদের সঙ্গে কথার বলার ফাঁকে  কিশোরের চোখ খুঁজছিল 'তাঁকেই'। বাড়ছিল বুকের ধুকপুকানিও।  অতঃপর এক হাত ঘোমটা টেনে প্রেমিকা দেখা দিলেন। কিন্তু তবুও মুখ দেখতে পায়নি কিশোর। ঘোমটা সরাতেই চক্ষু চড়কগাছ! প্রথমে তো বুঝতেই পারেনি, 'ইনি প্রেমিকা না প্রেমিকার মা!' ভুল শুধরে যায় কয়েক মুহূর্তের মধ্যেই। আরে এ তো ৬০ বছরের এক  বৃদ্ধা! এরই সঙ্গে এতদিন কথা বলেছে সে, বিশ্বাসই করতে পারছিল না ওই কিশোর। পালিয়ে আসার চেষ্টা করেছিল, কিন্তু পারেনি।

প্রেমিকার পরিবার ধরেবেঁধে বিয়ে দিয়ে দেয় তাদের। মায়ের থেকেও বয়সে বড় মহিলাকে বউ করে বাড়িতে আনে এই কিশোর। কিন্তু পরিবার তো মানতে নারাজ। আর সেটাই তো স্বাভাবিক।  জানা যায়, ওই মহিলার স্বামীর মৃত্যু হয়েছে কয়েক বছর আগেই। তারপরই পরিবারের তরফে দ্বিতীয়বার বিয়ে দেওয়ার চেষ্টা চলছিল।

আরও পড়ুন: দাদার সঙ্গে ঝগড়া করে বাপেরবাড়ি গিয়েছিলেন বৌদি, ফেরত আনতে গেলেন দেওর... তারপর

সুখারচর গ্রামের টালির চালের ওই বাড়িতে এখন তিল ধারণের জায়গা নেই। আশেপাশের গ্রাম থেকেও মানুষ আসছেন নতুন বউকে দেখতে। লজ্জায় মুখ লুকোচ্ছে কিশোর। এই বিয়ে কোনওভাবেই মেনে নেবে না বলে জানিয়ে দিয়েছে কিশোরের পরিবার।  স্থানীয় থানায় অভিযোগ দায়ের হয়েছে। তদন্তে পুলিস। কিশোরের বয়স পনেরো বছর হওয়ায় আইনত সুবিধা পাবে বলেই মনে করা হচ্ছে।

মিস্ত্রির কাজ করা ওই কিশোর আসতে কাজের স্বার্থেই বঙ্গাইগাঁওতে এক বন্ধুকে ফোন করতে গিয়েছিল, আর তাতেই জীবনে নেমে এল ঘোর অন্ধকার। 'কোকিল কণ্ঠী'  যে আসলে তার দিদিমার বয়সী হবে, তা দুঃস্বপ্নেও ভাবতে পারেনি সে।