হোয়াটস্ অ্যাপ কলে ২০ কোটির তোলাবাজি


"বিশ ক্রোর।" অচেনা কণ্ঠে হোয়াটস্ অ্যাপ কল পেয়ে চমকে উঠেছিলেন ই ওয়ালেট সংস্থার কর্ণধার বিজয়শেখর শর্মা। ততক্ষণে ওই অচেনা ব্যক্তিটি ফোনের ওপার থেকে বলেই চলেছে, "টাকা না দিলে ই ওয়ালেটের গোপন তথ্য ফাঁস করে দেব।"

কলকাতায় বসে নয়ডার শিল্পপতিকে হোয়াটস্ অ্যাপের মাধ্যমে একের পর এক ফোন করে তোলাবাজির চেষ্টা। 'তোলাবাজ' কলকাতারই এক ব্যবসায়ী। তার তিন সঙ্গীকে ইতিমধ্যেই গ্রেপ্তার করেছে নয়ডার পুলিশ। কিন্তু কলকাতায় বসে যে ব্যক্তিটি তোলাবাজি করেছিল, মেলেনি তার সন্ধান। এবার রোহিত চোমাল নামে ওই ব্যবসায়ীর সন্ধানে কলকাতায় আসছে নয়ডার সেক্টর টোয়েন্টি থানার পুলিশ। পুলিশ সূত্রে জানা গিয়েছে, ওই ব্যক্তির খোঁজ করতে লালবাজারের সাহায্যও চেয়েছেন নয়ডা পুলিশের আধিকারিকরা। যদিও কলকাতা বা তার আশপাশে কোথাও তোলাবাজির অভিযুক্ত ওই ব্যবসায়ী গা ঢাকা দিয়েছেন কি না, তা নিয়ে পুলিশ সন্দিহান। প্রাথমিকভাবে পুলিশ জানতে পেরেছে, কলকাতার একটি লোহার আকরিক সংস্থার কর্ণধার অভিযুক্ত রোহিত চোমাল। তবে কলকাতায় তাঁর সন্ধান যদি না-ও মেলে, তবে তাঁর বাড়ি ও অফিসে পুলিশ তল্লাশি চালাতে পারে। এদিকে, এই হোয়াটস্ অ্যাপ কলের মাধ্যমে তোলাবাজি বিষয়টি অনেকটা নতুন বলে জানিয়েছেন লালবাজারের গোয়েন্দারাও। বিষয়টি নিয়ে তাঁরাও ভাবনা চিন্তা শুরু করেছেন। কারণ, মোবাইলে তোলাবাজি করা হলে অপরাধীকে ধরা সহজ হয়। কিন্তু হোয়াটস্ অ্যাপ কলে অপরাধীর সন্ধান পাওয়া সহজ হয় না। কলের টাওয়ার ধরেও তদন্ত করা যায় না।

গত সেপ্টেম্বরে ওই নামী ই ওয়ালেট সংস্থার কর্ণধার বিজয়শেখর শর্মার অফিসে ২০ কোটি টাকা তোলা চেয়ে ফোন করেছিলেন রোহিত। পরে তাঁর কাছ থেকেই ওই শিল্পপতি জানতে পারেন যে, তাঁরই সংস্থার এক কর্তা তথা অফিসেরই কর্মী সোনিয়া ধাওয়ান, সোনিয়ার স্বামী তথা প্রোমোটার রূপক জৈন ও সংস্থার অন্য এক কর্মী দেবেন্দ্র কুমার এই ঘটনার সঙ্গে যুক্ত। পুরো ঘটনাটির মাস্টারমাইন্ড সোনিয়া। শিল্পপতির অভিযোগের ভিত্তিতে তদন্ত করে নয়ডা পুলিশ জানতে পারে, হোয়াটস্ অ্যাপে ফোন এসেছিল কলকাতা থেকে। তদন্ত করে তোলাবাজি, প্রতারণার অভিযোগে ইতিমধে্যই সোনিয়া, রূপক ও দেবেন্দ্রকে নয়ডা পুলিশ গ্রেফতার করেছে। এবার পুলিশের নজর চতুর্থ অভিযুক্ত রোহিত চোমালের দিকে।

পুলিশ জানিয়েছে, নয়ডার বাসিন্দা ও এই তোলাবাজির অভিযোগে ধৃত দেবেন্দ্র কুমারের পরিচিত কলকাতার ব্যবসায়ী রোহিত। রোহিতকে মোটা টাকার টোপ দেন দেবেন্দ্র। রোহিত ফোন করতে রাজি হন শিল্পপতিকে। প্রথম ফোনটি রোহিত করেন গত ২০ সেপ্টেম্বর সকাল ১১টা নাগাদ। শিল্পপতির ভাইকেও একই দিনে বিকেল চারটে নাগাদ ফোন করেন ওই ব্যক্তি। তিনি দাবি করেন, ওই ই ওয়ালেট সংস্থার ডেটা বা তথ্য হ্যাক করা হচ্ছে। ২০ কোটি টাকা না দিলে পুরো তথ্য বাইরে ফাঁস করে দেওয়া হবে। তাতে ওই ই ওয়ালেট সংস্থার ব্যাপক ক্ষতি হবে। এই ফোন বারবার আসতে শুরু করে। তার উপর ই ওয়ালেট সংস্থার ভাইস প্রেসিডেন্ট সোনিয়া ধাওয়ান শিল্পপতিকে বলেন, কী ধরনের তথ্য 'হ্যাকার'দের হাতে রয়েছে, তা কেউ জানে না। তাই টাকা দিয়ে দেওয়াই ভাল। গত ১৫ অক্টোবর অনেকটা বাধ্য হয়েই দু'দফায় একটি বিশেষ ব্যাংক অ্যাকাউন্টে ২ লাখ ৬৭ টাকা জমা দেওয়া হয়। রোহিত তখন আরও দশ কোটি টাকা তৈরি রাখতে বলেন। তখন শিল্পপতি তাঁকে জিজ্ঞাসা করেন, কী ধরনের তথ্য অভিযুক্তদের হাতে এসেছে। বেশ কয়েকবার জিজ্ঞাসা করার পর বাকি তিনজনের নাম বলেন রোহিত। একাধিক জায়গায় রোহিতের সন্ধানে তল্লাশি চালানো হবে বলে জানিয়েছে পুলিশ।