দাউদ, হাফিজ সইদের পাপের দায় নিতে অস্বীকার ইমরানের


ইসলামাবাদ : সন্ত্রাসে মদতদাতা রাষ্ট্র হিসেবেই দুনিয়ার কাছে পরিচিত পাকিস্তান। সন্ত্রাসবাদী রাষ্ট্র বলে অধিকাংশ সাহায্যও আটকে দিয়েছেন মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প। এবার সেই তকমা থেকে চোখ ঘোরাতে নতুন কৌশল নিলেন পাকিস্তানের প্রধানমন্ত্রী ইমরান খান। এক টেলিভিশন সাক্ষাৎকারে ইমরান বুঝিয়ে দিয়েছেন, দাউদ ইব্রাহিম বা হাফিজ সইদের মতো ভারতের 'মোস্ট ওয়ান্টেড'দের জন্য তাঁকে শুধু শুধু কাঠগড়ায় দাঁড় করাচ্ছে নয়াদিল্লি। সেই সঙ্গে ইমরানের কৌশলী মন্তব্য, অতীতের পাপের দায় তাঁর নয়।

তাঁর ক্রিকেট মস্তিষ্ক নিয়ে কোনওদিন প্রশ্ন উঠেনি। রাজনীতির ময়দানে সেই ২২ গজের বুদ্ধিই এখন কাজে লাগাতে চাইছেন ইমরান খান। তিনি জানেন, দুনিয়ার কাছে নিজেদের হারানো মর্যাদা ফেরাতে গেলে ভারতের সঙ্গে সুসম্পর্ক জরুরি। তাই ভারতের সঙ্গে আলোচনার রাস্তা খুলতে মরিয়া হয়ে পড়েছেন ইমরান। সেই কারণে দাউদ ইব্রাহিম বা হাফিজ সইদের দায় ঝেড়ে ফেলছেন। আবার আলোচনার টেবিলে কাশ্মীর সমস্যার সমাধানের কথাও বলছেন।

দাউদ ইব্রাহিম ও হাফিজ সইদ। একজন ১৯৯৩ সালের মুম্বই বিস্ফোরণ মামলার মূল চক্রী। আর অন্যজন ২০০৮ সালের মুম্বই হামলার প্রধান অভিযুক্ত। ভারত-পাক টেনশনের কেন্দ্রে বারবারই উঠে এসেছে এই দুই জঙ্গি নেতার নাম। রাষ্ট্রসঙ্ঘের আন্তর্জাতিক সন্ত্রাসবাদী তালিকাতেও রয়েছে এই দুই 'মোস্ট ওয়ান্টেড'। অথচ দু'জনেই বহাল তবিয়তে পাকিস্তানের মাটিতে বসে। সেখান থেকেই প্রতিনিয়ত ভারতের মাটিকে রক্তাক্ত করার ষড়যন্ত্র করে চলেছে তারা। অথচ দু'জনকেই হেফাজতে নেওয়ার যে দাবি নয়াদিল্লি করেছে, তাতে বিশেষ রা কাড়েনি ইসলামাবাদ। আর তা ইমরানের ক্ষেত্রেও প্রযোজ্য। সরকারে আসার পর সন্ত্রাসের বিরুদ্ধে গ্রহণযোগ্য পদক্ষেপ নেওয়া তো দূর অস্ত, এবার দাউদ-হাফিজ সইদদের মতো আন্তর্জাতিক দুষ্কৃতীদের কৃতকর্মের দায় তঁার নয় বলেই দায় সারছেন তিনি। যেখানে দাউদের করাচির ঠিকানা আন্তর্জাতিক দুনিয়ার কারও আর অজানা নয়। এর পাশাপাশি রয়েছে হাফিজ সইদ। ২৬/১১ অর্থাৎ মুম্বই হানার পরে চাপের মুখে হাফিজ সইদকে কারান্তরালে পাঠিয়েছিল তৎকালীন পাক সরকার। কিন্তু আদালতের নির্দেশে মুক্ত হয়ে যায় ওই ভয়ঙ্কর সন্ত্রাসবাদী। সেই পরিস্থিতিরও বদল হয়নি। বরং ইমরান এখন নিজের ভাবমূর্তি সাফসুতরো রাখতে দাবি করছেন, ইস্যুগুলি উত্তরাধিকার সূত্রে পেয়েছি। অতীতের দায় আমার নয়।

এমনকী পাকিস্তানের সেনাবাহিনীর প্রত্যক্ষ মদতে কাশ্মীর উপত্যকায় জঙ্গি ঢোকানো নিয়েও অভিযোগ মানতে চাননি ইমরান। বলেছেন, সন্ত্রাসবাদীদের কেন আমরা পাক ভূখণ্ড ব্যবহার করতে দেব? তাতে আমাদের কী স্বার্থ আছে? আসলে ইমরান নিজেকে শান্তির দূত হিসেবে দেখাতে চাইছেন। তাঁর ভাষায়, সংসদে হামলার পর আমি দেখেছিলাম দু'দেশের সেনাবাহিনীকে কাছাকাছি আসতে। কিন্তু তারপর মুম্বই হামলার ঘটনা ঘটল। দুই বাহিনী আবার আগের অবস্থানে ফিরে গেল।

দাউদ ও হাফিজের দায় ঝেড়ে ফেলতে মরিয়া ইমরান। কিন্তু ঝেড়ে ফেললেই কি পুরোপুরি দায়মুক্ত হওয়া যায়? ভিতরে ও বাইরে থেকে লাগাতার কাশ্মীরের বুকে ছুরি মারছে পাকিস্তান। প্রতিদিন রক্তাক্ত হচ্ছে উপত্যকা। বরফের আড়ালে সীমান্ত পেরিয়ে ভারতে ঢোকার জন্য ওঁত পেতে রয়েছে পাক মদতপুষ্ট জঙ্গিরা। এখনও বিনা প্ররোচনায় সীমান্তে গোলাগুলি ছুঁড়ে যুদ্ধবিরতি চুক্তি লঙ্ঘন করছে পাকিস্তান। নিশ্চুপ ইমরান। এই কারণেই তাঁর 'আমন কি খোয়াইশ'-এর ছদ্ম 'ইনস্যুইং'-এ বিভ্রান্ত হচ্ছে না নয়াদিল্লি।