নিষ্ঠুর রসিকতা হচ্ছে না কি?


আর কত বোঝা চাপবে? আমজনতার কাঁধের বোঝাটাকে আর কতটা ভারী করে তোলা হবে? নোটবন্দির অপূরণীয় ক্ষতি বা পেট্রল-ডিজেলের আগুন দাম দেখে জনসাধারণ যখন প্রায় নিশ্চিত যে, এ যাত্রায় 'অচ্ছে দিন' আর দেখা হল না, তখন দিনযাপন আরও কঠিন করে তুলতে শুরু করল রান্নার গ্যাস।

ভর্তুকিহীন সিলিন্ডারের দাম পৌঁছে গেল ৯৭১ টাকা ৫০ পয়সায়। এখন থেকে এলপিজি ডিলারদের আরও বেশি কমিশন দিতে চান সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ। কিন্তু দায়টা নিজেরা নিতে চান না, অতিরিক্ত কমিশনটাও তাঁরা আদায় করে নিতে চান গ্রাহক অর্থাৎ সাধারণ নাগরিকের কাছ থেকে।

ক্ষোভ এবং বিস্ময় যুগপৎ হানা দেয়। কোনও সরকার কোন বুদ্ধিতে বা কোন যৌক্তিকতায় ভর করে এই রকম সিদ্ধান্ত নিতে পারে, তা বোঝা খুব শক্ত।

ভারতবাসীকে 'সুদিন' দেখানোর প্রতিশ্রুতিটা ছিল বিজেপির তথা নরেন্দ্র মোদীদের অন্যতম প্রধান অঙ্গীকার। ক্ষমতাসীন হওয়ার পরে প্রায় সাড়ে চার বছর কাটিয়ে দিয়েও কি নরেন্দ্র মোদীরা খুব স্পষ্ট করে বলতে পারছেন, ঠিক কোন কোন ক্ষেত্রে সেই প্রতিশ্রুত 'সুদিন' তাঁরা আনতে পেরেছেন? সামগ্রিক সুদিনের কথা না হয় ছেড়েই দিলাম। এত কিছুর পরেও যখন রান্নার গ্যাসের একটা সিলিন্ডারের দাম হাজার টাকার কাছাকাছি পৌঁছে যায়, তখন শাসকদের বোধবুদ্ধি নিয়ে প্রশ্ন ওঠা স্বাভাবিক নয় কি?
সম্পাদক অঞ্জন বন্দ্যোপাধ্যায়ের লেখা।

এ কথা ঠিক যে, গত কয়েক বছরে দেশের প্রান্তে প্রান্তে রান্নার গ্যাস পৌঁছে দিয়েছে নরেন্দ্র মোদীর সরকার, বিপুল সংখ্যক রান্নাঘরে এলপিজি সংযোগ পৌঁছেছে খুব অল্প সময়ে। এই বিপুল সংখ্যক রান্নাঘরকে ভর্তুকি দিতে সরকারের খরচ নেহাৎ কম নয়, সে কথাও না হয় মেনে নেওয়া গেল। কিন্তু তার পরেও দু'টো গুরুত্বপূর্ণ প্রশ্ন ওঠে।

প্রথম প্রশ্ন, নাগরিকদের একটা অংশকে ভর্তুকি দেওয়ার যে ঘাটতি, তা কি নাগরিকদের অন্য একটা অংশের কাছ থেকে আদায় করে নেওয়া হচ্ছে? সাধারণ মধ্যবিত্তকে বেশি খরচ করিয়ে অপেক্ষাকৃত নিম্নবিত্তের সুরাহা করা হচ্ছে— এমন যুক্তি যদি কেউ দেন, তা হলে আরও এক বার তথ্য-পরিসংখ্যানের দিকে চোখ রাখতে হয়। কত জনকে সঙ্কটে ফেলা হচ্ছে এবং তার বিনিময়ে ঠিক কত জনের সুরাহা হচ্ছে— এর স্পষ্ট হিসেবটা তা হলে এ বার চাইতে হয়।
দ্বিতীয় প্রশ্ন, ভর্তুকি যুক্ত সিলিন্ডারের দামও তো ৫১০ টাকা ৭০ পয়সা। একে কি সস্তায় রান্নার গ্যাস দেওয়া বলা যায়? ভারতীয় নাগরিকদের যে অংশের জন্য ভর্তুকিতে রান্নার গ্যাস দেওয়ার ব্যবস্থা, সিলিন্ডার পিছু ৫১০ টাকা খরচ করার সামর্থ তাঁদের সকলের রয়েছে তো?
আরও একবার মনে করিয়ে দিই, 'অচ্ছে দিন'-এর স্বপ্ন দেখিয়ে ক্ষমতায় এসেছিলেন আপনারা। স্বপ্নের বদলে দুঃস্বপ্ন হানা দিলে প্রশ্ন তো উঠবেই। প্রতিশ্রুতি যা ছিল আর বাস্তবে যা ঘটল, সেই দুই দৃশ্যকে পাশাপাশি রাখলে এখন মনে হচ্ছে, দেশের এক বিপুল সংখ্যক নাগরিক নিষ্ঠুর রসিকতার শিকার হয়েছেন।