দাড়িভিটের জেরে শিক্ষক নিয়োগে পিছু হঠল রাজ্য সরকার


কলকাতা: লিখিত এবং মৌখিক পরীক্ষাতে পাশ করে গিয়েছেন। হয়ে গেছে স্কুল বাছাইয়ের জন্য কাউন্সিলিংও। অপেক্ষা ছিল নিয়োগপত্র হাতে পেয়ে চাকরি জয়েন করার। রাজ্যের নবম-দশম শ্রেণীর হবু স্কুল শিক্ষকরা আশা করেছিলেন পুজোর আগেই স্কুলে যোগ দেবেন।

কিন্তু তা আর সম্ভব হচ্ছে না। শিক্ষাদফতর সূত্রের খবর, আপাতত বন্ধ রাখা হচ্ছে শিক্ষক নিয়োগ। এর ফলে অনিশ্চিত হয়ে পড়ল ৬০০০ সফল পরীক্ষার্থীদের ভবিষ্যৎ।

শিক্ষা দফতর সূত্রে জানা গিয়েছে, একাদশ শ্রেণীর শিক্ষকের পোস্ট নেই। নবম ও দশম শ্রেণীর পোস্টগুলি তাই একাদশ ও দ্বাদশ শ্রেণীতে পরিবর্তন করিয়ে বিভিন্ন স্কুলে শিক্ষক নিয়োগের ব্যবস্থা করেছিলেন স্কুল পরিদর্শকরা। এই পরিবর্তনকে কেন্দ্র করেই ঝামেলা, তার থেকে ছাত্র মৃত্যুর মতো ঘটনা। নবম-দশম শ্রেণীর শিক্ষক নিয়োগে এরকম কোনও ঝামেলা যাতে না হয় তাই এবার পিছু হটল সরকার।

২০১৬ র অক্টোবর মাসে WBCSSC 1ST SLST (নবম ও দশম শ্রেণী) পরীক্ষার বিজ্ঞপ্তি জারি হয়। পরীক্ষা হয় ২৭ নভেম্বর ২০১৬। পার্সোনালিটি টেস্ট হয় ২০১৭ র ডিসেম্বর মাসে। ফাইনাল রেজাল্ট বেরোয় ১২ মার্চ ২০১৮ তে। প্রথম কাউন্সেলিং হয় সেপ্টেম্বর ২০১৮। এরপর সফল পরীক্ষার্থীদের নিয়োগপত্র দেওয়ার কথা ছিল। কিন্তু আপাতত তা আর হচ্ছে না বলে শিক্ষাদফতর সূত্রের খবর।

প্রায় দুবছর আগে হয়েছিল স্কুল সার্ভিস কমিশনের ১১-১২ শিক্ষক নিয়োগের পরীক্ষা। তার পর কেটে গেছে অনেকটা সময়। ডব্লিউবিসিএসএসসির প্রথম SLST নিয়োগ সংক্রান্ত বিতর্কের তালিকাতে নতুন সংযোজন, নিয়োগপত্র হাতে পেলেও কাউন্সিলিংয়ে পাওয়া অনেক স্কুলেই নেই ১১-১২ এর শূন্যপদ, সুতরাং চাকরিতে যোগ দিতে পারছেন না নবনিযুক্ত শিক্ষকরা। এমনটাই অভিযোগ করছিলেন হবু শিক্ষকদের একাংশ। কারণ কাউন্সিলিংয়ে বেছে নেওয়া তাদের স্কুলে একাদশ ও দ্বাদশ শ্রেণীর শিক্ষকের পদই নেই। যা রয়েছে তা নরমাল সেকশন অর্থাৎ নবম ও দশম শ্রেণীর।

এখান থেকেই শুরু বিভ্রান্তির। এই বিভ্রান্তি দূর করতে দুবার দুরকম পদ্ধতি অবলম্বন করে এসএসসি শিক্ষক নিয়োগ দফতর। প্রথমে বলা হয় সমস্ত একাদশ-দ্বাদশ শ্রেণীর শিক্ষকরা অর্থাৎ WBCSSC 1ST SLST-র সফল পরীক্ষার্থী যারা ভুল স্কুল (অর্থাৎ যেখানে ৯-১০ শ্রেণীর শূন্যপদ রয়েছে, দাড়িভিট স্কুলের মতো) নির্বাচন করে ফেলেছেন তারা ওই স্কুলের প্রধান শিক্ষকের কাছে একটি রিফিউজাল লেটার লিখিয়ে নিয়ে সেই জেলার ডিআই অফিসে যাবেন এবং সেখানে প্রধান শিক্ষকের রিফিউজাল লেটার দেখিয়ে আরও একটি লেটার (ডিআই কর্তৃক দেওয়া) নিয়ে, WBCSSC -এর কেন্দ্রীয় অফিসে জমা করবেন এবং একটি কপি জমা করবেন বিকাশভবনে বিদ্যালয় শিক্ষা দফতরে। এবার WBCSSC কর্তৃপক্ষ তাদের জন্য নতুন স্কুল (যেখানে ১১-১২ শ্রেণীর শূন্যপদ রয়েছে) নির্বাচন করে দেবেন।

এই নির্দেশের কিছুদিন পর নতুন একটি নিয়ম এনে নবম ও দশম শ্রেণীর শূন্যপদগুলিকেই কনভার্ট করে একাদশ ও দ্বাদশ শ্রেণীতে পরিবর্তন করে দিয়ে শিক্ষকদের স্কুলে জয়েন করাতে থাকেন উত্তরদিনাজপুর সহ বিভিন্ন জেলার ডিআইরা। দাড়িভিটেও একই পন্থা অবলম্বন করলে ছাত্রদের বিরোধিতার মুখে পড়তে হয় ডিআইকে। এই ঘটনায় শেষপর্যন্ত রাজেশ সরকার এবং তাপস বর্মণের মৃত্যু হলে চাপে পড়ে রাজ্য সরকার। তাই এবার শিক্ষক নিয়োগ নিয়ে ধীরে চলো নীতি নিল মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের সরকার বলেই অভিমত বিশেষজ্ঞমহলের।

নবম-দশম শ্রেণীর হবু শিক্ষকদের কাউন্সিলিংয়ের পর অনেক হবু শিক্ষক অভিযোগ করেছেন তাদের নির্বাচন করা স্কুলে নেই শূন্যপদ। স্বাভাবিকভাবেই দাড়িভিটের ঘটনার পর আর কোন ঝুঁকি নিতে চাইছে না রাজ্য শিক্ষা দফতর। তাই সম্পূর্ণ পদ্ধতিটিকে নির্ভুল করার জন্য আপাতত স্থগিত নবম-দশম শ্রেণীর ৬০০০ শিক্ষক নিয়োগ।