পুরুষদের অধিকার নিয়ে এবার পথে নামলেন মহিলারাও


রাজ্য বিদ্যুৎ দপ্তরের কর্মী সঞ্জীব কুমার‌। বাড়ি মেদিনীপুরের পিংলায়। দেখাশোনা করে ২০১২ সালে বিয়ে হয়েছিল। ২০১৪ সালে স্ত্রী তাঁর বিরুদ্ধে নির্যাতনের অভিযোগে মামলা দায়ের করেন। সঞ্জীবের দাবি, তিনি নির্দোষ। তাঁর ৫ বছরের এক ছেলে রয়েছে। ছেলের সঙ্গে দেখা করতে চাইলেও পারেন না। আশঙ্কা, ফের মিথ্যা মামলায় ফাঁসিয়ে দেওয়া হতে পারে। আগের মামলাই চলছে।

হাওড়ার মন্দিরতলার বাসিন্দা গাড়িচালক তন্ময় বসু (‌নাম পরিবর্তিত)–র‌ সঙ্গে এক যুবতীর প্রণয়ের সম্পর্ক ছিল। তাঁদের বিয়ে হয় ২০০৬–এ। বছর কয়েক পর স্ত্রী যোগ দেন বেসরকারি ব্যাঙ্কে। তন্ময়ের দাবি, চাকরিতে যোগ দেওয়ার পর স্ত্রী বদলে গেছেন। এর জন্য তিনি দায়ী করছেন শ্বশুর–শাশুড়িকে। কারণ, স্ত্রী উপার্জিত অর্থ দিয়ে দেন তাঁর মা–বাবাকে। নিজে কাজ করলেও স্বামীর কাছে নিয়মিত টাকা চাইতেন। তবে শ্বশুরবাড়ির সদস্যরা কিছু বলেন না। ২০১৫ সালে তাঁর বিরুদ্ধে বধূ নির্যাতনের মামলা দায়ের হয়। বছর চারেকের মেয়ের সঙ্গে দেখা করার উপায় নেই।

অবসরপ্রাপ্ত সেনাকর্মী সুরেশ রায় (‌পরিচয় পরিবর্তিত)‌ বিবাহবিচ্ছিন্না শতাব্দী দেবীকে বিয়ে করেন ১৯৯৮ সালে। স্ত্রী ঠিক করেন ব্যবসা করবেন। তাই স্বামীর কাছ থেকে কয়েক দফায় প্রায় ১০ লক্ষ টাকা নিয়েছিলেন। কিন্তু ব্যবসায় সফল হতে পারেননি। এরপর বছর কয়েক আগে তারা আলাদা থাকতে শুরু করেন। ২০১৪ সালে শতাব্দীর পরিবারের সদস্যদের কয়েকজন তাঁর ওপর চড়াও হন বলে অভিযোগ সুরেশের। সেই মামলা চলছে। অন্যদিকে, ২০১৭ সালে স্ত্রী অভিযোগ করেন, স্বামী তাঁর ছেলেকে মারধর করেছেন। সুরেশের বিরুদ্ধে এখন পাল্টা মামলা চলছে।

আন্তর্জাতিক পুরুষ দিবসে এমনই বিভিন্ন নির্যাতিত পুরুষরা নিজেদের কথা জানালেন। বিচার চেয়ে সোমবার মিছিল করলেন। তাঁদের সঙ্গে পা মেলালেন অনেক নারীও। মৌলালি থেকে কলকাতা প্রেস ক্লাব পর্যন্ত। সেখানে তাঁরা বিক্ষোভও দেখান। আন্দোলনকারীদের দাবি, আইনের অপব্যবহার করা হচ্ছে। এগুলি বন্ধ করতে হবে। এ‌ই কর্মসূচির ডাক দিয়েছিল অভিযান ওয়েলফেয়ার অ্যান্ড চ্যারিটেবল ট্রাস্ট। ছিলেন প্রতিষ্ঠাতা এবং চেয়ারম্যান গৌরব রায়, মুখপাত্র নন্দিনী ভট্টাচার্য। নন্দিনী বলেন, '‌পুরুষরা নিজেদের অধিকার নিয়ে সচেতন নন। তাঁরা নির্যাতিত হলেও বেশিরভাগ ক্ষেত্রে অভিযোগ দায়ের করেন না। বলতে লজ্জা পান, স্ত্রী, শ্বশুর, শাশুড়ির হাতে মার খেয়েছেন, তাঁদের হাতে নির্যাতিত হয়েছেন। এই মনোভাব না বদলালে কিছু হবে না। লিঙ্গ–নিরপেক্ষ আইন দরকার। পুরুষ কমিশন দরকার। যেখানে পুরুষরা নিজেদের কথা বলতে পারবেন।'‌ অন্যদিকে, একই দাবিতে পথে নেমেছিল '‌অনুভব–ফাইট ফর জাস্টিস'‌ নামে আর একটি স্বেচ্ছাসেবী সংস্থাও।