কালীপুজোর চাঁদা ৪০ হাজার! দিতে না চাওয়ায় ১০ দোকানে তালা পড়ল দমদমে

 দোকানের তালা ঝালাই করে সিল করে দেওয়া হয়েছে বলে অভিযোগ।

কারও কাছে চাওয়া হয়েছে ৪০ হাজার টাকা। কারও কাছে বা ৩০ হাজার। ২০ হাজারও চাওয়া হয়েছে কারও কারও কাছে। কালীপুজোয় ওই পরিমাণ টাকা না দিলে দোকান বন্ধ করে দেওয়া হবে বলেও হুমকি দেওয়া হয়েছিল।
যে ব্যবসায়ীরা দাবি মতো চাঁদা দেননি, এ বার তাঁদের দোকান বন্ধ করে দিল দমদম ক্যান্টনমেন্টের নতুন বাজার এলাকার একটি পুজো কমিটি। দোকানের তালা ঝালাই করে সিল করে দেওয়া হয়েছে বলে অভিযোগ।

ঘটনার সূত্রপাত কয়েক দিন আগেই। স্থানীয় 'রবীন্দ্রনগর নতুন বাজার সোশ্যাল ওয়েলফেয়ার সোসাইটি'র তরফে ওই এলাকার সমস্ত ব্যবসায়ীর কাছে কালীপুজোর চাঁদা চাওয়া হয়। কিন্তু, টাকার অঙ্ক জানার পর অনেকেই তা দিতে অস্বীকার করেন। এর পরেই আসতে থাকে হুমকি। দাবি মতো চাঁদা না পেলে ব্যবসা করতে দেওয়া হবে না বলে ওই পুজো কমিটির কর্তারা হুমকি দেন বলে অভিযোগ।

কিন্তু, সপ্তাহ ঘুরতে না ঘুরতেই সেই হুমকি বাস্তব চেহারা নেবে তা ভাবতে পারেননি ব্যবসায়ীরা। শুক্রবার দোকান খুলতে গিয়ে তাঁদের অনেকেই দেখেন, শাটার বা দরজার তালা ঝালাই করে আটকে দেওয়া হয়েছে। কোনও তালায় চাবি ঢোকানোর জায়গা নেই। সব মিলিয়ে ১০টি দোকান ও ভাবে বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে। এর পর ওই ব্যবসায়ীরা দমদম থানায় লিখিত অভিযোগ দায়ের করেছেন।

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক নতুন বাজারের ফাস্ট ফুডের এক দোকানি বলেন, ''কালীপুজোর নামে তোলাবাজি করা হচ্ছে। গত বার আড়াই হাজার টাকা চাঁদা দিয়েছিলাম। কিন্তু এ বার আমার কাছে ৪০ হাজার টাকা চাওয়া হয়। ওই টাকা না দেওয়ায় আমাদের দোকানের তালা সিল করে দেওয়া হয়েছে। দোকান খুলতে পারছি না। সবাই মিলে আমরা থানায় অভিযোগ জানিয়েছি।''

ওই এলাকার এক চাল ব্যবসায়ীর বক্তব্য, ''পুজোর সময় চাল দেওয়া নিয়ে গত বছর আমার সঙ্গে কমিটির ঝামেলা হয়েছিল। তাই এ বছর আমার কাছে চাঁদা চাওয়া হয়নি। কিন্তু, আমার দোকানও সিল করে দেওয়া হয়েছে। কেন তা বুঝতে পারছি না। এতো রীতিমতো মগের মুলুক হয়ে উঠেছে।''

ঘটনার কথা চাউর হতেই এলাকায় ব্যাপক উত্তেজনা দেখা যায়। চাঁদার জুলুমের প্রতিবাদে স্থানীয় ব্যবসীয়া নতুন বাজার এলাকার রাস্তা অবরোধ করেন। ওই পুজো কমিটির বিরুদ্ধে দমদম থানায় একটি অভিযোগ দায়ের হয়। অভিযোগ পেয়ে ঘটনাস্থলে পৌঁছয় পুলিশ। পুলিশি হস্তক্ষেপে পরে অবরোধ তুলে নেন অবরোধকারীরা। তবে, এ বিষয়ে ওই পুজো কমিটির তরফে কোনও মন্তব্য করা হয়নি। স্থানীয় সূত্রে খবর, ওই পুজো কমিটি এ বছর থিম-পুজো করবে বলে ব্যবসায়ীদের কাছে অতিরিক্ত চাঁদা দাবি করে। পুলিশের তরফে জানানো হয়েছে, গোটা ঘটনাটি তারা খতিয়ে দেখছে। স্থানীয় কাউন্সিলর জগন্নাথ বিশ্বাস বলেন, "যে বা যারা এই কাজ করে থাকুক না কেন তারা কঠোর শাস্তি পাবেন।"
স্থানীয় ব্যবসায়ীদের অভিযোগ, ওই পুজো কমিটির তরফে তাঁদের কাছে চাঁদা চাইতে এসেছিলেন রামচন্দ্র দে, বিবেকানন্দ দে, দেবাশিস বিশ্বাস-সহ অনেকেই। দাবি মতো চাঁদা না দিলে দোকান বন্ধ করে দেওয়া হবে বলে তাঁরাই হুমকি দিয়েছিলেন। কিন্তু, এ দিন সকাল থেকে তাঁদের আর খুঁজে পাওয়া যাচ্ছে না বলে পুলিশ সূত্রে খবর।