সাফল্য প্রশংসনীয়, কিন্তু সন্তুষ্ট হওয়ার সময় আসেনি


একটা পদক্ষেপ সরকার করল, যা সরকারের প্রতি দেশবাসীর আস্থার পক্ষে ইতিবাচক। রাষ্ট্রায়ত্ত্ব ব্যাঙ্ক থেকে নেওয়া বিপুল অঙ্কের ঋণ অনাদায়ী রেখে দেশ ছেড়ে পালিয়েছেন নীরব মোদী। কিন্তু সরকার বোঝানোর চেষ্টা করল যে, বিদেশে পালিয়েও রেহাই মিলবে না। ভারত সরকারের দুর্নীতি দমন শাখা ইডি হানা দিল বিদেশেও। নীরব মোদীর বিপুল সম্পত্তি ইডি বাজেয়াপ্ত করল।

দেশে নীরব মোদীর যে সম্পত্তি রয়েছে বা ছিল, তা আগেই বাজেয়াপ্ত করা হয়েছে। খবর ছিল ব্রিটেন, আমেরিকা, হংকং-সহ বিভিন্ন দেশে নামে-বেনামে  সম্পত্তি রয়েছে পলাতক ব্যবসায়ীর। তাই এ বার বিদেশেও হানা দিল ইডি। বাজেয়াপ্ত হল বিপুল পরিমাণ স্থাবর ও অস্থাবর সম্পত্তি।

ভারত সরকারের দুর্নীতিদমন শাখার এ হেন অভিযান কিন্তু অভূতপূর্ব। ইডি-র তরফেই জানানো হচ্ছে যে, বিদেশে হানা দিয়ে সম্পত্তি উদ্ধারের এমন ঘটনা বেনজির।

পলাতক অভিযুক্তের পিছু ধাওয়া করে বিদেশে গিয়ে তাঁর সম্পত্তি বাজেয়াপ্ত করা নিঃসন্দেহে ইডি-র মুকুটে একটি নতুন পালক জুড়ল। ভারত সরকারের সক্ষমতা বা সক্রিয়তার আখ্যানও সম্ভবত আরও একটু গৌরবান্বিত হল। সরকারের এই পদক্ষেপের প্রশংসাই হওয়া উচিত। কিন্তু প্রশ্নও থাকছে কিছু।

প্রথম প্রশ্ন, দেশে ও বিদেশে নীরব মোদীর যে পরিমাণ সম্পত্তি বাজেয়াপ্ত হল বা হবে, তা দিয়ে কি নীরব মোদীর নেওয়া ব্যাঙ্ক ঋণ মিটিয়ে দেওয়া যাবে?

দ্বিতীয় প্রশ্ন, শুধু নীরব মোদীর সম্পত্তি বাজেয়াপ্ত করেই কি সন্তুষ্ট থাকতে হবে ভারত সরকারকে? নাকি নীরব মোদীর নাগাল পাওয়াও সম্ভব হবে?

শেষ পর্যন্ত তাঁকে কি বিচারের কাঠগড়ায় তোলা যাবে?

তৃতীয় প্রশ্ন, নীরব মোদী ছাড়াও যাঁরা পলাতক ঋণ অনাদায়ী রেখে, তাঁদের কী হবে? তাঁদের নাগাল পাওয়া কি সম্ভব হবে? নাকি এখনও পর্যন্ত যে ভাবে ভারত সরকারের নাগাল এড়িয়ে ঘুরে বেড়াচ্ছেন তাঁরা, সে ভাবেই কেটে যাবে বছরের পর বছর?

চতুর্থ প্রশ্ন, ব্যাঙ্ক থেকে বিপুল অঙ্কের ঋণ নিয়ে এ ভাবে আর কত জন দেশ ছেড়ে পালাতে সক্ষম হবেন? তালিকাটা আর কত লম্বা হবে?

আবার বলি, দেশের মতো বিদেশেও অভিযান চালিয়ে নীরব মোদীর বিরুদ্ধে যে সাফল্য ইডি পেয়েছে, তা প্রশংসনীয়। কিন্তু অপরাধীদের বিচারের কাঠগড়ায় আনতে এখনও অনেকটা পথ যেতে হবে। এই ধরনের অপরাধ রুখতে এখনও অনেক ফাঁকফোকর বন্ধ করতে হবে। তার আগে সন্তুষ্ট হওয়ার কোনও অবকাশ নেই।