শাশুড়িকে তালাবন্ধ করে ভ্রমণে বউমা


আসানসোল: দরজায় পেল্লাই তালা ঝুলছে। পিছনের জানালা দিয়ে এক অস্ফুট স্বর ভেসে আসছিল। সেই স্বর শুনে প্রতিবেশীরা বাড়ির দিকে যেতেই দেখা গেল,  আনন্দময়ী ভট্টাচার্য নামে এক বৃদ্ধা কোনওক্রমে জানলা ধরে দাঁড়িয়ে রয়েছেন। প্রতিবেশীরা তাঁর কাছে পৌঁছাতেই বৃদ্ধা ক্ষীণ স্বরে জানান,  বউমা তাঁকে বাড়িতে তালাবন্ধ করে পুজোয় বেড়াতে চলে গিয়েছেন। খাবার শেষ হয়ে যাওয়ায় তিনদিন তিনি মুড়ি ও বিস্কুট খেয়ে কাটিয়েছেন। রবিবার থেকে জলও শেষ হয়ে গিয়েছে। এর পর পুলিশ ডেকে এলাকার লোকজন তালা ভেঙে তাঁকে বের করে আনতে সময় নেননি। শরীর দুর্বল হয়ে পড়ায় আনন্দময়ীদেবীকে আকলপুর স্বাস্থ্যকেন্দ্রে ভরতি করানো হয়। সোমবার এই ধরনের অমানবিক ঘটনার সাক্ষী রইল জামুড়িয়া।

অভিযোগ,  দুর্গাপুজোর ষষ্ঠীর দিনের আগে থেকে বৃদ্ধা শাশুড়িকে ঘরের মধ্যে আটকে রেখে বাইরে চলে যান পেশায় গৃহশিক্ষিকা বউমা অপর্ণা ভট্টাচার্য। আসানসোল পুরনিগমের ৭ নম্বর ওয়ার্ড জামুরিয়া ১১ নম্বর শিবমন্দির পাড়ায় ঘটে এই ঘটনা। প্রতিবেশীরা ভেবেছিলেন,  অপর্ণা তাঁর বৃদ্ধা শাশুড়িকে সঙ্গে নিয়ে গিয়েছেন। সোমবার হঠাৎ করেই ঘর থেকে আওয়াজ বেরোতে থাকলে আসল ঘটনা প্রকাশ পায়। আনন্দময়ী ভট্টাচার্যের স্বামী পেশায় দন্ত চিকিৎসক ছিলেন। তাঁর একমাত্র সন্তান রাজেশের সঙ্গে অপর্ণার বিয়ে হয়েছিল কয়েক বছর আগে। তাঁদের একটি মেয়ে আছে। সে বাইরে পড়াশুনা করে। বছর দু'য়েক আগে ক্যানসারে আক্রান্ত হয়ে রাজেশ ভট্টাচার্য মারা যান। এরপর থেকেই শাশুড়ি-বউমা একইসঙ্গে ওই বাড়িতে থাকতেন। ছোটখাটো সাংসারিক ঝামেলা অশান্তি নাকি প্রায়ই হয়। কিন্তু এইভাবে অভুক্ত অবস্থায় শাশুড়িকে ঘরে তালা বন্ধ করে অন্যত্র চলে যাবেন বউমা,  তা কখনও কল্পনাও করতে পারেননি প্রতিবেশীরা। পুলিশ সূত্রের খবর, সত্তরোর্ধ্ব বৃদ্ধা কমপক্ষে দশ দিন ধরে অভুক্ত অবস্থায় রয়েছেন। তাঁকে হাসপাতালে রেখে চিকিৎসা করানোর ব্যবস্থা করা হবে এবং দোষীর বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে। এমনটাই জানিয়েছে জামুড়িয়া থানার পুলিশ। তবে এই ঘটনায় কোনও অভিযোগ দায়ের হয়নি।

এ সম্পর্কে অবশ্য বিন্দুমাত্র অনুতপ্ত নন অপর্ণা ভট্টাচার্য। পুলিশ ও প্রতিবেশীদের কাছে খবর পেয়ে এদিন তিনি স্বাস্থ্যকেন্দ্রে পৌঁছান। অপর্ণাদেবী বলেন,  "আমি মনে করি না, আমার কোনও দোষ আছে। সারা বছর ধরে শাশুড়িকে আগলে রাখি। বাইরে যাওয়ার থাকলে উনি যেতে চান না। আবার রাতে তালাও ঠিকঠাক দিতে পারেন না। তাই শাশুড়ির পরামর্শেই বাইরে থেকে তালা দেওয়া হয়েছিল।"  তাঁর দাবি,  সমস্ত খাবার ও জলের ব্যবস্থা করে গিয়েছিলেন। এর আগেও দু-তিনদিন তিনি এইভাবেই বাইরে গিয়েছেন। অপর্ণাদেবীর অভিযোগ,  যে প্রতিবেশীরা আজ শাশুড়ির পাশে,  তাঁরা কিন্তু সারা বছর থাকেন না। গত মে মাসে শাশুড়ি অসুস্থ হওয়ায় তিনিই জেলা হাসপাতালে ভরতি হয়েছিলেন। তখন কাউকেই পাওয়া যায়নি।