ছটে দু’দিন ‘ছুটি’ ঘোষণা রাজ্যের, অবাঙালিদের পাশে থাকার বার্তা মমতার

গঙ্গার ঘাটে ছট পুজোয় মহিলারা।

ছটের দিন ছুটি ছিলই। এ বার পরের দিনও ছুটির বন্দোবস্ত করল রাজ্য সরকার। সোমবার বিজ্ঞপ্তিতে জানানো হয়েছে, ১৩ নভেম্বর, মঙ্গলবার সম্পূর্ণ ছুটি। বুধবার সরকারি অফিস খোলা থাকলেও ছটে অংশগ্রহণকারী কর্মীরা ছুটি পাবেন। অন্য দিকে সোমবার পোস্তায় একটি অনুষ্ঠানে যোগ দিয়ে বিজেপির বিরুদ্ধে তোপ দাগেন তৃণমূল নেত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। বলেন, ''বাংলায় সব ধর্মের, সব সম্প্রদায়ের মানুষ মিলে মিশে থাকে। আর ধর্মের নামে রাজনীতি করে বিজেপি।''

গত বছর থেকেই ছটের ছুটি চালু করে রাজ্য সরকার। কিন্তু পাঁজি অনুযায়ী এ বছর ছট পুজো ১৩ এবং ১৪ নভেম্বর দু'দিনই পড়েছে। এ বার প্রথম দিন অর্থাৎ ১৩ নভেম্বর ছটের জন্য সার্বিক ছুটি দেওয়া হয়েছে। ওই দিন রাজ্য সরকারের সমস্ত অফিস, কর্পোরেশন, বোর্ড, সরকারি অধিগৃহীত প্রতিষ্ঠান, স্কুল-কলেজ ও শিক্ষা প্রতিষ্ঠান বন্ধ থাকবে। পরের দিন 'সেকশনাল হলিডে'। অর্থাৎ ছট পুজো আয়োজন বা অংশগ্রহণ করলে, তাঁরা ছুটি পাবেন।

সোমবার সন্ধ্যায় পোস্তা মার্চেন্টস অ্যাসোসিয়েশন আয়োজিত জগদ্ধাত্রী পুজো উপলক্ষে এক অনুষ্ঠানে যোগ দেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। সেখানে দু'দিনের ছুটির কথা জানিয়ে ছট পুজোর শুভেচ্ছা জানান তিনি। বলেন, ''পোস্তার এই পুজোয় আন্তরিকতা অনেক বেশি। চন্দননগর, চুঁচুড়াতেও জগদ্ধাত্রী পুজো হয়। কিন্তু পোস্তায় সব সম্প্রদায়ের মানুষ মিলে মিশে এই পুজো করেন। তাই এখানে আসতে বেশি ভাল লাগে।''

পোস্তা-বড়বাজার এলাকায় বিজেপির প্রভাব রয়েছে। সেকথা কার্যত স্বীকার করে নিয়েও মমতা বলেছেন, ''আপনারা বিজেপিকে মদত দিতেন। কিন্তু নোটবন্দির পর, সিবিআই কাণ্ডের পর আপনারা কি ভাবছেন না?  মুখে বলতে পারছেন না, কিন্তু মনে মনে ভাবছেন।''

বিজেপি-সিপিএম-কে এক পংক্তিতে বসিয়ে মমতার কটাক্ষ, ''ওরা ভোটের সময় আসে। হিন্দি ভাষীদের বলে, বিজেপি-কে ভোট দিন। কেন দেবে? হিন্দিভাষীদের  জন্য কী করেছ? পুজো, ব্যবসায়ীদের বৈঠক, সমস্যা নিয়ে কোনও দিন ভাবে না। কিন্তু আমরা ৩৬৫ দিন এদের সঙ্গে সম্পর্ক রেখে চলি।'' বিজেপির বিরুদ্ধে ধর্মীয় ভাবাবেগ নিয়ে রাজনীতির অভিযোগ তুলে মমতার তোপ, ধর্মের নামে দেশকে ভুল পথে চালিত করা হচ্ছে। তুলেছেন গুজরাত থেকে বিহারীদের তাড়ানোর প্রসঙ্গও।

পোস্তা-বড়বাজার এলাকা হিন্দি ভাষাভাষি এবং অবাঙালি সম্প্রদায়ের আধিক্য। মূলত ব্যবসায়ী সম্প্রদায়ের বাস। সেখানে দাঁড়িয়ে নোটবন্দি এবং জিএসটি চালু হওয়ায় ব্যবসায়ীদের ক্ষতির দিক তুলে ধরেছেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। অন্য দিকে, অবাঙালি ও হিন্দিভাষীদের পাশে থাকার বার্তা দিয়েছেন। লোকসভা ভোটের আগে কার্যত অবাঙালি ও হিন্দি ভাষাভাষী ভোটারদের কথা মাথায় রেখেই মমতার এই বক্তব্য বলে রাজনৈতিক শিবিরের ব্যাখ্যা।

অন্য দিকে এ দিনই কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ে একটি কর্মসূচির আয়োজন করে তৃণমূল ছাত্র পরিষদ। সেখানে ১০০ জন শিশু ও বৃদ্ধ-বৃদ্ধাকে বস্ত্র দান করা হয়। সংগঠনের রাজ্য সহ সভাপতি মণিশঙ্কর মণ্ডল বলেন, ''প্রথম বার এই ধরনের উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। উপাচার্য ও রেজিস্ট্রার-সহ অন্যান্য আধিকারিকরা দুঃস্থ ও গরিব শিশু, বৃদ্ধ-বৃদ্ধাদের হাতে বস্ত্র তুলে দিয়েছেন।''

ছটের জন্য কলকাতা পুলিশের তরফেও নিরাপত্তা বাড়ানো হয়েছে। গঙ্গার ঘাটগুলি তো বটেই, বিভিন্ন জলাশয়ে যেখানে ছট পুজো হয় এমন ১০৩টি ঘাটে নজরদারি বাড়িয়ে দেওয়া হয়েছে বলে জানিয়েছেন কলকাতা পুলিশের অতিরিক্ত নগরপাল (সদর) সুপ্রতিম সরকার। তিনি বলেন, ''দূষণ রোধে আদালতের নির্দেশ অনুযায়ী ব্যবস্থা নেওয়া হবে। আইন ভাঙলে কড়া পদক্ষেপ কড়া হবে। রবীন্দ্র সরোবরে রয়েছে আলাদা নিরাপত্তার বন্দোবস্ত। কলকাতার পাশাপশি জেলাগুলিতেও ঘাটগুলির উপর কড়া নজরদারি রয়েছে।
বাংলার রাজনীতি, বাংলার শিক্ষা, বাংলার অর্থনীতি, বাংলার সংস্কৃতি, বাংলার স্বাস্থ্য, বাংলার আবহাওয়া - পশ্চিমবঙ্গের সব টাটকা খবর আমাদের রাজ্য বিভাগে।