টার্গেট পেয়িং গেস্টরা, ৬০০ ল্যাপটপ হাতানোর পর পুলিসের জালে বাগুইঅাটির ‘চোর দম্পতি’


কলকাতা: হাত ভর্তি সোনার আংটি। স্ত্রীর গায়েও দামি দামি গয়না। বাড়িতে ৫২ ইঞ্চি টিভি। দেড় লাখ টাকা দামের ফ্রিজ। ঘরে সোনায় মোড়া কালী ঠাকুর। ফ্ল্যাটভর্তি মূল্যবান সামগ্রী। বিলাসবহুল জীবনযাত্রা। সপ্তাহে পাঁচদিন কাজ করে, শনি-রবি ছুটির দিন। সকলে জানেন পেশায় রংমিস্ত্রির জোগাড়ে। বাগুইআটিতে ভাড়া ফ্ল্যাটে থাকা কাটোয়ার বাসিন্দা ওই যুবক ও বনগাঁর বাসিন্দা তার স্ত্রীকে নিয়ে চোখ কপালে উঠে গিয়েছে পুলিস মহলের। কারণ এই দম্পতির একটাই ধ্যানজ্ঞান কেবলমাত্র ল্যাপটপ চুরি করা। ল্যাপটপ ছাড়া ঘরে থাকা অন্য কোনও দামি সামগ্রী পড়ে থাকলেও তারা ছুঁয়ে দেখে না। ওই দম্পতিকে গ্রেপ্তারের পর জেরায় পুলিস এসব জানতে পেরেছে।

পুলিস সূত্রে জানা গিয়েছে, ভিনরাজ্য ও জেলা থেকে কলকাতায় চাকরি সূত্রে ও পড়াশুনো করতে আসা প্রায় ৭০০ যুবক-যুবতী তাদের 'শিকার' হয়েছে। তালার মধ্যে লোহার রড ঢুকিয়ে তাতে পাথর দিয়ে শব্দ বন্ধ করতে টাওয়াল মুড়িয়ে অভিনব কায়দায় শিকার করে গিয়েছে বেশ কয়েক বছর ধরে। ল্যাপটপ চোর এই দম্পতির মাসে আয় ১-৩ লক্ষ টাকা। কোথায় পেয়িংগেস্ট রয়েছে, তার খোঁজ আনা ও চুরির মাল বিক্রি করতে সাহায্য করত তার স্ত্রী। আপাতত শ্রীঘরে থাকা সৌমেন বর্মন ও সঙ্গীতা বর্মন নামে ওই দম্পতির সঙ্গে আরও বড় চক্র রয়েছে কি না তার খোঁজ চালাচ্ছে বাগুইআটি থানার পুলিস।

রাতবিরেত নয়, কাজের দিনে সকাল ১০টা থেকে বেলা ৩টে পর্যন্ত হচ্ছে তার চুরির সময়। বাগুইআটি, দমদম, লেকটাউন, বিধাননগর সহ বিভিন্ন জায়গায় তার অপারেশন চলেছে। দিনে চুরির পর তার স্ত্রী রাতে ফোন করে সেই ল্যাপটপ ৫০ হাজার দাম হলে ৫ হাজারে বিক্রির খরিদ্দার দেখত। সকালে তা নিয়ে যেত খরিদ্দাররা। শুক্রবার পুলিস জানিয়েছে, নেতাজিপল্লির জগৎপুরের বাসিন্দা বছর ৩৪ বয়সি সৌমেন বর্মনকে গত ১৯ নভেম্বর গ্রেপ্তার করা হয়েছে। তাকে জেরা করে তার স্ত্রী সঙ্গীতা বর্মনকে ২১ নভেম্বর গ্রেপ্তার করা হয়। তাদের বাড়ি থেকে ১৩১টি ল্যাপটপ উদ্ধার করা হয়েছে। উদ্ধার হওয়া ল্যাপটপের মডেলগুলি বিধাননগর কমিশনারেটের ফেসবুক পেজে দিয়ে দেওয়া হবে। প্রমাণ দিয়ে নির্দিষ্ট মালিকরা তা নিয়ে যেতে পারবেন।

বিধাননগরের গোয়েন্দা প্রধান আভারু রবীন্দ্রনাথ বলেন, ওএলএক্স বা ওই ধরনের প্রযুক্তির সাহায্যে চুরির জিনিস বিক্রি করা হয়েছে কি না তারও খোঁজ নেওয়া হচ্ছে। দম্পতির অবশ্য দাবি, ওই ব্যক্তি একাই চুরি করত। কেষ্টপুরের সমরপল্লির একটি বাড়িতে বেলা সাড়ে ১২টা নাগাদ চুরি করতে ঢোকে। খবর পেয়ে পুলিস গিয়ে তাকে ধরে ফেলে। তার বাড়িতে গেলে স্ত্রীর প্রবল শাসানির মধ্যেও পড়তে হয়েছিল পুলিসকে। পরে অবশ্য সে ভেঙে পড়ে।