চার কিমি যেতে ২৪০ টাকা, পুজোর সুযোগে ফায়দা তুলল অ্যাপ ক্যাব


পুজোর কলকাতায় অ্যাপ-ক্যাবের ভাড়া কার্যত আগুন।

সপ্তমী, অষ্টমী এবং নবমী —এই তিন দিন সকালের কয়েক ঘণ্টা বাদ দিলে সারা দিনই অ্যাপ-ক্যাবের ভাড়া চড়া থেকেছে। বিকেলের পর থেকে সন্ধ্যা যত গড়িয়েছে ভাড়াও তত বেড়েছে। রাস্তায় দাঁড়িয়ে গাড়ির জন্য অপেক্ষাও করতে হয়েছে অনেকটাই বেশি। অধিকাংশ যাত্রীর অভিযোগ, রাতের দিকে ভাড়া গুনতে হয়েছে অস্বাভাবিক বেশি।

মঙ্গলবার সকাল ১১টা নাগাদ বাগুইআটি থেকে বেলগাছিয়া মিল্ক কলোনি যাওয়ার জন্য অ্যাপ-ক্যাব ভাড়া করেন সুদীপ্ত সরকার। যে দূরত্বের জন্য অনান্য দিন তাঁকে দিতে হয় ১২০-১৩০ টাকা, সেখানেই মাত্র ৪ কিলোমিটার পথের জন্য তাঁকে এ দিন গুনতে হয়েছে ২৪০ টাকা।

একই ভাবে বুধবার সাড়ে ১২টা নাগাদ গড়িয়া থেকে ভবানীপুর আসার জন্য অ্যাপ-ক্যাব বুক করেন রীতেন ধর। ওই দূরত্বের জন্য তাঁকে ভাড়া দিতে হয়েছে ৩৩৭ টাকা। বুধবার বিকেল ৪টে নাগাদ কসবা থেকে কালীঘাট আসার জন্য অ্যাপ-ক্যাব ভাড়া করেন সুতপা রায়। তাঁকে ওই দূরত্বের জন্য এ দিন ২৩০ টাকা ভাড়া গুনতে হয়েছে। বছরের অনান্য সময়ে বড়জোর ১১০ টাকা দিতে হয় তাঁকে।

টালিগঞ্জের হরিদেবপুর থেকে বেহালার পর্ণশ্রী যাওয়ার জন্য বৃহস্পতিবার বিকেলে কলেজ পড়ুয়া পৌলমী সাহাকে গুনতে হয়েছে ৩২০ টাকা। একই ভাবে এ দিন টালিগঞ্জ থেকে সল্টলেক সিটি সেন্টার বা ৫ নম্বর সেক্টরে যাওয়ার জন্য গড়ে ৪০০-৪৫০ টাকা ভাড়া দিতে হয়েছে যাত্রীদের। সন্ধ্যায় ধর্মতলা থেকে নিউ টাউন যেতে ভাড়া উঠেছে ৭৫০ টাকা।

রাতের দিকে পরিস্থিতি আরও ভয়াবহ হয়েছে বলে অভিযোগ যাত্রীদের। মণ্ডপ ঘুরে বা রেস্তরাঁ থেকে বাড়িমুখো জনতাকে চড়া ভাড়া গুনে দিতে হয়েছে অ্যাপ-ক্যাব সংস্থাকে। কিন্তু পুজোয় বাড়তি চাহিদা মেটাতে রাস্তায় বেশি সংখ্যায় অ্যাপ-ক্যাব থাকাটাই তো প্রত্যাশিত! তা হলে এই পরিস্থিতি তৈরি হচ্ছে কেন?
ক্যাব সংস্থাগুলির দাবি, পুজোর সময়ে শহরের বেশির ভাগ রাস্তাই 'নো-এন্ট্রি' থাকছে। ফলে অন্য রাস্তায় যানজট বাড়ছে। যাত্রীদের কাছে পৌঁছতে বা তাঁদের তুলে গন্তব্যে পৌঁছে দিতে প্রায়ই অনেকটা রাস্তা ঘুরে আসতে হচ্ছে। আর তার প্রভাব পড়ছে ভাড়ার অঙ্কে। পাশাপাশি, রাস্তায় গাড়ির যা চাহিদা থাকছে সেই অনুপাতে অনলাইন প্ল্যাটফর্মে গাড়ির সংখ্যা কম থাকছে বলেও অভিযোগ। 

যদিও ক্যাব সংস্থাগুলির দাবি, পুজোর সময়ে যাত্রীদের কথা মাথায় রেখে চালকেরা যাতে রাস্তায় থাকেন সে জন্য তাঁদের তরফেও বিভিন্ন উৎসাহভাতা থাকে। কিন্তু গাড়ির চাহিদা এত বেশি থাকছে যে চাহিদা এবং জোগানের মধ্যে ফাঁক থেকেই যাচ্ছে।

পুজোর সময়ে হলুদ ট্যাক্সিও ভাড়া আদায়ে পিছিয়ে থাকেনি বলে অভিযোগ। হাওড়া-শিয়ালদহ, পার্ক স্ট্রিট, ভবানীপুর, খিদিরপুর, গড়িয়াহাটের মধ্যে চলাচল সীমাবদ্ধ রাখা ট্যাক্সিও ঝোপ বুঝে কোপ মেরেছে বলে অভিযোগ যাত্রীদের।

রাত পর্যন্ত মেট্রো চললেও যাঁরা একটু দূরে গিয়েছেন, তাঁদের অনেককেই অ্যাপ-ক্যাব বা ট্যাক্সির উপরে নির্ভর করতে হয়েছে। অটো চললেও যানজট এড়াতে বিভিন্ন সময়ে রুট নিয়ন্ত্রিণ করা হয়েছে। ফলে যাত্রীদের সুরাহা হয়নি।

তবে পরিস্থিতি কিছুটা বদলায় দশমীতে। অন্য দিনের চেয়ে ভাড়া কোনও কোনও ক্ষেত্রে বেশি থাকলেও তা অস্বাভাবিক বেশি ছিল না বলে জানাচ্ছেন যাত্রীরা।