তোমার ছোট ছেলেকে মেরে দিলাম, মাকে বলে গেল দাদা!


রাতে ঘরের দরজায় বড় ছেলের ধাক্কাধাক্কি শুনে ধড়মড়িয়ে উঠে বসেন মা। দরজা খুলতেই ছেলে বলে, ''তোমার ছোট ছেলেকে মেরে দিলাম।'' 

ঘুম-চোখে কিছু বুঝে ওঠার আগেই বাড়ি থেকে বেরিয়ে যায় বড় ছেলে। মা ইতু বাগচি ছোট ছেলের ঘরে গিয়ে দেখেন, রক্তাক্ত অবস্থায় খাটে পড়ে আছে সে। মাথা-মুখ-কান দিয়ে রক্ত বের হচ্ছে। বনগাঁ মহকুমা হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হলে কিছুক্ষণের মধ্যেই মারা যান তারণ বাগচি নামে ওই যুবক। সোমবার পুরাতন বনগাঁ  সাতভাই কালীতলা এলাকার ঘটনা। খুনের মামলা রুজু করে ঘটনার তদন্ত শুরু করেছে পুলিশ। পরে আটক করা হয়েছে তাঁর দাদা বেঞ্জামিনকে। 

ইতুর দাবি, ''বড় ছেলেই খুন করেছে তারণকে। ওর শাস্তি চাই।  পুলিশকে সব জানাব।'' কিন্তু কেন খুন, তা পরিস্কার নয় মায়ের কাছেও। তাঁর বক্তব্য, ''ভাইয়ের সঙ্গে ওর কোনও ঝামেলা হয়নি। তবে বড় ছেলেটা নেশা করে।  নেশার টাকা না দিলে বাড়িতে অশান্তি করে।'' পরিবারের দাবি, ডাইনিং টেবিলের ভাঙা কাঠের পায়া দিয়ে মাথায় ঘা মেরে খুন করা হয়েছে তারণকে। বেঞ্জামিন কয়েক বছর আগে মাকেও ধারাল অস্ত্র পেটে ঢুকিয়ে দিয়েছিল। দীর্ঘ দিন চিকিৎসার পরে সুস্থ হন তিনি।

পরিবার ও স্থানীয় সূত্রে জানা গিয়েছে, ইতুর দুই ছেলে, এক মেয়ে। তারণ বনগাঁ দীনবন্ধু মহাবিদ্যালয়ে প্রথম বর্ষের ছাত্র। বাবা লিটু ভিনরাজ্যে কাজ করেন। বেঞ্জামিন আগে বাবার সঙ্গে কাজ করত। সেখানেই হেরোইনের নেশা ধরে। বাড়িতে ফিরে শুরু হয় তার তাণ্ডব। প্রতিবেশীরা জানিয়েছেন, হেরোইন, মদ, গাঁজা কিছুই নেশা ঠিত না ছেলেটি। নেশামুক্তি কেন্দ্রে রেখে কিছু দিন চিকিৎসা হয়েছিল ঠিকই। কিন্তু পুজোর আগে বাড়ি ফিরে ফের নেশা শুরু করে।

তারণ সেনাবাহিনীতে চাকরির প্রস্তুতি নিচ্ছিলেন। ১২ নভেম্বর ছিল পরীক্ষা। সে জন্য রাত জেগে পড়তেন। সকালে মাঠে দৌড়োতেন।   ইতু বলেন, ''সোমবার রাত ২টো পর্যন্ত জেগে পড়াশোনা করছিল ছেলে। আমি গিয়ে ওকে ঘুম পাড়িয়ে নিজে শুতে যাই। তারপরেই ওকে খুন করল বেঞ্জামিন।''

মায়ের আফসোস, ''যদি কিছু অন্তত আন্দাজ করতে পারতাম, ছোট ছেলেকে নিজের কাছ-ছাড়া করতাম না।''