নিয়ম ভেঙে জারোয়াদের মাছ–উপহার দিতে যাওয়াই কাল হল মার্কিন নাগরিকের


গোটা দুনিয়া থেকে যারা বিচ্ছিন্ন, তাদেরকে মাছ এবং অন্য উপহার সামগ্রী দিতে গিয়েছিলেন ওই মার্কিন নাগরিক। কিন্তু জারোয়াদের কিছু বোঝানোর আগেই তারা মেরে ফেলে আমেরিকার মিশনারির সঙ্গে যুক্ত জন অ্যালেন চৌকে। ২৭ বছরের ওই যুবককে মেরে সমুদ্রের তীরেই পুঁতে দেওয়া হয়।

পুলিস সূত্রে জানা যাচ্ছে, ওয়াশিংটন ভ্যানকুভারের বাসিন্দা জন তাঁর ইনস্টাগ্রামে বহু অ্যাডভেঞ্চার সফরের ছবি দিতেন। মিশনারির কাজে প্রায়ই তাঁকে বিদেশে যেতে হত। সেই সূত্রেই তিনি বঙ্গোপসাগরের তীরে অবস্থিত আন্দামান দ্বীপপুঞ্জে এসেছিলেন। নভেম্বরে তাঁর এখানে আসার মূল উদ্দেশ্যই ছিল সেন্টিনেলেস আদিবাসীদের সঙ্গে যোগাযোগ করা। আন্দামানের সংরক্ষিত দ্বীপ উত্তর সেন্টিনেল দ্বীপে যে সব জারয়োদের বাস, তারা দশকের পর দশক ধরে বিশ্বের সঙ্গে নিজেদের যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন করে রেখেছে। বাইরের কেউ যদি ভুল করেও এই দ্বীপে ঢোকার চেষ্টা করে, তবে জারোয়াদের তীর–ধনুকের নিশানা থেকে বাঁচতে পারবে না। ভারতীয় আইন অনুযায়ী এই দ্বীপে প্রবেশ নিষিদ্ধ রয়েছে। নিজের এরকম পরিণতি হবে, তা হয়ত অ্যালেন নিজেও জানতেন না। আন্দামানে বসবাসকারী জারোয়াদের সঙ্গেও নিজের ইনস্টাতে ছবি দিয়েছিলেন জন।

জনের পরিবার জানিয়েছে, তিনি সববসময়ই আদিবাসীদের জন্য কাজ করতেন। নিজের জার্নালে জন আদিবাসীদের উদ্দেশ্যে লিখেছিলেন, '‌আমি চিৎকার করে বলছি, আমার নাম জন, আমি তোমাদের ভালোবাসি এবং যীশুও তোমাদের ভালোবাসে।'‌ ১৬ নভেম্বর মৎস্যজীবীদের নৌকাতে করে উত্তর সেন্টিনেল দ্বীপে যাওয়ার আগে তাঁর পরিবারের উদ্দেশ্যে তিনি লিখে যান, '‌ভগবান, আমি মরতে চাই না'‌। অ্যালেনকে সমুদ্রের ধারে পুঁতে দেওয়া হচ্ছে, এই দৃশ্য দেখেছিলেন মৎস্যজীবীরা। কিন্তু তারা কোনও সাহায্য করতে পারেনি। অথচ এই দ্বীপে আসার জন্য সাতজন মৎস্যজীবীকে ২৫ হাজার টাকা দিয়েছিলেন জন। জানিয়েছে পুলিস। যদিও জন অ্যালেনের মায়ের বিশ্বাস তাঁর ছেলে এখনও বেঁচে রয়েছেন। মায়ের আর্শীবাদ তাঁকে বাঁচিয়ে রেখেছে বলে জানিয়েছেন তিনি।

২০১৫ সাল থেকে ২০১৮ সাল পর্যন্ত জন মোট চারবার আন্দামানে এসেছেন। পুলিসের শীর্ষ আধিকারিক দীপক যাদব জানান, মৎস্যজীবীদের মোটা টাকা দিয়ে কোনও অনুমতি ছাড়াই জন উত্তর সেন্টিনেল দ্বীপের উদ্দেশ্যে রওনা দিয়েছিলেন। ১৪ নভেম্বর মধ্যরাতে মৎস্যজীবী সহ জন ওই দ্বীপে পৌঁছান। পরের দিন অর্থাৎ ১৫ নভেম্বর ছোট সরু নৌকা নিয়ে জন ওই দ্বীপে যান এবং সেখানকার বাসিন্দাদের সঙ্গে কথা বলার চেষ্টা করেন। কিন্তু জনকে আসতে দেখেই জারোয়ারা তাঁকে উদ্দেশ্য করে আগুনের তীর ছুঁড়তে শুরু করে। মৎস্যজীবীরা পুলিসকে জানান যে শুক্রবার পর্যন্ত তারা শেষবারের মতো জনকে জীবিত দেখতে পায়। শনিবার সকালে জনের দেহ পুঁতে দেওয়া হয় বলে জানিয়েছে ধৃত মৎস্যজীবীরা। জনের দেহের খোঁজে হেলিকপ্টার নিয়ে তল্লাশি চালানো হচ্ছে।