সবরীমালার মতো বীরভূমের এই কালী মণ্ডপে প্রবেশাধিকার পান না মহিলারা


'মায়ের পুজো', অথচ সেখানেই প্রবেশাধিকার নেই মেয়েদের! 'কালো মেয়ে'র পুজোতে সহকারী হিসেবে থাকলেও মণ্ডপে কোনও ভাবেই প্রবেশ করতে পারেন না মহিলারা। শুধু ঋতুমতী মহিলারাই নন, বীরভূমের চেতলা প্রদীপ সঙ্ঘের পুজা মণ্ডপে পুরুষ ছাড়া প্রবেশাধিকার নেই কারও।

বীরভূমের চেতলা প্রদীপ সঙ্ঘের পুজো শুরু হয়েছিল আজ থেকে বছর ৩৪ আগে। প্রথম দিন থেকেই এই পুজো কমিটি কালী মণ্ডপে নারীদের প্রবেশাধিকার নিষিদ্ধ করেছে। এবং এখনও সেই প্রথা মেনেই কালী পুজো অনুষ্ঠিত হয় সেখানে। প্রদীপ সঙ্ঘ পুজো কমিটির সম্পাদক শৈবাল গুহ এনডিটিভি-কে জানিয়েছেন, "৩৪ বছর ধরে যে প্রথা মেনে আসছি, আমরা তা কোনও ভাবেই ভাঙার স্পর্ধা দেখাতে পারি না। পুজোর সময় যদি কোনও মহিলা পুজো স্থানে প্রবেশ করে তাহলে তা আমাদের গ্রামের জন্য মঙ্গলময় হবে না।  আমরা চাই না আমাদের গ্রামের কোনও অমঙ্গল হোক। তাই এই প্রথা মেনেই আমরা পুজো করতে চাই "।

পুজো কমিটির আরও এক সদস্য সহদেব দাস বলেন, "আমাদের কমিটি-তে অনেক মহিলা সভ্য রয়েছেন। তবে তাঁরা বিশ্বাস করেন, পুজোর সময় মণ্ডপে প্রবেশ করলে দেবী কালী রুষ্ট হতে পারেন। সে কারণেই তাঁরা পুজোয় সহযোগিতা করলেও মণ্ডপের ভিতরে প্রবেশ করেন না। তবে ঠাকুর আনা থেকে বিসর্জন সব কাজেই মহিলারা পুরুষদের সঙ্গে সমান ভাবেই অংশগ্রহণ করেন"।


গ্রামের মহিলারাও সাড়ে তিন দশকের এই প্রথা ভাঙতে আগ্রহী নন। উল্টে  ৩৪ বছর ধরে চলে আসা প্রথাকে ভবিষ্যতেও এগিয়ে নিয়ে যাওয়ার কথাই বলছেন তাঁরা।

যদিও এই প্রথার কোনও যৌক্তিকতাই খুঁজে পাচ্ছেন না ভারতত্ত্ববিদ নৃসিংহপ্রসাদ ভাদুরি। তাঁর বক্তব্য, যেখানে তারাপীঠের মতো সুপ্রাচীন সতীপীঠে মহিলাদের প্রবেশাধিকার অবাধ সেখানে কেন এই পুজো কমিটি পুজো মণ্ডপে প্রবেশাধিকারকে স্রেফ পুরুষদের মধ্যেই কুক্ষিগত করে রেখেছে! পুরাণ বিশেষজ্ঞ নৃসিংহপ্রসাদ ভাদুরি বলছেন, "তাঁরা যে ধরনের রীতি অবলম্বন করছেন তার সঙ্গে ধর্মতত্ত্বের কোনও সম্পর্ক নেই। এমন কোনও লিখিত তথ্য নেই যেখানে পুজোয় মহিলাদের প্রবেশকে অবরুদ্ধ করার কথা বলা রয়েছে"। একই কথা বলছেন পণ্ডিত শম্ভুনাথ কতৃক স্মৃতিতীর্থও।

উল্লেখ্য, সাম্প্রতিক সময়ে কেরলের সবরীমালা মন্দিরে মহিলাদের প্রবেশাধিকারকে স্বীকৃতি  দিয়েছে দেশের সর্বোচ্চ ন্যায়লয়। সুপ্রিম কোর্ট সাফ জানিয়ে দিয়েছে, ঋতুমতী মহিলাদের মন্দিরে যাওয়া থেকে আটকানো যাবে না। যদিও সবরীমালা মন্দিরের আরাধ্য আয়াপ্পা ভক্তদের অনেকই সুপ্রিম আদেশকে মানতে অস্বীকার করছেন। তাঁরা প্রাচীন প্রথা মেনে চলার পক্ষেই সওয়াল করছে। বীরভূমের প্রদীপ সঙ্ঘের পুজোর ক্ষেত্রেও সেই ধর্মীয় বিশ্বাস মেনে চলার প্রবণতা দেখা যাচ্ছে।