সবে ১২, আমতার সইফা এবার বসছে মাধ্যমিকে!


২৭ বছর পর আবার '‌অবাক মেয়ে'‌। মৌসুমির পর এবার সইফা। ২৭ বছর আগে মৌসুমি মাধ্যমিক দিয়েছিল মাত্র আট বছরে। আর সইফা আগামী বছরের মাধ্যমিকে বসতে চলেছে বারো বছর বয়সে। ওই সময় মৌসুমিকে নিয়ে হইচই পড়ে গিয়েছিল। সইফার ঘটনা আবার মনে করিয়ে দিল সেই '‌অবাক মেয়ে'‌ মৌসুমি চক্রবর্তীকে।

হাওড়ার আমতার কাষ্ঠসাঙ্গড়া গ্রামের মেয়ে সইফা খাতুন। সইফার জন্ম ২০০৬ সালের ২৫ সেপ্টেম্বর। কোনও দিন স্কুলে যায়নি সইফা। ২০১৮ সালের মাধ্যমিকে যাতে সে বসতে পারে তার আর্জি নিয়ে মধ্যশিক্ষা পর্ষদের সভাপতি কল্যাণময় গাঙ্গুলির কাছে এসেছিলেন সইফার বাবা শেখ মহম্মদ আইনুল। আইনুলবাবু পেশায় গ্রামীণ চিকিৎসক। আরও দুটি ভাই আছে। আইনুলবাবুর দাবি, তাঁর মেয়ে মুখস্থবিদ্যা নয়, বিরল প্রতিভার অধিকারী। মাধ্যমিকে '‌ফার্স্ট'‌ হবে। দিনে মাত্র দেড় থেকে দু'‌ঘণ্টা পড়ে সে। পড়াশোনায় '‌তুখোড়'‌ হওয়া সত্ত্বেও স্কুলে যায়নি কেন?‌  আইনুলবাবু বলেন, '‌যখন মেয়েকে প্রথম শ্রেণিতে ভর্তি করাতে নিয়ে যাই তখন উঁচু ক্লাসের সব বই পড়া শেষ। বয়স কম থাকায় পঞ্চম শ্রেণিতে স্কুল ভর্তি নেয়নি। নিচু ক্লাসে আর ভর্তি হতে চায়নি সইফা।  বাড়িতেই পড়তে চেয়েছিল, আপত্তি করিনি।'‌  কিন্তু যে মেয়ে কোনও দিন স্কুলের মুখই দেখল না, সে কীভাবে মাধ্যমিক দেবে?‌ নিয়মের গেরোয় এ বছর মাধ্যমিক দেওয়া হয়নি সইফার। কিন্তু মেয়ে যাতে মাধ্যমিক দিতে পারে তার জন্য বাবার চেষ্টার অন্ত ছিল না। তাই এ বছর জুন–জুলাই মাসে তিনি ফের পর্ষদের সঙ্গে যোগাযোগ করেন। কল্যাণময়বাবু তাঁকে বহিরাগত পরীক্ষার্থী হিসেবে মেয়েকে পরীক্ষা দেওয়ানোর পরামর্শ দেন। হাওড়ার শালকিয়া অ্যাংলো সংস্কৃত হাই স্কুল থেকে ফর্ম পূরণ করতে বলেন। এখানেও প্রথমে নিয়মের ফাঁদে আটকে যায় বিষয়টি। পর্ষদের নিয়ম মতো ২০০৪ সালের ১০ অক্টোবরের মধ্যে যাদের জন্ম তারাই ২০১৯ সালের মাধ্যমিকে বসতে পারবে। কিন্তু সইফার বয়স মাত্র ১২। আইনুলবাবু ফের যোগাযোগ করেন কল্যাণময়বাবুর সঙ্গে। মেয়েকে পরীক্ষায় বসানোর জন্য সইফার বাবার তীব্র আগ্রহ দেখে তিনি বিশেষ অনুমতি দেন। এ প্রসঙ্গে কল্যাণময়বাবু বলেন, '‌মেয়েটির বাবা বারবার যোগাযোগ করেছেন। উনি বলেছেন সইফা মাধ্যমিক পরীক্ষা দিতে প্রস্তুত। বাড়িতে পড়ে নিজেকে তৈরি করেছে। আমার মনে হয়েছে, কেউ যদি নিজেকে পরীক্ষায় বসার উপযুক্ত মনে করে তাহলে সে যাতে পরীক্ষা দিতে পারে তার ব্যবস্থা করাটা আমার কর্তব্য। কেউ পরীক্ষা দিতে চাইলে তাকে আমি বঞ্চিত করতে পারি না।'‌ প্রসঙ্গত, ১৯৯১ সালে মাত্র আট বছর বয়সে মাধ্যমিকে বসেছিল পুরুলিয়ার আদ্রার ঝাড়িয়ান্দা গ্রামের মৌসুমি চক্রবর্তী। তাকেও বিশেষ অনুমতি দিয়েছিল পর্ষদ।

বহিরাগত পরীক্ষার্থীদের জন্য ফি–‌বছর আগস্টে পর্ষদের পক্ষ থেকে টেস্ট পরীক্ষার ব্যবস্থা করা হয়। সইফা সেই পরীক্ষায় বসে। ১১ অক্টোবর যার ফল প্রকাশিত হয়েছে। বাংলায় ৪৮ শতাংশ, ইংরেজিতে ৪২ শতাংশ, গণিতে ৪০ শতাংশ, ভৌতবিজ্ঞানে ৫৮ শতাংশ, জীবনবিজ্ঞানে ৬৮ শতাংশ, ইতিহাসে ৫৬ শতাংশ এবং ভূগোলে ৬০ শতাংশ নম্বর পেয়েছে সইফা। সব মিলিয়ে ৫২ শতাংশের বেশি নম্বর পেয়েছে সে। আগামী বছর ১২ ফেব্রুয়ারি থেকে শুরু হচ্ছে মাধ্যমিক। পর্ষদের ইতিহাসে দ্বিতীয় '‌অবাক মেয়ে'‌ হিসেবে পরীক্ষা দিতে চলেছে সইফা।