'স্যানিটারি ন্যাপকিন নিয়ে বন্ধুর বাড়ি যান? তা হলে মন্দিরে কেন?'

যখন শতাব্দীপ্রাচীন সংস্কারগুলি বিজ্ঞান ও সচেতনতার প্রসারে একে একে বিদায় নিচ্ছে, তখন কেন্দ্রীয় বস্ত্রমন্ত্রী স্মৃতি ইরানিও শবরীমালা মন্দিরে ঢুকতে বাধা পাওয়া ঋতুমতী মহিলাদের পাশে বলিষ্ঠ ভাবে দাঁড়াতে পারলেন না। বললেন, "মন্দিরে গিয়ে প্রার্থনা করার অধিকার রয়েছে সকলেরই। কিন্তু কেউ সেই মন্দিরকে অপবিত্র, অপরিচ্ছন্ন করে তুলতে পারেন না।" আর সেই প্রসঙ্গে স্যানিটারি ন্যাপকিনেরও উল্লেখ করলেন।

এই একই অজুহাতে কেরলের শবরীমালায় আয়াপ্পা মন্দিরে শতাব্দীর পর শতাব্দী ধরে ঋতুস্রাবী মহিলাদের ঢুকতে বাধা দেওয়া হয়েছে। এমনকী, সুপ্রিম কোর্টের রায়ের পরেও গত এক সপ্তাহে আয়াপ্পা মন্দিরে ঢোকার পথে অন্তত ৯ জন মহিলাকে বাধা দিয়ে ফিরে আসতে বাধ্য করা হয়েছে। মন্দির কর্তৃপক্ষ বুঝিয়ে দিয়েছেন, সাধারণত, যে বয়সে (সুপ্রিম কোর্টের রায়ে ১০ থেকে ৫০ বছর) মহিলারা ঋতুস্রাবী থাকেন, সেই বয়সী মহিলাদের শীর্ষ আদালতের রায়ের পরেও তাঁরা মন্দিরে ঢুকতে দিতে রাজি নন।

মুম্বইয়ে 'ইয়ং থিঙ্কার্স কনফারেন্স' নামে একটি ইভেন্টে মঙ্গলবার ৪২ বছর বয়সী স্মৃতি বলেছেন, "আমি এক জন ক্যাবিনেট মন্ত্রী। তাই সুপ্রিম কোর্টের রায় নিয়ে আমি কিছু বলতে পারি না। আমি মনে করি, মন্দিরে গিয়ে প্রার্থনা করার অধিকার আমার অবশ্যই আছে। কিন্তু সেই মন্দিরকে আমি কিছুতেই অপবিত্র, অপরিচ্ছন্ন করে তুলতে পারি না। আর এটাই কোনও বিষয়কে বোঝা ও সম্মান দেওয়ার মধ্যে তফাত।"

এর পর স্মৃতি আরও স্পষ্ট ভাবে বলেন, "এটা একটা কমন সেন্স। ঋতুস্রাবের রক্তে ভেজা স্যানিটারি ন্যাপকিন নিয়ে কি আপনি যেতে পারেন আপনার বন্ধুর বাড়িতে? পারেন না। আর সেই কাজটাই কোনও মন্দিরে করা হলে সেটা কি মর্যাদাজনক হয়?"

অনুষ্ঠানে যাঁরা এ দিন হাজির ছিলেন, তাঁদের অনেকেরই বক্তব্য, কেন্দ্রীয় বস্ত্রমন্ত্রীর ওই মন্তব্যের শেষাংশটি একটি সংবাদপত্রের রিপোর্টের ভিত্তিতে। যেখানে জানানো হয়েছে, শবরীমালা মন্দিরে গত সপ্তাহে যে মহিলাদের বাধা দেওয়া হয়েছিল, তাঁদের এক জন স্যানিটারি ন্যাপকিন নিয়ে ঢোকার চেষ্টা করেছিলেন আয়াপ্পা গর্ভগৃহে। যদিও সেই মহিলা ওই অভিযোগ পুরোপুরি অস্বীকার করেছেন।

এ দিন তাঁর ব্যক্তিগত অভিজ্ঞতা শেয়ার করতে গিয়ে এমন একটি ঘটনার উল্লেখ করেছেন স্মৃতি, যার প্রেক্ষিতে অনেকেরই ধারণা হয়েছে, মন্দিরে প্রবেশের ক্ষেত্রে জাতপাতের বাছবিচারের বিষয়টিকেও খুব অস্বাভাবিক মনে করেন না কেন্দ্রীয় বস্ত্রমন্ত্রী।

স্মৃতির কথায়, "মুম্বইয়ের আন্ধেরির ফায়ার মন্দিরে আমি ঢুকতে পারিনি। তা আমি মন্ত্রী হই বা রাজনীতিক হই, মন্দিরের নিয়ম তো আমাকে মানতেই হবে। আমার সঙ্গে ছিল ছেলেমেয়েরা, ছিলেন আমার স্বামী। ওঁরা সকলেই পার্সি। তাই আমাকে মন্দিরের বাইরেই থাকতে হয়েছিল। সে ক্ষেত্রে গাড়ি থাকলে কেউ গাড়িতে বসে থাকতে পারেন। আর তা না থাকলে, তাঁকে মন্দিরের বাইরে রাস্তায় তো দাঁড়িয়েই থাকতে হবে।"