প্রাগৈতিহাসিক সভ্যতার খোঁজ মিলল মহারাষ্ট্রে!


এরকমই ৪০০টিরও বেশি ছবি 'আবিষ্কার' করেছে সুধীর রিসবুদ এবং মনোজ মরাঠের নেতৃত্বাধীন একটি প্রত্নতাত্ত্বিক দল।

কেউ এঁকেছিল তিমি, তো কেউ বিশাল-বপু হাতি। কচ্ছপ, গাছপালা, জ্যামিতিক আঁকিবুকিও বিস্তর। রং-তুলি নয়, সব ছবিই পাথর দিয়ে পাথর কুঁদে আঁকা। কিন্তু কবেকার? প্রত্নতাত্ত্বিকেরা বলছেন, এ সব অন্তত ১০ হাজার খ্রিস্টপূর্বাব্দের। আজ মানুষ যখন চাঁদে জমি কেনার তো়ড়জোড় করছে, ঠিক তখনই মহারাষ্ট্রে খোঁজ মিলল প্রাগৈতিহাসিক সভ্যতার। মানুষ তখনও চাষের চ-ও শেখেনি বলে অনুমান। তাদের পেট চলত শিকার করেই।

পশ্চিম মহারাষ্ট্রের কোঙ্কন এলাকার ৫২টি গ্রামে অনুসন্ধান চালিয়ে সম্প্রতি এমন ৪০০টিরও বেশি ছবি 'আবিষ্কার' করেছে সুধীর রিসবুদ এবং মনোজ মরাঠের নেতৃত্বাধীন একটি প্রত্নতাত্ত্বিক দল। এই ধরনের ছবিকে সাধারণত গুহাচিত্র বা পেট্রোগ্লিফস বলা হয়। কিন্তু এত দিন কেন এ সব নজরে আসেনি? রিসবুদ বললেন, ''পাঁচটি গ্রামে কিছু ছবি আমরা খুব সহজেই পেয়েছি। যে সবের কথা স্থানীয়েরা জানতেন। কেউ-কেউ পুজোও করতেন। কিন্তু যে সব ছবি মাটির তলায় চাপা পড়েছিল, সেগুলি খুঁজে পেতে আমাদের হাজার-হাজার কিলোমিটার শুধু হাঁটতে হয়েছে। স্থানীয়দেরও বলা হয়েছিল, নতুন কিছু দেখলেই ছবি পাঠাতে।'' আর এ ভাবেই প্রায় ৪৭টি গ্রাম থেকে  একেবারে 'আনকোরা ইতিহাস' উঠে এসেছে বলে দাবি অভিযানকারী দলের। এ বার বিশ্লেষণের পালা। রত্নগিরি এবং রাজাপুরা থেকে পাওয়া গুহাচিত্রগুলিকে সংরক্ষণ এবং যথাযথ নিরীক্ষণের কাজে ইতিমধ্যেই ২৪ কোটি টাকা বরাদ্দ করেছে মহারাষ্ট্র সরকার। রাজ্য প্রত্নতাত্ত্বিক বিভাগের প্রধান তেজস গার্গে বলেন, ''প্রাথমিক ভাবে মনে হচ্ছে তখনও মানুষ চাষাবাদ শেখেনি। তাই কৃষির সঙ্গে সম্পর্কিত কোনও কিছুরই ছবি মেলেনি। শিকারই তখন একমাত্র ভরসা ছিল জীবনধারণের। চোখের সামনে যে সব জীবজন্তু দেখেছে, মূলত সে সবের ছবিই এঁকেছে তারা।'' ছবিগুলি খুঁটিয়ে দেখে একই মত ব্যক্ত করেছেন পুণের ডেকান কলেজের ইতিহাসবিদ এবং গবেষক শ্রীকান্ত প্রধান।

তবু রহস্য আর প্রশ্ন কিছু থাকছেই। কয়েকটি গ্রামে মাটি খুঁড়ে পাথরের গায়ে জলহস্তি এবং বিশেষ প্রজাতির গন্ডারের গুহাচিত্র মিলেছে। যেগুলি ভারতে কখনও ছিল না বলেই মনে করা হয়। নাকি, ছিল? এ সব তারই প্রমাণ! প্রত্নতাত্ত্বিকদেরই একাংশ আবার বলছেন, ''এই প্রাগৈতিহাসিক মানুষেরা আফ্রিকা থেকে এখানে উঠে এসেছিল, এমনটাও কিন্তু হতে পারে।''