তৃতীয় লিঙ্গের জন্য আলাদা ক্লিনিক বেসরকারি হাসপাতালে

চার বছর আগে দুর্ঘটনায় জখম এক রূপান্তরকামী দক্ষিণ কলকাতার একটি সরকারি হাসপাতালে ভর্তি হয়েছিলেন। পুরুষ না মহিলা— এই বিভ্রান্তির জেরে তাঁকে বার্ন ওয়ার্ডে কার্যত চিকিৎসাহীন অবস্থায় ফেলে রাখা হয়েছিল।

এমন ঘটনা আকছার ঘটে। কখনও রূপান্তরকামীরা হেনস্থার শিকার। কখনও হাসির খোরাক। এই মানুষগুলির চিকিৎসার জন্য এ বার কলকাতার দক্ষিণ উপকণ্ঠে ইস্টার্ন বাইপাসের ধারের এক হাসপাতালে আলাদা 'ট্রান্সজেন্ডার ক্লিনিক' গড়ে উঠছে। ওই ক্লিনিক যাঁরা তৈরি করছেন তাঁরা জানান, উত্তরবঙ্গের একটি সরকারি হাসপাতালে এক তৃতীয় লিঙ্গের মানুষ হাতে অস্ত্রোপচার করতে গিয়েছিলেন। অস্ত্রোপচার চলার সময়ে তিনি শুনছিলেন যে বহু হিজড়ে যৌনকর্মীর কাজ করেন, চিকিৎসকেরা  তা নিয়ে হাসাহাসি করছেন। 
ওই হাসপাতালের ক্লিনিক্যাল ডিরেক্টর ফর অ্যাকাডেমিক রিসার্চ অ্যান্ড মেডিক্যাল কোয়ালিটি শুভ্রজ্যোতি ভৌমিক বলছেন, ''আপাতত চাইছি, কালীপুজোর কয়েক দিনের মধ্যে সমকামী, রূপান্তরকামী, হিজড়ে, উভলিঙ্গ প্রমুখ তৃতীয় লিঙ্গভুক্তদের জন্য একটা বহির্বিভাগ বা আউটডোর চালু করতে।'' ক্লিনিক গঠনে সহায়ক স্বেচ্ছাসেবী সংস্থার কর্তা বাপ্পাদিত্য মুখোপাধ্যায় ও ট্রান্সজেন্ডার ডেভেলপমেন্ট বোর্ডের প্রাক্তন সদস্য তথা সমাজকর্মী রঞ্জিতা সিংহের সঙ্গেও হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ দ্রুত বৈঠকে বসবেন।

তাঁদের অভিজ্ঞতা, খাস কলকাতার একটি সরকারি হাসপাতালে স্তন গঠনের অস্ত্রোপচার করতে গিয়ে ভুল হরমোন চিকিৎসার শিকার হন এক রূপান্তরকামী। শরীরে পুঁজ জমে যায়। এক চিকিৎসক সেই পুঁজ বের করতে মোটা দর হেঁকেছিলেন বলে অভিযোগ।
বেসরকারি হাসপাতালটিতে ওই ক্লিনিক তৈরি করতে তৃতীয় লিঙ্গের অনেকেই সাহায্যের হাত বাড়িয়ে দিচ্ছেন। রঞ্জিতার কথায়, ''তৃতীয় লিঙ্গভুক্তদের স্বাস্থ্য বা চিকিৎসার মৌলিক অধিকার পাওয়াতেই খামতি আছে। এ কাজটা তো সরকারেরই করা উচিত ছিল।'' সমাজকর্মীরা জানান, বাস্তবে দেশ জুড়েই তৃতীয় লিঙ্গভুক্তদের জন্য চিকিৎসা ক্ষেত্রে ছবিটা নৈরাজ্যে ভরপুর। দেবজ্যোতি মণ্ডল নামে জনৈক সমাজকর্মীর অভিজ্ঞতা, ''হাসপাতালের আউটডোরে তৃতীয় লিঙ্গের মানুষ ছেলেদের না মেয়েদের লাইনে দাঁড়াবেন সেই ধন্দ থেকেই ভোগান্তির শুরু। লিঙ্গ রূপান্তর অস্ত্রোপচারের জন্য উপযুক্ত কাউন্সেলিংয়ের ব্যবস্থাই নেই সরকারি হাসপাতালে।''

পরিস্থিতির বদলাতে আপাতত রঞ্জিতাদের সাহায্যে ডাক্তার-স্বাস্থ্যকর্মীদের সঙ্গে কথা বলে তৃতীয় লিঙ্গের জন্য সংবেদনশীল পরিবেশ গড়তে উৎসুক সংশ্লিষ্ট হাসপাতালটির কর্তৃপক্ষ। বহির্বিভাগটি চালু করার পরে তৃতীয় লিঙ্গভুক্তদের ওয়ার্ড নিয়ে আলোচনা হবে বলে তাঁরা জানান।