কেন্দ্রীয় হারে ডিএ দেওয়ার বিরুদ্ধে ফের জোর সওয়াল রাজ্যের


রাজ্য প্রশাসনিক ট্রাইবুনালে (স্যাট) আপাতত শেষ হল মহার্ঘ ভাতা (ডিএ) মামলার শুনানি। রাজ্য সরকারি কর্মীদেরও কেন্দ্রীয় হারে ডিএ দেওয়ার যে দাবি কর্মী সংগঠনগুলি তুলেছে, তার বিপক্ষে বৃহস্পতিবার ফের জোর সওয়াল করলেন রাজ্যের আইনজীবী। কেন্দ্র এবং রাজ্যের কর্মীদের চাকরির শর্ত বা দায়দায়িত্ব আলাদা, তাই এই হারে ডিএ দেওয়ার বাধ্যবাধকতা নেই। ট্রাইবুনালে এ দিন এমনই বলেছে রাজ্য সরকার। তবে স্যাটের বেঞ্চ সে যুক্তি মানতে রাজি হয়নি। নিজেদের বক্তব্যের সমর্থনে নথি জমা দিক সরকার— সরকারি আইনজীবীকে এমনই নির্দেশ দিয়েছে দুই সদস্যের বেঞ্চ।

হাইকোর্ট আগেই জানিয়ে দিয়েছিল, ডিএ সরকারের দয়ার দান নয়, কর্মীদের অধিকার। তবে কী হারে বা বছরে কত বার ডিএ দেওয়া হবে, সে বিষয়ে স্যাটকেই সিদ্ধান্ত নিতে হবে নেবে বলে হাইকোর্ট জানিয়েছিল। দু'মাসের মধ্যে মামলার নিষ্পত্তির নির্দেশও দিয়েছিল।

কলকাতা হাইকোর্টের এই রায়ের ফলে মামলা ফিরে যায় স্যাট-এ। বিচারপতি আর কে বাগ এবং সুবেশ দাসের বেঞ্চে বুধবার এবং বৃহস্পতিবার মামলাটির শুনানি হয়েছে। সেই শুনানির দ্বিতীয় দিনে রাজ্য সরকারের আইনজীবী অপূর্বলাল চৌধুরী জানিয়েছেন, কেন্দ্রীয় সরকারের হারে ডিএ দেওয়া রাজ্যের পক্ষে সম্ভব নয়। অপূর্বলাল চৌধুরীর যুক্তি, রাজ্য ও কেন্দ্রীয় সরকারি কর্মীদের নিয়োগের নিয়ম, চাকরির শর্ত এবং কাজের দায়বদ্ধতা এক রকম নয়। তাই একই হারে ডিএ দেওয়ার বাধ্যবাধকতা নেই।

সরকার পক্ষের আইনজীবীর দেওয়া এই যুক্তি খণ্ডন করে দেন বিচারপতি আর কে বাগ নিজেই। তিনি প্রশ্ন তোলেন— সচিবালয় এবং জেলা সদরে কাজ করা কর্মীদের মধ্যেও নিয়োগের নিয়ম, চাকরির শর্ত এবং কাজের দায়বদ্ধতা সংক্রান্ত পার্থক্য রয়েছে, তা হলে সচিবালয় এবং জেলা সদরের কর্মীরা একই হারে ডিএ পান  কী ভাবে?

সরকার পক্ষের আইনজীবীর আরও যুক্তি ছিল, কেন্দ্রের সঙ্গে অনেক রাজ্যের ডিএ-র হারেই ফারাক রয়েছে, কারণ সব রাজ্যের আর্থিক সঙ্গতি এক রকম নয়। এ রাজ্যেও অতটা আর্থিক সঙ্গতি নেই যে, কেন্দ্রের সমহারে ডিএ দেওয়া সম্ভব হবে। এ কথা শুনে মামলাকারী সংগঠনের কৌঁসুলি আমজাদ আলি প্রশ্ন তোলেন— সঙ্গতিই যদি না থাকে, তা হলে রাজ্য সরকার ইমামদের ভাতা বা পুজো কমিটিগুলিকে চাঁদা দিচ্ছে কী ভাবে?
পশ্চিমবঙ্গ সরকারের যে সব কর্মী দিল্লির বঙ্গভবনে বা চেন্নাইয়ের যুব আবাসে কর্মরত, তাঁরা কেন্দ্রীয় হারে ডিএ পান। কিন্তু রাজ্যে যাঁরা কাজ করছেন, তাঁরা পান না। কেন এই বৈষম্য, সে প্রশ্নও এ দিন ফের ওঠে। সরকার পক্ষের যুক্তি ছিল, নিজের ঘর-বাড়ি ছেড়ে অনেক দূরে চাকরি করতে যেতে হচ্ছে ওই কর্মীদের, তাঁদের খরচও বেশি, তাই তাঁদের ওই হারে ডিএ না দিলে চলবে না। রাজ্য সরকারি কর্মীরা সহজে দিল্লি বা চেন্নাইতে কাজ করতে যেতে রাজি হন না বলেও জানানো হয়। কিন্তু এ ক্ষেত্রেও পাল্টা প্রশ্নও ওঠে— যাঁরা অনেক দূরের জেলা থেকে কলকাতায় কাজ করতে আসেন, তাঁদের ডিএ কি বেশি?

কেন্দ্রীয় হারে ডিএ দিতে না পারার পক্ষে যে সব যুক্তি দেখিয়েছে রাজ্য, তার সমর্থনে এ দিন কিছু নথি চায় স্যাট। সরকার পক্ষের আইনজীবী ২৮ নভেম্বর পর্যন্ত সময় চান। কিন্তু স্যাটের তরফে নির্দেশ দেওয়া হয়, ২০ তারিখের মধ্যে নথি জমা দিতে হবে।

মামলাকারী সংগঠন কনফেডারেশনের তরফে সুবীর সাহা বলেন, ''এ দিনের শুনানিতেই স্যাটের মনোভাব কিছুটা বোঝা গিয়েছে। সরকারকে আর সময় দিতে রাজি নন তাঁরা। আমরা আশা করছি ডিসেম্বরের প্রথমার্ধেই ডিএ নিয়ে চূড়ান্ত রায় দিয়ে দেবে স্যাট।''

বাংলার রাজনীতি, বাংলার শিক্ষা, বাংলার অর্থনীতি, বাংলার সংস্কৃতি, বাংলার স্বাস্থ্য, বাংলার আবহাওয়া - পশ্চিমবঙ্গের সব টাটকা খবর আমাদের রাজ্য বিভাগে।