খাদ্যসুরক্ষায় জোর, রেস্তোরাঁয় নির্দেশিকা অমান্যে কড়া ব্যবস্থা


খাবার পরিবেশনের সময়ে পরিচ্ছন্ন ইউনিফর্ম পরে থাকতে হবে। টেবিলে খাবার পরিবেশনের আগে অবশ্যই হাত সাফসুতরো থাকতে হবে। অসুস্থ শরীরে কোনও অবস্থাতেই রান্না অথবা খাবার পরিবেশন করা যাবে না। প্লেট অথবা চামচ টেবিলে দেওয়ার আগে আলাদা পরিষ্কার কাপড় দিয়ে তা মুছতে হবে। রেস্তোরাঁয় 'ফ্রোজেন প্রোডাক্ট'কে রাখতে হবে মাইনাস ১৮ ডিগ্রি সেলসিয়াসের নীচে, রান্না করা খাবারকে (হট ফুড) রাখতে হবে ৬০ ডিগ্রি সেন্টিগ্রেডের উপরে। এই নির্দেশিকা অমান্য করলে এ বার কড়া পদক্ষেপের রাস্তায় হাঁটবে কেন্দ্রীয় সরকার। আগামী ১৫ অক্টোবরের মধ্যে গাইডলাইন-বোর্ড রেস্তোরাঁয় নির্দিষ্ট জায়গায় না-রাখা হলে 'কড়া পদক্ষেপ' গ্রহণ করার নয়া নির্দেশিকা দিয়েছে ফুড সেফটি অ্যান্ড স্ট্যান্ডার্ড অথরিটি অব ইন্ডিয়া (ফাসাই)।

দেশের সমস্ত রেস্তোরাঁ ও ফুড জয়েন্টের জন্য অনেক দিন আগেই এমনই এক ডজন গাইডলাইন তৈরি করেছে কেন্দ্রীয় স্বাস্থ্য মন্ত্রকের অন্তর্গত ফাসাই। রেস্তোরাঁয় জনসমক্ষে এই গাইডলাইন সংবলিত বোর্ড রাখা বাধ্যতামূলক করেছে তারা। মূল উদ্দেশ্য, রেস্তোরাঁয় কী ধরনের খাদ্যসুরক্ষা বহাল থাকা প্রয়োজন সেই সম্পর্কে আমজনতাকে সচেতন করা। কারণ একটি রেস্তোরাঁয় কী ধরনের খাদ্যসুরক্ষা থাকা দরকার সেই সম্পর্কে অনেক নাগরিকের সম্যক ধারণা থাকে না। শুধু স্বল্প শিক্ষিত ব্যক্তি নয়, উচ্চশিক্ষিত নাগরিকরাও অনেক সময় এই খাদ্যসুরক্ষার গাইডলাইনগুলি সম্পর্কে ওয়াকিবহাল থাকে না। বিশেষ করে দুর্গাপুজোর মতো বড় উৎসব-পার্বণে ছোট-বড় রেস্তোরাঁয় জনতার ঢল নামে। উৎসবের মরসুমে কলকাতা শহরে রেস্তোরাঁর সামনে ভোজনরসিকদের লাইন দিয়ে অপেক্ষা করার দৃশ্য হামেশাই দেখতে পাওয়া যায়। এই কারণে খাদ্যসুরক্ষা সংক্রান্ত গাইডলাইন রেস্তোরাঁয় এমন জায়গায় রাখার নির্দেশ দেওয়া হয়েছিল যাতে যে কোনও ব্যক্তির চোখে পড়ে। গত ফেব্রুয়ারি মাসে ফাসাই একটি নির্দেশিকায় রেস্তোরাঁর লাইসেন্স বজায় রাখার ক্ষেত্রে এই গাইডলাইন রাখা বাধ্যতামূলক করেছে। যদিও এই নির্দেশিকার পর ছয় মাস কেটে গেলেও, দেশের বহু শহরে রেস্তোরাঁয় প্রকাশ্য জায়গায় এই গাইডলাইন লেখা বোর্ড রাখা হয়নি। যদিও ফাসাই নির্দিষ্ট ভাবে জানিয়েছে রেস্তোরাঁয় রিসেপশনে, মূল দরজায়, বিল দেওয়ার জায়গায় এ-থ্রি মাপের এই বোর্ড রাখতে হবে। ছয় মাস কেটে যাওয়ার পরেও অনেক রেস্তোরাঁ এই নির্দেশিকা মান্য না-করায় এ বার কড়া পদক্ষেপের রাস্তায় হাঁটতে চলেছে কেন্দ্র।

যদিও এই নির্দেশিকা মোটামুটি মান্য করা হচ্ছে বলে জানাচ্ছেন হোটেল অ্যান্ড রেস্তোরাঁ অ্যাসোসিয়েশন অব ইস্টার্ন ইন্ডিয়ার সেক্রেটারি জেনারেল অতিক্রম গুপ্ত। পশ্চিমবঙ্গ, বিহার, ঝাড়খন্ড, ওডিশা-সহ পূর্ব ভারতের একাধিক রাজ্যের রেস্তোরাঁ এই সংগঠনের সদস্য। অতিক্রমের বক্তব্য, 'ফাসাই-এর নির্দেশিকা যাতে আমাদের সমস্ত সদস্য মান্য করে তার জন্য ইতিমধ্যে আমরা একাধিক কর্মশালা করেছি। ফাসাই-এর সমস্ত নির্দেশিকা আমরা পালন করি। আমাদের অধিকাংশ সদস্যই রেস্তোরাঁয় নির্দিষ্ট জায়গায় এই বোর্ড রাখার বিষয়ে অবগত রয়েছেন।' পূর্ব ভারতের হোটেল ও রেস্তোরাঁগুলির এই সংগঠনে প্রায় আটশো সদস্য রয়েছেন। যদিও ফাসাই সূত্রের খবর, নির্দিষ্ট অ্যাসোসিয়েশনের অন্তর্গত রেস্তোরাঁগুলি কমবেশি নিয়ম মানলেও, এর বাইরে প্রচুর রেস্তোরাঁ-ফুড জয়েন্ট রয়েছে, যেখানে নির্দেশিকা মানা হচ্ছে না। অথবা বোর্ড এমন জায়গায় রাখা হচ্ছে যা সহজে ক্রেতাদের চোখে পড়া মুশকিল। এই কারণে সমস্ত রাজ্যের ফুড সেফটি কমিশনারকে চিঠি দিয়েছেন ফাসাই-এর রেগুলেটরি কমপ্লায়েন্স বিভাগের অ্যাসিস্টান্ট ডিরেক্টর অখিলেশ গুপ্ত। ১৫ অক্টোবরের পর থেকেই ফাসাই-সহ সংশ্লিষ্ট সংস্থাগুলি অভিযানে নামতে চলছে। ফুড সেফটি অফিসারেরা ঝটিতি ইন্সপেকশনে যেতে পারেন। গাইডলাইনের বোর্ড যথাস্থানে না-থাকলেও বিক্রি বন্ধ করা থেকে লাইসেন্স বাতিল করার মতো কড়া পদক্ষেপ নিতে পারে এই নিয়ন্ত্রক সংস্থা।