রাফাল নিয়ে সুপ্রিম কোর্টের প্রশ্নের মুখে খেই হারাল কেন্দ্র


একের পর এক প্রশ্নবাণ। শুধু মামলাকারী অরুণ শৌরি-প্রশান্ত ভূষণদের থেকে নয়, খোদ প্রধান বিচারপতি ও তাঁর বেঞ্চের অন্য দুই সদস্যের কাছ থেকেও।

''রাফালের অফসেট সহযোগী পালিয়ে গেলে কী হবে?''

''আগের চুক্তি বহাল থাকলেও প্রধানমন্ত্রী কী করে নতুন চুক্তি ঘোষণা করে ফেললেন?''
''বিমানের সংখ্যা ১২৬ থেকে কমে ৩৬ হয়ে গেল কী ভাবে?''

কিছুটা থতমতই খাচ্ছেন অ্যাটর্নি জেনারেল কে কে বেণুগোপাল। খেই ধরিয়ে দিলেন প্রধান বিচারপতি রঞ্জন গগৈ, ''আপনার নোটেই তো লেখা আছে, আগের চুক্তি প্রত্যাহারের প্রক্রিয়া ২০১৫ সালের মার্চে শুরু হয়েছিল, শেষ হয় জুনে।'' 

রাফাল কেনার প্রক্রিয়া, অফসেট (দেশীয় সংস্থাকে দিয়ে যন্ত্রাংশ তৈরি) আর দাম। এই তিনটি বিষয় নিয়েই শৌরি-প্রশান্ত-যশবন্ত সিন্‌হাদের সঙ্গে আরও তিন জনের করা মামলা নিয়ে আজ প্রায় সাড়ে তিন ঘণ্টার 'হাইভোল্টেজ' শুনানি হল সুপ্রিম কোর্টে। আদালতের নজরদারিতে তদন্ত হবে কি না, সেই রায়দান স্থগিত রাখল প্রধান বিচারপতি গগৈ, বিচারপতি কে এম জোসেফ এবং বিচারপতি এস কে কউলের বেঞ্চ। 

বিনা মন্তব্যে
 
১৩ এপ্রিল, ২০১৫: ৩৬ রাফাল যুদ্ধবিমান কেনার ঘোষণা নরেন্দ্র মোদীর
'দাসোর সিইও এরিক ত্রাপিয়ের দাবি, এর আগে জানতেন না যে হ্যালের সঙ্গে সমঝোতা হচ্ছে না'
 
২৮ মার্চ, ২০১৫: মোদীর ঘোষণার দুই সপ্তাহ আগে অনিল অম্বানীর রিলায়্যান্স ডিফেন্স লিমিটেড তৈরি

'এরিকের দাবি, এপ্রিলেই দাসোর সঙ্গে রিলায়্যান্সের যৌথ উদ্যোগ, কারণ অনিল অম্বানীর জমি আছে' 
 
২৪ এপ্রিল, ২০১৫: সাবসিডিয়ারি রিলায়্যান্স এরোস্ট্রাকচার লিমিটেড তৈরি
 
১৬ জুন, ২০১৫: বিমানবন্দরের কাছে জমির আবেদন করে রিলায়্যান্স
 
২৯ অগস্ট, ২০১৫: ২৮৯ একর জমি বরাদ্দ হয়, রিলায়্যান্স নেয় শুধু ১০৪ একর। পুরো টাকা মেটায় ২০১৭ সালে। তখন দাসোর সঙ্গে আনুষ্ঠানিক যৌথ উদ্যোগ হয় 
এরিকের দাবি, 
'হ্যালের জমি নেই, তাই সমঝোতা হয়নি'
 
২০১২: হ্যাল বেঙ্গালুরুতে নতুন জমির আবেদন করেছিল। বিমানবন্দরের কাছে আরও জমি আছে তাদের
 'আমি মিথ্যে বলি না'
 এরিক ত্রাপিয়ে

১৩ নভেম্বর, ২০১৮
দাম নিয়ে প্রধান বিচারপতি 'এখনই' প্রকাশ্যে আলোচনা করতে না-চাওয়ায় মামলাকারীদের পুরো জোর ছিল অনিল অম্বানীকে অফসেটের একতরফা বরাত দেওয়ার উপরে। অভিযোগ, এর জন্যই বদলে ফেলা হয়েছিল অফসেটের নীতি। মামলাকারীরা বলেছেন, ''আগে তো অন্তত প্রতিরক্ষামন্ত্রীর অনুমোদনের পরে অফসেট সহযোগী ঠিক হত। এখন সেটাও পাল্টে দেওয়া হয়েছে।''

বেণুগোপাল এক বার বলে ফেলেন, এই মামলা বিচার বিভাগীয় পর্যালোচনার নয়, বিশেষজ্ঞদের বিষয়। কিন্তু কেন্দ্রকে মানতে হয়েছে, অফসেট নীতি বদলানো হয়েছে। এবং ফরাসি সরকার এই চুক্তি রূপায়ণের ব্যাপারে 'সার্বভৌম নিশ্চয়তা' দেয়নি। অনিল অম্বানীকে অফসেট দেওয়ার বিষয়টি এখনও সরকার জানে না— এই যুক্তি শুনে আদালত প্রশ্ন তুলেছে, কেন পাল্টানো হয়েছে অফসেট নীতি? সহযোগী সংস্থা হাত গুটিয়ে নিলে বা দেরি করলে দেশের স্বার্থের কী হবে?

প্রতিরক্ষা মন্ত্রকের অতিরিক্ত সচিব অপূর্ব চন্দ্র যুক্তি দেন, সরকার পরে স্থির করবে কোনও সহযোগীকে গ্রহণ করা হবে কি না। প্রয়োজনে জরিমানারও ব্যবস্থা আছে। কিন্তু কেন চুক্তির সঙ্গেই অফসেট নীতি চালু হচ্ছে না? আদালতের এই প্রশ্নের জবাবও ঠিকমতো দিতে পারেনি সরকার।

কংগ্রেসের নেতারা বলছেন, শীর্ষ আদালতের কাছেও আজ স্পষ্ট হল, রাফাল চুক্তিতে গরমিল আছে। আইন মন্ত্রকের সতর্কতা উপেক্ষা করে চুক্তি হয়েছে। এরও তদন্ত হোক। 'সার্বভৌম নিশ্চয়তা' নেই মানে এটি দুই সরকারের চুক্তি নয়, ভারত এবং দাসোর চুক্তি। রাহুল গাঁধী ছত্তীসগঢ়ে বলেছেন, ''যে দিন সিবিআই তদন্ত শুরু হবে, সে দিন দু'টো নাম বেরোবে। অনিল অম্বানী এবং নরেন্দ্র মোদী।''

বিজেপির আশা, তদন্ত থেকে বাঁচলে তার কৃতিত্ব হবে বায়ুসেনার ভাইস মার্শাল জে চলপতির। বেনজির ভাবে যাঁকে আজ ডেকেছিল কোর্ট। বেণুগোপাল 'কাল্পনিক' যুক্তি দেন, কার্গিলের সময়ে রাফাল থাকলে সুবিধে হত। চলপতি জানান, ১৯৮৫ সালের পর থেকে নতুন বিমান আসেনি। বায়ুসেনার পঞ্চম প্রজন্মের যুদ্ধবিমান দরকার। বায়ুসেনার অফিসারদের প্রশ্ন করার পরে প্রধান বিচারপতি বলেন, ''এ বার আপনারা ফিরে যান নিজেদের 'ওয়ার-রুম'-এ। এটি অন্য 'ওয়ার-রুম'।''