অলোক বর্মার বাড়ির সামনে ধৃতেরা আসলে ‘গুপ্তচর’!


টেনে হেঁচড়ে চার আইবি গোয়েন্দাকে অলোক বর্মার বাসভবনে নিয়ে যান নিরাপত্তারক্ষীরা।

বৃহস্পতিবার সিবিআই 'গৃহযুদ্ধ' মোড় নিল অন্য দিকে। দুই শীর্ষ কর্তার টানাপড়েনের জেরে ইতিমধ্যেই বেনজির প্রশাসনিক রদবদলের সিদ্ধান্ত নিয়েছে কেন্দ্র। বৃহস্পতিবার সেই টানাপড়েনে জড়িয়ে গেল ইন্টেলিজেন্স ব্যুরোর (আইবি) নাম।

সাতসকালে নাটকটা শুরু হয় ২ জনপথ রোডে। 'নির্বাসিত' প্রাক্তন সিবিআই প্রধান অলোক বর্মার বাড়ি এই রাস্তাতেই। সকাল ৭.৪৫ মিনিটে তাঁর বাড়ি থেকে বেরিয়ে আসতে দেখা যায় নিরাপত্তারক্ষীদের। সিসিটিভি'তে দেখা যায়, চার ব্যক্তিকে টানতে টানতে তাঁরা বাড়ির ভেতরে নিয়ে যাচ্ছেন। তাঁদের বিরুদ্ধে আনা হয় গুপ্তচরবৃত্তির অভিযোগ।এই চার জনকে আটকও করে দিল্লি পুলিশ।

যদিও নাটকের এখানেই শেষ নয়। পরে জানা যায়, এই চার জনই ইন্টেলিজেন্স ব্যুরোর গোয়েন্দা। অলোক বর্মার বাড়ির ওপর নজরদারি চালাতেই তাঁরা সেখানে গিয়েছিলেন। তাঁদের নাম ধীরজ কুমার, অজয় কুমার, প্রশান্ত কুমার এবং বিনীতকুমার গুপ্ত। সংস্থার কর্মীদের ২ জনপথে থাকার কথা চাপের মুখে স্বীকার করে নেয় ইন্টেলিজেন্স ব্যুরোও। বিবৃতিতে আইবি জানায়, ''সংবেদনশীল এলাকায় আমাদের বাহিনী নিয়মিত টহল দেয়। সকালে আমাদের একটি ইউনিটের নজরে ওই এলাকায় ভিড় চোখে পড়ে। কী জন্য তাঁরা জমায়েত হয়েছেন, তা বুঝতেই ওখানে নজর রাখছিলেন আমাদের চার কর্মী। এটা গুপ্তচরবৃত্তি নয়, কারণ তা করা হয় লুকিয়ে। এক্ষেত্রে তা করা হয়নি। গুপ্তচরবৃত্তি করলে তাঁরা পরিচয়পত্র নিয়ে ওখানে যেতেন না। ''।

আইবি-র তরফে এই সাফাই দেওয়া হলেও প্রত্যক্ষদর্শীদের বক্তব্য, এই চার ব্যক্তি গাড়ির ভেতর থেকেই অলোক বর্মার বাড়ির ওপর নজরদারি চালাচ্ছিলেন। রাত থেকেই দু'টি গাড়ি পার্ক করা ছিল ২ জনপথের কাছে। বাড়ির মূল প্রবেশপথের সামনে পার্ক করা ছিল একটি সেলেরিও গাড়ি। আর বাড়ির পেছনের গেটে রাখা ছিল একটি অল্টো গাড়ি। দু'টি গাড়ি থেকেই নজর রাখা হচ্ছিল অলোক বর্মার বাড়ির সমস্ত গতিবিধির ওপর। গাড়ি দু'টি রাত থেকে রাখা ছিল কিনা, সেই প্রশ্নের উত্তর অবশ্য এড়িয়ে গিয়েছে ইন্টেলিজেন্স ব্যুরো। যদিও প্রত্যক্ষদর্শী ও স্থানীয় মানুষের বক্তব্য, ওই এলাকায় কোনও ভিড় বা জমায়েত ছিল না। সামনে আসা ক্লোজ সার্কিট ফুটেজেও রাস্তা দিয়ে দু-এক জনকে হাঁটতে দেখা গিয়েছে।

সূত্রের খবর, চার আইবি কর্মীকে থানায় নিয়ে গিয়ে কিছুক্ষণ জিজ্ঞাসাবাদের পর ছেড়ে দেওয়া হয়েছে। যদিও অলোক বর্মার নিরাপত্তারক্ষী বা আটক চার আইবি কর্মী, কারও বিরুদ্ধে কোনও লিখিত অভিযোগ জমা পড়েনি দিল্লি পুলিশের কাছে।

বিষয়টি নিয়ে ইতিমধ্যেই আসরে নেমে পড়েছে বিরোধী রাজনৈতিক দলগুলি। কংগ্রেসের তরফে রণদীপ সুরজেওয়ালা কটাক্ষ করেছেন, ''সিবিআই-এর ওপর আইবি দিয়ে নজরদারি চালাচ্ছে কেন্দ্র।''বিরোধী দলনেতা মল্লিকার্জুন খাড়্গে-র বক্তব্য, 'সিবিআই অধিকর্তার মতো গুরুত্বপূর্ণ পদাধিকারীকে ছুটিতে পাঠানোর আগে বিরোধীদের সঙ্গে আলোচনার প্রয়োজনও মনে করেনি কেন্দ্র। যা সরকারের বেপরোয়া মনোভাবকেই সামনে আনছে।''