হরমনপ্রীতের সেঞ্চুরির ঝড়ে টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপে জয় দিয়ে শুরু ভারতের

দুরন্ত: সেঞ্চুরি করার পরে হরমনপ্রীত (৫১ বলে ১০৩)।

মেয়েদের বিশ্বকাপ সেমিফাইনালে তাঁর ঝোড়ো ইনিংসের স্মৃতি ফিকে হতে না হতেই ফের বিধ্বংসী হয়ে উঠলেন ভারতের তারকা ব্যাটসম্যান হরমনপ্রীত কৌর। তাঁর দাপটেই নিউজিল্যান্ডকে ৩৪ রানে হারিয়ে মেয়েদের টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপ অভিযান শুরু করল ভারত।
শুক্রবার গায়ানায় বিশ্বকাপের প্রথম ম্যাচেই হরমনপ্রীত সেঞ্চুরি করে বুঝিয়ে দেন আগ্রাসী ক্রিকেট খেলতেই তাঁরা এসেছেন। ৫১ বলে ১০৩ রান করেন ভারত অধিনায়ক হরমনপ্রীত। একশোয় পৌঁছতে নেন ৪৯ বল। এই প্রথম ভারতের কোনও মহিলা ক্রিকেটার দেশের জার্সি গায়ে টি-টোয়েন্টিতে সেঞ্চুরি করলেন। ভারত পাঁচ উইকেটে ১৯৪ রান তোলে। রান তাড়া করতে নেমে শুরু থেকেই বিপর্যয়ের মুখে পড়ে নিউজিল্যান্ড। দুই ভারতীয় স্পিনার দয়ালান হেমলতা ও পুনম যাদবের দুরন্ত বোলিংয়ে। দু'জনেই তিনটি করে উইকেট নেন। তাঁদের দাপটে ২০ ওভারে ৯ উইকেটে ১৬০ রানের বেশি তুলতে পারেনি নিউজিল্যান্ড।    

গত বছর জুলাইয়ে ৫০ ওভারের বিশ্বকাপ সেমিফাইনালেও ব্যাটে ঝড় তুলেছিলেন হরমনপ্রীত। সেই ম্যাচে তাঁর ১১৫ বলে ১৭১ রানের ইনিংস অস্ট্রেলিয়ার বিরুদ্ধে জয়ের ভিত গড়ে দিয়েছিল। শুক্রবার ঠিক একই ভাবে ঝোড়ো সেঞ্চুরি করে জয়ে বড় অবদান রাখলেন হরমনপ্রীত। 

শুক্রবার টস জিতে ব্যাট করতে নেমে ভারত ৪০-৩ হয়ে যাওয়ার পরে হরমনপ্রীতকে যোগ্য সঙ্গত দেন মুম্বইয়ের ১৮ বছরের বিস্ময় বালিকা জেমাইমা রদ্রিগেস। তিনি ৪৫ বলে ৫৯ রান করেন এ দিন। হরমনপ্রীত ও জেমাইমার ১৩৪ রানের পার্টনারশিপ দলকে শুরুর ধাক্কা সামলে মাথা তুলে দাঁড়াতে সাহায্য করে। জেমাইমাও এ দিন একটি নজির গড়ে ফেলেন। মেয়েদের বিশ্ব টি-টোয়েন্টিতে এত কম বয়সে কেউ ৫০ রান করতে পারেননি।

এই দু'জন যে ১৩ ওভার উইকেটে ছিলেন, সেই সময়ে প্রভিডেন্স স্টেডিয়ামে রীতিমতো ঝড় ওঠে। ওই সময়ে পাঁচ ওভারে ৫৬ রান ওঠে ভারতের স্কোরবোর্ডে। শেষ দশ ওভারে ১১৮ রান ওঠে। হরমনপ্রীত সাতটি চার ও আটটি ছয় মারেন। জেমাইমা ছয় না মারলেও সাতটি চার মেরে ইনিংসের গতি বজায় রাখেন।

এমন আগ্রাসী ইনিংস খেলে উত্তেজিত হরমনপ্রীত ম্যাচের পরে বলেন, ''এই ইনিংসা খেলতে পেরে আমি খুবই খুশি। তবে এটা মাথায় রাখছি যে, এ তো সবে শুরু। এখনও কিন্তু অনেকটা দূর এগোতে হবে আমাদের। সেই সঙ্গে দল হিসেবে আমাদের আরও অনেক উন্নতি করতে হবে। এমনিতে উইকেটে জমে গেলে যে নিজের সেরা শটগুলো খেলতে পারি, তা আমি ভাল করেই জানি। তবে ওই সময়ে জেমাইমাও কিন্তু খুব ভাল খেলেছে। এ রকম পরিস্থিতিতে উল্টোদিকে একজনকে দরকার হয়, যার সঙ্গে ঘুরিয়ে ফিরিয়ে ব্যাট করা যায়। এই জায়গাটায় আজ অন্তত আমার কোনও অসুবিধে হয়নি।''

প্রসঙ্গত আগের রাতেই যে জ্বরে ভুগেছিলেন, তা জানিয়ে হরমনপ্রীত বলেন, ''মজা হচ্ছে, কাল রাতে আমার জ্বর এসেছিল। আজ যেন সেটা বিশ্বাসই হচ্ছে না। অথচ দেখুন, এই ম্যাচটা জিতে আমার নিজেকে পুরো সুস্থ লাগছে।'' কোচ রমেশ পওয়ারের প্রশংসা করে ভারত অধিনায়ক বলেন, ''উনি কোচ হিসেবে দলে আসার পরে আমাদের মেয়েদের মানসিকতা অনেকটা বদলে গিয়েছে। সেটা প্রতি মুহূর্তে আমরা বুঝতে পারছি। ওঁর অভিজ্ঞতাটা আমাদের সবার কাজে লাগছে। ''

এ দিনের ম্যাচে মিতালি রাজ প্রথম ছ'ওভারে তেমন ভাল রান করতে পারেননি। সেই প্রসঙ্গে হরমনপ্রীত বলেন, ''মনে রাখবেন মিতালি আমাদের দলের অন্যতম নির্ভরযোগ্য সদস্য। প্রথম ছ'ওভারে ও খুব বেশি রান করতে পারেনি এটা ঘটনা। কিন্তু ক্রিকেটে এ রকম হতেই পারে। হয়তো পরে ব্যাট করতে নামলে বেশি রান করতে পারবে মিতালি। তবে ওর দলে থাকাটা থাকাটা আমাদের পক্ষে খুবই ভাল। ওর অভিজ্ঞতা আমাদের সব সময় কাজে আসে।''

সংক্ষিপ্ত স্কোর
ভারত ৫ উইকেটে ১৯৪। হরমনপ্রীত ১০৩, জেমাইমা ৫৯।

নিউজিল্যান্ড ৯ উইকেটে ১৬০। হেমলতা ২৬ রানে তিন উইকেট। পুনম ৩৩ রানে ৩ উইকেট। 
ভারত ৩৪ রানে জয়ী।