মৃত্যুর পর হাহুতাশ করে কী লাভ?

মোবাইলে ভিডিয়ো দেখতে দেখতে বাস চালাচ্ছেন চালক।

আপাতদৃষ্টিতে কতটা 'তুচ্ছ' হলে একটা অন্যায় চালিয়ে যাওয়া যায়? কতটা 'শান্তিপ্রিয়' হলে মানুষ ঘোর অন্যায় দেখেও চুপ থাকতে পারেন, নিজের জীবনের আশঙ্কা সত্ত্বেও? কতটা নিষ্ক্রিয় প্রশাসনিক ব্যবস্থা হলে কলকাতার বুকে নিশ্চিন্তে প্রাণনাশী অন্যায় করে যাওয়া যায়?

এতগুলো প্রশ্ন একটি বাস এবং তার চালকের অবিমৃষ্যকারী এক আচরণকে কেন্দ্র করে। রাজ্য জুড়ে 'সেফ ড্রাইভ, সেভ লাইভ' প্রচারের ঢক্কানিনাদের আড়ালে বাস্তবে পরিস্থিতি কতটা ফাঁপা, তা প্রমাণ করে ধর্মতলা-ব্যারাকপুর রুটের এক বাসচালক গোটা রাস্তা বাস চালিয়ে গেলেন মোবাইলে ডান্স আইটেমে মনোনিবেশ করে! শাসনের তোয়াক্কা নেই কোথাও, পটভূমিকায় নেই মুর্শিদাবাদের দৌলতাবাদে ৪৬ জনের প্রাণ কেড়ে নেওয়া বাসচালকের মোবাইল কলের দুঃসহ স্মৃতি! এবং বস্তুত, কোথাও শিক্ষা নেওয়ার চেষ্টাও নেই, না ব্যক্তির, না সমাজের, না প্রশাসনের!

কলকাতার ভিড়সঙ্কুল অফিসফেরত রাস্তায় সামান্যতম অমনোযোগ কী ভয়াবহ পরিণতি ডেকে আনতে পারে, সেটা বোঝার জন্য রকেটবিজ্ঞানী হওয়ার দরকার পড়ে না। সেখানে মোবাইলের ভিডিয়োতে চোখ রেখে বাস চালানোর স্পর্ধা ও দুঃসাহস যখন কারও হয়, এবং নির্বিবাদে ভিডিয়ো দর্শন চলতেও থাকে, তখন বুঝতে হয়, বড়সড় গলদ থেকে যাচ্ছে কোথাও।

সংবাদমাধ্যমের জিজ্ঞাসার উত্তরে অবধারিত ভাবে উঠে আসছে রুটিন প্রতিক্রিয়া সংশ্লিষ্ট সব মহল থেকেই। অভিযোগ পেলে আইনানুগ ব্যবস্থার প্রতিশ্রুতিও আসছে এটা জেনেই, ঢেউ চলে গেলে আবার যেই কে সেই হবে, অতএব চলুক পানসি বেলঘড়িয়া।

মৃত্যুর পর হাহুতাশ এবং হম্বিতম্বির বদলে মৃত্যু রোখার লক্ষ্যে ন্যূনতম কাজগুলো করতে শিখব আদৌ? প্রশাসন শিখবে?