আরও ৭ হাজার শিক্ষক নিয়োগ করার পথে রাজ্য


কলকাতা: উচ্চ প্রাথমিকে আরও প্রায় সাত হাজার বাড়তি পদ মঞ্জুর হতে চলেছে। বিকাশ ভবন সূত্রের খবর, ১০ অক্টোবর মন্ত্রিসভার পরবর্তী বৈঠকে তা পাশ হওয়ার সম্ভাবনা প্রবল। অর্থদপ্তরের সম্মতি পেয়ে শিক্ষা দপ্তর ইতিমধ্যেই সেই ফাইল চূড়ান্ত অনুমোদনের জন্য পাঠিয়ে দিয়েছে নবান্নে। জানা গিয়েছে, মূলত নতুন (নিউ সেটআপ) স্কুলগুলির জন্যই এই বাড়তি শিক্ষক পদ তৈরি করা হচ্ছে। প্রায় ৬৫০০ জন বাংলাভাষী শিক্ষক, ২০০ জন সাঁওতালি শিক্ষক এবং আরও কিছু অন্য ভাষাভাষীর শিক্ষক পদ সৃষ্টি করা হচ্ছে। এই স্তরে সরকার একলপ্তে এত শূন্যপদ সৃষ্টির উদ্যোগ আগে কখনও নেয়নি।

শিক্ষামহলের মতে, বাড়তি সাত হাজার শিক্ষক পদ মঞ্জুর মুখের কথা নয়। সাধারণভাবে সৃষ্টি হওয়া শূন্যপদের সঙ্গে এগুলি যোগ হবে। ফলে মোট শূন্যপদের সংখ্যা অনেকটাই বেড়ে যাবে। শিক্ষা দপ্তর সূত্রে জানা যাচ্ছে, এর আগে স্কুলস্তরে শেষবার বাড়তি পদ অনুমোদন হয়েছিল ২০১২ সালে। তখন উচ্চমাধ্যমিক স্তরে তিনটি করে পদ দেওয়া হয়। এরপর মুখ্যমন্ত্রীর নির্দেশে প্রায় ৫০০০ নিউ সেটআপ স্কুল তৈরি হয়েছে। কিন্তু সেগুলির জন্য বাড়তি শিক্ষক দেওয়া তো দূরের কথা, সাধারণ স্কুলগুলির জন্যই শিক্ষক নিয়োগ প্রক্রিয়া থমকে ছিল। এবার সেই পদগুলি পূরণ করতে চাইছে তারা। যে উচ্চ প্রাথমিক পরীক্ষার ফল প্রকাশিত হয়েছে, তার মধ্যে থেকেই ওই পদগুলি পূরণ করতে চাইছে সরকার। কারণ, এটাই প্রশিক্ষণবিহীন ছাত্রছাত্রীদের নিয়োগ করার শেষ সুযোগ। সেই সুযোগ সরকার হাতছাড়া করতে চায় না। এরপর প্রশিক্ষণহীন কোনও প্রার্থী শিক্ষকতার চাকরির পরীক্ষায় বসতে পারবেন না।

দীর্ঘদিন আগে ফলপ্রকাশ হলেও আইনি জটিলতা থাকায় উচ্চ প্রাথমিকে সরকার নিয়োগ প্রক্রিয়া শুরু করেনি। এবার তার সঙ্গে যুক্ত হচ্ছে বাড়তি পদ। উচ্চ প্রাথমিকের নিয়োগবিধিও এর অনুকূলে। ২০১৬ সালের নিয়োগবিধি অনুযায়ী, শুধুমাত্র উচ্চ প্রাথমিকে ইন্টারভিউ লিস্ট তৈরি পর্যন্ত যতগুলি পদ শূন্য থাকবে, সেগুলি গ্রাহ্য করা হবে। তবে উচ্চ প্রাথমিকের আগে মাধ্যমিকের নিয়োগ প্রক্রিয়া সেরে ফেলতে চাইছে সরকার। তার মধ্যে এই বাড়তি শূন্যপদ সৃষ্টির প্রক্রিয়াও শেষ হয়ে যাবে। ওয়াকিবহাল মহলের মতে, যে সব প্রার্থীরা উচ্চ প্রাথমিকের টেটে পাশ করে দীর্ঘদিন ধরে নিয়োগ না হওয়ায় হতাশ হয়ে পড়েছিলেন, তাঁদের পক্ষে সুখবর। 'সবুরে মেওয়া ফলে' প্রবাদটি তাঁদের জন্য ঠিক হতে চলেছে। কারণ মোট শূন্যপদের সংখ্যা বাড়লে তাঁদের ইন্টারভিউয়ে ডাক পাওয়া ও সর্বোপরি চাকরি পাওয়ার সম্ভাবনাও বেড়ে যাবে।

লোকসভা ভোটের আগে এটাকে তৃণমূল সরকারের মাস্টারস্ট্রোক হিসেবেই দেখছেন আধিকারিকরা। ভোটের আগে যত বেশি সম্ভব কর্মসংস্থানের লক্ষ্যে এগচ্ছে সরকার। সম্প্রতি, রাজ্যের কলেজগুলিতেও শিক্ষক পদ বাড়ানো হয়েছে। এটাকে তারই একটি অঙ্গ বলে মনে করছেন তাঁরা। তবে, সরকারের এই উদ্যোগকে সবাই পুরোপুরি সন্দেহের ঊর্ধ্বে রাখছে না। বিটিইএ-র সহ সাধারণ সম্পাদক স্বপন মণ্ডল বলেন, সরকার বাড়তি শূ্ন্যপদ সৃষ্টির উদ্যোগ নিলে সেটা অবশ্যই ইতিবাচক। কিন্তু উচ্চ মাধ্যমিক স্কুলগুলির জন্য এই উদ্যোগ বেশি প্রয়োজন ছিল। আর প্রশিক্ষণহীনদের চাকরি পাইয়ে দিতে সরকারের এই উদ্যোগ আখেরে কাদের স্বার্থ চরিতার্থ করবে, সেটা সময়ই বলবে।