দেশের চিকিৎসকদের নিদান আইএমএ’র প্রেসক্রিপশনে ওষুধের নাম লিখতে হবে বড় অক্ষরে


প্রেসক্রিপশনে ওষুধের নাম লিখতে হবে বড় অক্ষরে। দেশের চিকিৎসকদের সর্ববৃহৎ সংগঠন ইন্ডিয়ান মেডিক্যাল অ্যাসোসিয়েশন (আইএমএ) এই নিদান দিয়েছে। সম্প্রতি দিল্লিতে বসেছিল আইএমএ'র নীতি নির্ধারক সেন্ট্রাল ওয়ার্কিং কমিটির বৈঠক। সেখানেই এই সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে বলে আইএমএ-র অন্যতম শীর্ষ সূত্র জানিয়েছে। সিদ্ধান্ত হয়েছে, শুধু ওষুধ নয়, প্রেসক্রিপশনে সমস্ত রোগ ও রক্তপরীক্ষার নামও লিখতে হবে বড় হাতের অক্ষরে। প্রসঙ্গত, দেশের সবক'টি রাজ্য মিলিয়ে আইএমএ'র সদস্যসংখ্যা কয়েক লক্ষ। শুধু দেশ নয়, সদস্যসংখ্যার বিচারেও আইএমএ পৃথিবীরও অন্যতম বড় সংগঠনও বটে।

এ বিষয়ে রবিবার আইএমএ'র সর্বভারতীয় সভাপতির পদপ্রার্থী ও রাজ্য সম্পাদক ডাঃ শান্তনু সেন বলেন, রোগীদের অনেকেই চিকিৎসকদের প্রেসক্রিপশন ঠিকমতো পড়তে পারেন না বলে অভিযোগ করেন। আমরা ওয়ার্কিং কমিটির বৈঠকে তাই এই সিদ্ধান্ত নিয়েছি। তবে এটাও ঘটনা, ডাক্তাররা অসম্ভব চাপের মধ্যে কাজ করেন। বহু জায়গায় দু'-তিন ঘণ্টায় দু'শো-আড়াইশো রোগী দেখতে হয়। সেই সময় হাতের লেখা ঠিক রাখা মুশকিল। কলকাতা আইএমএ'র সভাপতি ডাঃ নির্মল মাজি বলেন, এর পাশপাশি সরকারি-বেসরকারি সর্বস্তরের চিকিৎসকদের আমরা ওষুধের জেনেরিক নাম প্রেসক্রিপশনে লিখতে ফের অনুরোধ করছি।

প্রসঙ্গত, বহু ডাক্তারবাবুর দুর্বোধ্য হাতের লেখার জন্য রোগীদের চূড়ান্ত নাকাল হতে হয়। রোগী বা বাড়ির লোকজন তো বোঝেনই না, এমনকী ওষুধের দোকানদাররা অনেকেই বিভ্রান্তিতে পড়েন। আবার এটাও ঘটনা, বিরল হলে বহু চিকিৎসকের প্রেসক্রিপশনে ছবির মতো হাতের লেখাও দেখে মুগ্ধ হতে হয়। কমবেশি রোগীদের এককথা হল, আমাদের ছবির মতো হাতের লেখার প্রেসক্রিপশন না হলেও চলবে। কিন্তু, হাতের লেখা গোটা গোটা স্পষ্ট হলে অনেকটা সমস্যা মেটে।

বিশিষ্ট ফার্মাকোলজিস্ট এবং আর জি কর-এর ফার্মাকোলজি'র সহযোগী অধ্যাপক ডাঃ অঞ্জন অধিকারী বলেন, চীনা ভাষায় প্রেসক্রিপশনের বাংলা অর্থ হল, রোগীর চিত্রনাট্য। শুধু তাই নয়, প্রেসক্রিপশন একটি মেডিকো-লিগ্যাল ডকুমেন্টও বটে। এর আইনি গুরুত্ব আছে। শুধু হাতের লেখাই নয়, এর প্রতিটি বিষয় গুরুত্বপূর্ণ।

আদর্শ প্রেসক্রিপশন কেমন হওয়া উচিত? ফার্মাকোলজিস্টরা জানাচ্ছেন, চিকিৎসার চারটি অংশ প্রেসক্রিপশনে থাকা উচিত। এক, অবজারভেশন বা রোগীকে নিরীক্ষণ। দুই, প্যালপেশন বা হাত দিয়ে টিপে টিপে দেখা। তিন, পারকাশন বা দু'টি হাতের প্রয়োগে রোগীর বিশেষ শারীরিক অবস্থা দেখা এবং চার, অসকালটেশন বা স্টেথো ব্যবহার করে দেখা। কে, কোথায় বসে (বাড়ি বা হাসপাতাল), কার জন্য, কবে প্রেসক্রিপশন করছেন— সবটাই গুরুত্বপূর্ণ। ডাক্তারবাবুর রেজিস্ট্রেশন নম্বর থাকতেই হবে প্রেসক্রিপশনে। এছাড়া অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ হল প্রেসক্রিপশনের বডি বা শরীর। কী ওষুধ দেওয়া হচ্ছে ট্যাবলেট বা ইঞ্জেকশন, কোন ডোজে দেওয়া হচ্ছে— সবটাই গুরুত্বপূর্ণ প্রতিটি প্রেসক্রিপশনে। তাই হাতের লেখা স্পষ্ট না হলে রোগীর নির্ভুল চিত্রনাট্য লেখাটাই ব্যর্থ হয়ে যাবে। ব্যর্থ হবে প্রেসক্রিপশনের উদ্দেশ্যই।