ঘুরতে গিয়ে বরফে বন্দি


বরফে ঢাকা রাস্তা, বাড়ি, বিমানবন্দর। পানীয় জলও অমিল। হাড়কাঁপানো শীতের মধ্যে অগ্নিমূল্য বিমান ভাড়া। কালীপুজোর আগে লেহ-লাদাখ বেড়াতে গিয়ে টানা তুষারপাতে এমনই সাঁড়াশি-বিপদে কলকাতা-হাওড়ার ৫১ জন বাঙালি। তাঁদের মধ্যে বেশ কয়েক জন প্রবীণ নাগরিক, মহিলা ও শিশুও রয়েছেন। তুষারপাতের জেরে পরিস্থিতি এমন পর্যায়ে পৌঁছেছে যে, লেহ-তে সব হোটেলও বন্ধ। একটি মাত্র হোটেলে কোনওরকমে আশ্রয় নিয়েছেন পর্যটকেরা। সেই হোটেল মালিকও জানিয়ে দিয়েছেন, আজ রবিবারই হোটেল বন্ধ করে দেবেন। বেড়াতে গিয়ে যে এমন ভয়াবহ পরিস্থিতিতে পড়তে হবে, তা ভাবতেও পারেননি কেউই। এখন কোনও রকমে বাড়ি ফেরার জন্য তাঁরা মরিয়া। 

কলকাতার একটি ভ্রমণ সংস্থার সঙ্গে ৫১ জন পর্যটকের একটি টিম গত ২৬ অক্টোবর লেহ-লাদাখের উদ্দেশে রওনা দেন। ওই ভ্রমণ সংস্থার তরফে দেবকুমার দত্ত শনিবার লেহ থেকে 'এই সময়'কে বলেন, 'প্রথম দিকে সবই ঠিক ছিল। বিপত্তি শুরু হয়েছে গত বৃহস্পতিবার থেকে। আমাদের একটি টিম কার্গিলে গিয়েছিল। সেখানে তুষারপাতে সব রাস্তা বন্ধ। ফলে ৩৪ জন সেখানেই আটকেছিলেন। এ দিনই সেনাবাহিনীর সহযোগিতায় কোনওক্রমে তাঁরা একটি বাসে লেহর উদ্দেশে রওনা দিয়েছেন। কিন্তু যাঁরা লেহতে রয়ে গিয়েছেন, তাঁদের সমস্যাও কিছু কম নয়। হোটেল, দোকান সব বন্ধ। খাবার-পানীয় জলেরও সমস্যা দেখা দিয়েছে। সবচেয়ে বড় কথা, এখন যে-হোটেলে পর্যটকরা রয়েছেন, তাঁর মালিকের হাতে-পায়ে ধরে শনিবারের মতো ব্যবস্থা করা গিয়েছে। তার পর কী হবে, জানি না।'

আটকে পড়া পর্যটকদের দলে রয়েছেন অমিত পাল। শনিবার তিনিও কার্গিল থেকে বাসে লেহর উদ্দেশে রওনা দিয়েছেন। তিনি বলেন, 'বৃহস্পতি ও শুক্রবার আমরা কার্গিল থেকে বের হতেই পারিনি। এ দিন কোনওক্রমে রওনা দিয়েছি লেহর উদ্দেশে। কিন্তু সেখানে পৌঁছে তার পর কী হবে, জানি না।' ভ্রমণ সংস্থার কাছ থেকে জানা গিয়েছে, এই ৫১ জন পর্যটকের মধ্যে ১১ জনের ফেরার টিকিট আগে থেকেই কাটা ছিল লেহ থেকে। বাকিদের শ্রীনগর হয়ে ৫ নভেম্বর কলকাতা ফেরার বিমান ধরার কথা ছিল। উড়ান চলাচল অব্যাহত থাকলে ১১ জন হয়তো নির্দিষ্ট সময়ে কলকাতা ফিরতে পারবেন। চিন্তা বাড়ছে বাকি ৪০ জনকে নিয়ে। কারণ শনিবার রাত পর্যন্ত যা পরিস্থিতি, তাতে ৫ তারিখ শ্রীনগর থেকে বিমান ধরা একরকম অসম্ভব। ইতিমধ্যেই দিল্লিতে পশ্চিমবঙ্গ সরকারের রেসিডেন্ট কমিশনারের সঙ্গে যোগাযোগ করেছেন আটকে পড়া পর্যটকরা। তাঁদের অবস্থার কথা জেনে রেসিডেন্ট কমিশনারের অফিস থেকে লেহ বিপর্যয় মোকাবিলা বিভাগের কন্ট্রোলরুম ও ডেপুটি কমিশনারের সঙ্গে কথা বলা হয়। লেহর প্রশাসনিক আধিকারিকরা আশ্বাস দিয়েছেন, দিন দুই-তিনের মধ্যে তুষারপাত কমলে রাস্তা কিছুটা পরিষ্কার হবে। তার মধ্যে খাবারদাবার বা ওষুধপত্রের কোনও সমস্যা হলে সবরকম সহযোগিতার আশ্বাস দিয়েছেন তাঁরা। রেসিডেন্ট কমিশনারের অফিসের এক আধিকারিক বলেন, 'আমরা আটকে পড়া পর্যটকদের কাছ থেকেই বিষয়টা জানতে পেরেছি। রাজ্য সরকারের তরফ থেকে লেহ প্রশাসন ও ভ্রমণ সংস্থার সঙ্গে যোগাযোগ করে সমস্যা মেটানোর চেষ্টা চলছে।'

ওই হোটেলে বন্দি সন্তোষপুরের বাসিন্দা অঙ্কিতা বিশ্বাস বলেন, 'হোটেল কর্তৃপক্ষ জানিয়ে দিয়েছেন, তাঁরা আর হোটেল খোলা রাখতে পারবেন না। আশপাশের অন্য কোনও হোটেলও খোলা নেই। তা হলে আমরা কীভাবে কাটাব, সেটাই বুঝে উঠতে পারছি না।' ওই হোটেলে মাত্র সাতটি ঘরে আপাতত ৫১ জন বাসিন্দাকে ঠাঁই নিতে হয়েছে। অঙ্কিতার কথায়, 'হোটেলে খাবার নেই। পানীয় জলের কলও বরফ জমে গিয়েছে। ভ্রমণ সংস্থা যে খাবার ও জল নিয়ে এসেছিল, তা-ও প্রায় শেষ।' ওই দলেরই আর এক সদস্য হাওড়ার আন্দুল রোডের বাসিন্দা দীপক দাস বলেন, 'খাবারদাবারের সমস্যা তো রয়েইছে। আমার লেহ থেকে কলকাতা ফেরার টিকিট আছে। কিন্তু বাকিরা যে রকম অসুবিধার মধ্যে পড়েছেন, তাঁদের এই অবস্থায় ফেলে আসতেও মন চাইছে না।'