পিক–নোংরামি বন্ধে কড়া জরিমানার দাওয়াই


যত্রতত্র থুতু–পানের পিক–নোংরা–আবর্জনা ফেলার কুঅভ্যাসধারীরা সাবধান। এই ‌নোংরামি বন্ধ করতে এবার আরও কড়া রাজ্য সরকার। পুর আইনে ওই অপরাধে শাস্তির ব্যবস্থা নেই। তাই কড়া জরিমানাতেই ওই নোংরামি বন্ধ করতে চায় পুর ও নগরোন্নয়ন দপ্তর। সেই লক্ষ্যেই জরিমানার পরিমাণ বাড়িয়ে দেওয়া হল ১০০ গুণ। রাজ্য সরকারের আশা, শহর ও শহরতলির নাগরিকদের একাংশ জরিমানাতেই জব্দ হবে।

সোমবারই রাজ্য বিধানসভায় এই সংক্রান্ত একটি পুর আইনে সংশোধনী এনেছে পুর ও নগরোন্নয়ন দপ্তর। বিরোধী বাম এবং কংগ্রেস আপাতত বিধানসভা বয়কট করছে। ফলে পুরমন্ত্রী (তথা কলকাতার হবু মেয়র) ফিরহাদ হাকিমের আনা পুর আইনের সংশোধনীটি এদিন সর্বসম্মতভাবেই পাশ হয়ে গেছে। এতদিন পুরসভা এলাকার এই আইনের বলে এ ধরনের অপরাধের জন্য নির্ধারিত জরিমানার পরিমাণ ছিল ন্যূনতম ৫০ টাকা ও সর্বোচ্চ ৫০০ টাকা। সংশোধনী–পরবর্তী সময়ে ওই জরিমানার পরিমাণ বেড়ে দাঁড়াল ন্যূনতম ৫০০ টাকা এবং সর্বোচ্চ ৫০ হাজার টাকা। 'কর্পোরেশন' এলাকায় জরিমানার পরিমাণ নির্ধারিত হল সর্বনিম্ন ১ হাজার টাকা এবং সর্বোচ্চ ১ লক্ষ টাকা। কলকাতা, হাওড়া, বিধাননগর, চন্দননগর, আসানসোল এবং শিলিগুড়ির মতো শহরে শেষোক্ত পরিমাণই কার্যকর হবে।

ওই সংশোধনীতে আরও কিছু গুরুত্বপূর্ণ সুবিধে ও পরিবর্তন আনা হয়েছে। এতদিন ৬৫ বছর বয়সের পর থেকে প্রবীণ নাগরিকেরা সম্পত্তিকরে ছাড় পেতেন। এখন থেকে ৬০ বছর বয়সের পর থেকেই তাঁরা সম্পত্তিকরে ১০ শতাংশ ছাড় পাবেন। সরকারি মালিকানাধীন হাসপাতাল বা ক্লিনিকের সম্পত্তিকরে পুরোপুরি ছাড় দেওয়া হয়েছে। ব্যাঙ্ক অ্যাকাউন্ট নিয়ে কিছু অসুবিধে হচ্ছিল নাগরিকদের। সেটি বিচার করেই ঠিক করা হয়েছে, এখন থেকে শুধু পুরসভা এলাকা নয়, যে কোনও প্রান্তের যে কোনও শাখার ব্যাঙ্কে পুরসভার টাকা জমা দিতে পারবেন নাগরিকরা।

এদিন অধিবেশনের দ্বিতীয়ার্ধে '‌দি ওয়েস্ট বেঙ্গল মিউনিসিপ্যাল (‌সেকেন্ড অ্যামেন্ডমেন্ট)‌ বিল ২০১৮'‌ সংশোধনীটি আনেন ফিরহাদ। বাম–কংগ্রেস সভায় না–থাকায় আলোচনায় অংশ নেন তৃণমূলের সুজিত বসু, অর্জুন সিং, অপূর্ব সরকাররা। সুজিত বলেন, 'এটি অত্যন্ত প্রয়োজনীয় সংশোধনী। নাগরিকদের একাংশ যেখানে সেখানে নোংরা–আবর্জনা ফেলে শহরকে কলুষিত করছে। এদের শুধু জরিমানা নয়, শাস্তিরও ব্যবস্থা করা উচিত!' ফিরহাদ বলেন, 'শহরে এখন কোথাও কোনও কাঁচা রাস্তা নেই। মুখ্যমন্ত্রী বার বার বলছেন এবং আন্তরিকভাবে চাইছেনও আমাদের শহর পরিচ্ছন্ন রাখতে। তাই এই সংশোধনী। আমরা নাগরিকের ওপর জরিমানা চাপাতে চাই না। আমাদের জরিমানা করতে বাধ্য করবেন না।' পাশাপাশিই তিনি বলেন, 'মশা নিয়ে আমরা খুবই উদ্বিগ্ন। নাগরিক সচেতনতা না বাড়ালে মশা মোকাবিলা করা কঠিন। পুরসভার কর্মীরা বাড়ি বাড়ি যাচ্ছেন। কিন্তু কিছু নাগরিক তাঁদের পরামর্শ মানছেন না। ক্ষতি হচ্ছে সকলের। এমনকী, মশার তেল দিতে গেছেন, এমন পুরকর্মীকে বাড়ি থেকে বের করে দেওয়া হয়েছে এমন উদাহরণও আছে। পরিষ্কার–পরিচ্ছন্ন রাখলে শহর বসবাসের জন্য নিরাপদও হয়।'