দূষিত বায়ু, রাজ্যকে জরিমানা ৫ কোটি


দূষণ মোকাবিলায় ব্যর্থ হওয়ায় সোমবারই রাজধানী দিল্লির সংশ্লিষ্ট অফিসারদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা গ্রহণ করতে কেন্দ্রীয় দূষণ নিয়ন্ত্রণ পর্ষদকে নির্দেশ দিয়েছে সুপ্রিম কোর্ট। ২৪ ঘণ্টা পেরোতে না-পেরোতেই কলকাতা এবং হাওড়ার বায়ুদূষণ মোকাবিলায় 'ব্যর্থ' রাজ্যের কাছে ৫ কোটি টাকা পরিবেশ জরিমানা ধার্য করল জাতীয় পরিবেশ আদালত। আগামী দু'সপ্তাহের মধ্যে ওই টাকা কেন্দ্রীয় দূষণ নিয়ন্ত্রণ পর্ষদের কাছে জমা দেওয়ার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। অনাদায়ে প্রতি মাসে অতিরিক্ত ১ কোটি টাকা জরিমানা দিতে হবে। শুধু তাই নয়, কলকাতা এবং হাওড়ার বায়ুদূষণ নিয়ে এখনও পর্যন্ত কী ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে ২০১৯-র ৮ জানুয়ারির মধ্যে রাজ্যের মুখ্যসচিবকে তা হলফনামা আকারে দাখিল করার নির্দেশও দিয়েছে আদালত।

কলকাতা ও হাওড়ার বায়ুদূষণ নিয়ে ২০১৬-তেই জাতীয় পরিবেশ আদালতে মামলা দায়ের করেছিলেন পরিবেশকর্মী সুভাষ দত্ত। সেই মামলাতেই প্রথমে ২০১৬-র অগস্টে বায়ুদূষণ রোধে বেশ কিছু ব্যবস্থা নেওয়ার নির্দেশ দেয় আদালত। সুভাষবাবুর অভিযোগ, 'তার পরেও কার্যত কোনও ব্যবস্থাই নেওয়া হয়নি রাজ্য বা পুরসভার তরফে।' দিল্লির বায়ুদূষণ সংক্রান্ত অভিযোগ জানানোর জন্য কেন্দ্রীয় দূষণ নিয়ন্ত্রণ পর্ষদকে সোশ্যাল মিডিয়ার একটি পৃথক অ্যাকাউন্ট খোলার নির্দেশ দেয় দেশের শীর্ষ আদালত। সম্প্রতি সুপ্রিম কোর্টে কেন্দ্রীয় দূষণ নিয়ন্ত্রণ পর্ষদের তরফে অতিরিক্ত সলিসিটর জেনারেল এএনএস নন্দাকারনি জানান, ওই অ্যাকাউন্টে ১ থেকে ২২ নভেম্বর পর্যন্ত ৭৪৯টি অভিযোগ জমা পড়েছে। তার মধ্যে প্রায় ৫০০টি অভিযোগের ভিত্তিতে ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে।

এই পরিপ্রেক্ষিতেই সোমবার বাকি আড়াইশোটি অভিযোগের ক্ষেত্রে কর্তব্য পালন করতে ব্যর্থ হওয়ায় সংশ্লিষ্ট অফিসারদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা গ্রহণের নির্দেশ দেয় সুপ্রিম কোর্টের বিচারপতি মদন বি লোকুর এবং দীপক গুপ্তার বেঞ্চ। পরিবেশ রক্ষা আইনের ১৫ নম্বর ধারায় এক্ষেত্রে সংশ্লিষ্ট ব্যক্তির ৫ বছর পর্যন্ত জেলের সংস্থান রয়েছে। এ দিন পরিবেশ আদালতের বিচারপতি এস পি ওয়াংদি এবং বিশেষজ্ঞ সদস্য নাগিন নন্দার বেঞ্চ অন্তর্বর্তী পরিবেশ জরিমানা হিসেবে রাজ্যের কাছ থেকে ৫ কোটি টাকা জরিমানা ধার্য করেছে।

শহরের দূষণের অন্যতম উৎস পরিবহণ ক্ষেত্র। নির্মাণকাজ, শুকনো পাতা জ্বালানো, হট মিক্স প্লান্টের ব্যবহার-সহ আরও বেশ কিছু উৎসও শহরের বায়ুদূষণের জন্য দায়ী। পশ্চিমবঙ্গ দূষণ নিয়ন্ত্রণ পর্ষদের তরফে অবশ্য এই উৎসগুলিকে চিহ্নিত করার একটি উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। যদিও সুভাষবাবুর অভিযোগ, ২০১৬, ২০১৭ এবং সর্বশেষ ২০১৮-র ২৪ এপ্রিল বায়ুদূষণ রোধে সুস্পষ্ট যে নির্দেশিকাগুলি দেওয়া হয়েছিল তার ভিত্তিতে কোনও ব্যবস্থাই নেয়নি রাজ্য। দূষণ নিয়ন্ত্রণ পর্ষদের তথ্য থেকেও দেখা যাচ্ছে, কালীপুজো থেকে ২৫ নভেম্বর পর্যন্ত কলকাতার বাতাসে অন্তত ৭ দিন পিএম-২.৫ র মাত্রা দিল্লির থেকেও বেশি ছিল। 

পরিবেশমন্ত্রী শুভেন্দু অধিকারী বলেছেন, 'কোনও মন্তব্য করব না। পশ্চিমবঙ্গ দূষণ নিয়ন্ত্রণ পর্ষদই রেগুলেটরি বডি। তারাই জানাক, বায়ুদূষণ রুখতে কী ব্যবস্থা তারা নিয়েছে, আর কী ব্যবস্থা তারা নিতে চায়।' পশ্চিমবঙ্গ দূষণ নিয়ন্ত্রণ পর্ষদের চেয়ারম্যান কল্যাণ রুদ্র বলেন, 'নির্দেশ দেখিনি। তবে যত দুূর শুনেছি, ১৫ বছরের পুরোনো গাড়ি বাতিল নিয়ে নির্দেশ দিয়েছে।'