স্ট্রিপ থেকে ওষুধ কেটে বেচতে রাজি না হলে কড়া ব্যবস্থা : হুঁশিয়ারি ড্রাগ কন্ট্রোলারের


কলকাতা: কিনতে গিয়েছেন ছ'টা ওষুধ। দোকানদার বললেন, ছ'টা দেওয়া যাবে না। ১০টার স্ট্রিপ নিতে হলে নিন। টালা থেকে টালিগঞ্জ, জঙ্গলমহল থেকে দার্জিলিং—এই প্রবণতা সর্বত্রই। ফলে মানুষের হয়রানির শেষ নেই। শুধু তাই নয়, নিত্যদিন দোকানে অশান্তি, মাথা গরমও চলতে থাকে। সাধারণ মানুষের এ ধরনের ভোগান্তি কমাতে সম্প্রতি এক নির্দেশনামা জারি করেছেন রাজ্য ড্রাগ কন্ট্রোলের কার্যনিবাহী অধিকর্তা স্বপন মণ্ডল। সেখানে রাজ্যের সমস্ত ওষুধের দোকানদারকে হুঁশিয়ারি দিয়ে বলা হয়েছে, স্ট্রিপ থেকে ওষুধ কেটে বিক্রি করা যাবে। কাউকে 'না' বলা যাবে না। এও বলা যাবে না যে, গোটা স্ট্রিপটাই কিনতে হবে, নাহলে ওষুধ দেওয়া হবে না। এমন ঘটনা ঘটলে ওষুধের দোকানদারদের বিরুদ্ধে কড়া ব্যবস্থা নেওয়া হবে। নির্দেশনামায় স্বপনবাবু জানিয়েছেন, এই ধরনের অভিযোগ এলে এরপর থেকে আইন অনুযায়ী সংশ্লিষ্ট দোকানদারের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
এই নির্দেশে বলা হয়েছে, প্রায়শই ক্রেতারা অভিযোগ করেন, বহু খুচরো দোকানদার প্রেসক্রিপশন অনুযায়ী যে ক'টা ওষুধ দরকার, তা ওষুধের স্ট্রিপ থেকে কেটে দিতে অস্বীকার করেন। ফলে দরকার না থাকলেও বা প্রেসক্রিপশনে উল্লেখ না থাকলেও অতিরিক্ত ওষুধ কিনতে বাধ্য হচ্ছেন ক্রেতারা। এই প্রবণতাকে কোনওভাবেই সমর্থন করা যায় না।
ড্রাগ কন্ট্রোলার ওই নির্দেশে জানিয়েছেন, দোকানদারদের এমনও হয়তো মনে হতে পারে যে, স্ট্রিপ থেকে কাটা অংশ বাদ দিলে বাকি ওষুধ বিক্রি করা যাবে না। কারণ, তাতে ওষুধের নাম, ব্যাচ নম্বর, ম্যানুফ্যাকচারিং ও এক্সপায়ারি ডেট নাও লেখা থাকতে পারে (অর্থাৎ কাটা ওষুধের সঙ্গে বেরিয়ে যেতে পারে)। সেক্ষেত্রে দোকানদাররা যদি ওষুধের স্ট্রিপের বাকি অংশটি ওই ওষুধেরই বাকি স্টকের সঙ্গে রাখেন বা আলাদাভাবে কোনও বাক্স বা খাপে রাখেন, তাহলে ড্রাগ কন্ট্রোলের কোনও সমস্যা নেই। তবে সেই বাক্স বা প্যাকেটে সেই ওষুধের নাম, ব্যাচ নম্বর, ম্যানুফ্যাকচারিং ও এক্সপায়ারি ডেট লিখে রাখতে হবে। তবে এ কারণে ওষুধের স্টকে গরমিল হলে দোকানদারদের কিন্তু রেয়াত করা হবে না।

ড্রাগ কন্ট্রোলার আরও জানিয়েছেন, নিজেদের সুবিধার্থে কাটা ওষুধের বাকি স্ট্রিপ বিক্রির সময় দোকানদার ক্যাশ মেমোতে ওষুধের নাম, ব্যাচ নম্বর, ম্যানুফ্যাকচারিং ও এক্সপায়ারি ডেট লিখে রাখতে পারেন। ক্রেতা চাইলে ওষুধের কাটা অংশ বাদে বাকি স্ট্রিপের গায়েও এইসব তথ্য লিখে দিতে পারেন।

শুক্রবার এ বিষয়ে রাজ্যের ওষুধের দোকানদারদের সর্ববৃহৎ সংগঠন বেঙ্গল কেমিস্ট অ্যান্ড ড্রাগিস্ট অ্যাসোসিয়েশন (বিসিডিএ)-এর সভাপতি শঙ্খ রায়চৌধুরী বলেন, আমরা কাটা ওষুধ বিক্রি করি। এখন নয়, অনেকদিন ধরেই তা বিক্রি হয়। শহরাঞ্চলের ক্রেতাদের আর্থিক সক্ষমতা বেশি থাকায় সেখানে কাটা ওষুধ কেনার প্রবণতা কম। এই প্রবণতা গ্রামের দিকে কিছুটা বেশি। তবে আমরা সেখানে কাটা ওষুধ বিক্রি করে থাকি। যদিও এর জন্য সমস্যায় পড়তে হয় আমাদেরই। তাঁর দাবি, এক, কাটা ওষুধ বাদে বাকি স্ট্রিপে ওষুধের নাম, ব্যাচ নম্বর, ম্যানুফ্যাকচারিং ও এক্সপায়ারি ডেট না থাকায় ক্রেতাদের অনেকে কিনতে চান না। কোম্পানিগুলিও ফেরত নিতে চায় না। দুই, এ জন্য ড্রাগ কন্ট্রোলারের উচিত কোম্পানিগুলিকে স্ট্রিপের প্রতিটি ওষুধের গায়ে সেই ওষুধের নাম, ব্যাচ নম্বর, ম্যানুফ্যাকচারিং ও এক্সপায়ারি ডেট লেখা বাধ্যতামূলক করা। অল ইন্ডিয়া কেমিস্ট অ্যান্ড ডিস্ট্রিবিউটর্স ফেডারেশনের সাধারণ সম্পাদক জয়দীপ সরকার বলেন, দোকানদারদের সমস্যাও বোঝা উচিত ড্রাগ কন্ট্রোলারের। কোম্পানিগুলি কাটা ওষুধ ফেরত নিতে চায় না। সেক্ষেত্রে আমাদের লোকসানই লোকসান। ড্রাগ কন্ট্রোলার সেই নিশ্চয়তা দিলে আমাদের বিক্রি করতে সমস্যা কীসের!