যৌন হেনস্থার পরে চলন্ত অটো থেকে ধাক্কা ছাত্রীকে


যৌন হেনস্থার পরে এক তরুণীকে চলন্ত অটো থেকে ধাক্কা মেরে ফেলে দেওয়ার অভিযোগ উঠল খাস কলকাতায়। সামনেই ট্র্যাফিক সিগন্যালের জন্য গাড়ির গতি কম থাকায় অল্পের জন্য রক্ষা পেয়েছেন ওই তরুণী। সোমবার সন্ধ্যায় ইএম বাইপাসের রুবি মোড়ে এই ঘটনায় গরফা থানায় লিখিত অভিযোগ দায়ের হয়েছে। ঘটনায় প্রশ্ন উঠেছে পুলিশের ভূমিকা নিয়েও।

মঙ্গলবার রাত পর্যন্ত অভিযুক্ত চালককে অবশ্য ধরতে পারেনি পুলিশ। রুবি মোড়ের সিসি ক্যামেরার ফুটেজ দেখে অভিযুক্তকে চিহ্নিত করার চেষ্টা চললেও রাস্তার যে অংশে ঘটনাটি ঘটেছে, সেখানে কোনও ক্যামেরা নেই বলে পুলিশ সূত্রের দাবি। অটোটি কোন রুটের, তা নিয়েও ধন্দে তদন্তকারীরা।

ইএম বাইপাসের একটি আবাসনের বাসিন্দা ওই তরুণী দ্বাদশ শ্রেণির ছাত্রী। সোমবার সন্ধ্যায় গড়িয়াহাটে গৃহশিক্ষকের কাছে পড়তে যাচ্ছিলেন তিনি। ঠিক ছিল, অটোয় রুবি মোড় পর্যন্ত গিয়ে ফের আর একটি অটোয় রাসবিহারী কানেক্টর ধরে গড়িয়াহাট যাওয়ার। তরুণী অভিযোগে জানিয়েছেন, আবাসনের সামনে দাঁড়িয়ে থাকাকালীন একটি ফাঁকা অটো এসে দাঁড়ায়। চালক রুবি মোড় যেতে রাজি হন। তিনি জানান, পিছনের আসন ভিজে থাকায় সামনে বসতে হবে। তরুণীর দাবি, ঘটনার সময়ে বৃষ্টি হচ্ছিল। ফোনের আলো জ্বেলে তিনি দেখেন, পিছনের আসন সত্যিই ভিজে। অগত্যা চালকের পাশেই বসেন তিনি।

তরুণীর আরও দাবি, অটোয় ওঠা মাত্রই চালক দ্রুত গাড়ি চালাতে শুরু করেন। তাঁর কথায়, ''ব্যাগটা সামনে নিতেও পারিনি। ঝড়ের গতিতে গাড়ি চলছিল। কিছু ক্ষণের মধ্যেই অসভ্যতা শুরু করেন চালক। অশালীন ভাবে গায়ে হাত দিচ্ছিলেন। বললাম, সরে বসুন। উল্টে তিনি বললেন, আপনি আমার কাছে সরে আসুন।'' তরুণী প্রতিবাদ করলেও চালক শোনেননি। এর পরে ওই ছাত্রী মোবাইল বার করতে গেলে অটোচালক তাঁর হাত চেপে ধরেন। তরুণী চিৎকার শুরু করলে মাঝপথেই ধাক্কা মেরে তাঁকে চলন্ত অটো থেকে ফেলে দেওয়া হয় বলে অভিযোগ।

তরুণী বলেন, ''ফোন বার করছি দেখে লোকটা আমার হাত চেপে ধরে। সাহায্যের জন্য চেঁচাচ্ছিলাম। বুঝিনি, ও ভাবে ধাক্কা মেরে ফেলে দেবে। পিছনে অনেক গাড়ি ছিল। সামনেই রুবি মোড়ের সিগন্যাল লাল থাকায় বেঁচে গিয়েছি। পিছনের গাড়িগুলির গতি বেশি ছিল না। কয়েক মিনিটের মধ্যেই এত কিছু হয়ে যাওয়ায় অটোর নম্বরও নিতে পারিনি। চালক অটো নিয়ে পালায়।''

ঘটনায় পুলিশের ভূমিকা নিয়েও প্রশ্ন উঠেছে। তরুণীর অভিযোগ, রাস্তায় পড়ে যাওয়ার পরে রুবি মোড়ে কর্তব্যরত এক ট্র্যাফিক পুলিশকর্মীকে বিষয়টি জানান তিনি। কিন্তু ব্যবস্থা নেওয়ার পরিবর্তে ওই পুলিশকর্মী বলেন, 'এ সব বাজে কথা শোনার সময় নেই আমার।' রাতেই অবশ্য পরিবারের সঙ্গে গিয়ে গরফা থানায় লিখিত অভিযোগ দায়ের করেন তরুণী।
এলাকাটি কসবা ট্র্যাফিক গার্ডের অন্তর্গত। গার্ডের দায়িত্বপ্রাপ্ত পুলিশ আধিকারিক জানান, বাইপাসের ওই নির্দিষ্ট রাস্তা দিয়ে বাঘা যতীন-রুবি রুটের অটো চলে। তবে অভিযুক্ত সম্ভবত কাটা রুটে অটো চালাচ্ছিলেন। ওই পুলিশ আধিকারিক বলেন, ''গরফা থানা আমাদের সঙ্গে কথা বলেছে। বাঘা যতীন-রুবি রুটের অটোচালকদের সঙ্গে আমরা কথা বলছি। অভিযুক্ত চালক ধরা পড়বে।'' বিষয়টি নিয়ে গরফা থানার দায়িত্বপ্রাপ্ত আধিকারিক বলেন, ''ইএম বাইপাসের ওই অংশে সিসি ক্যামেরা নেই। তবে রুবি মোড়ে আছে। চালক অবশ্য রুবি মোড়ের কিছুটা আগেই তরুণীকে ফেলে দেন বলে অভিযোগ পেয়েছি। তবু রুবি মোড়ের ফুটেজে কিছু পাওয়া যায় কি না, দেখা হচ্ছে।''

ফের এক অটোচালকের বিরুদ্ধে যাত্রীকে হেনস্থার অভিযোগ ওঠায় দক্ষিণ কলকাতার অটো ইউনিয়নগুলির দায়িত্বপ্রাপ্ত শুভাশিস চত্রবর্তী বলেন, ''এ জিনিস কোনও ভাবেই বরদাস্ত করা হবে না। প্রয়োজনে দক্ষিণ কলকাতার অটোচালকদের নিয়ে বসে আমরা কথা বলব। পুলিশ দ্রুত ব্যবস্থা নিক।'' ওই তরুণীর মা বলেন, ''অটোয় সামনে বসলে মেয়েকে বলি ব্যাগ সামনের দিকে করে বসতে। সেই সুযোগটাও পায়নি। ওই চালকের শাস্তি চাই।''