সস্তায় ফ্ল্যাট দিতে ঋণ নিচ্ছেন মমতা


মাথার উপর একটা পাকা ছাদ-নিম্ন ও মধ্যবিত্ত মানুষের বহুদিনের স্বপ্ন। এ বার সেই স্বপ্নকে সফল করতে বিদেশি ঋণ নিতে চলেছেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। সস্তায় ফ্ল্যাট দিতে এশিয়ান ডেভেলপমেন্ট ব্যাঙ্ক থেকে প্রায় তিন হাজার কোটি টাকা ঋণ চাইছে নবান্ন। 'নিজশ্রী' প্রকল্পে এক ও দুই বেডরুমের ৫০ হাজার ফ্ল্যাট বানানোর তাগিদেই এই প্রথম জন-আবাসন খাতে বিদেশ থেকে ঋণ নিচ্ছে রাজ্য সরকার। আবাসন দপ্তরের উদ্যোগেই এই প্রকল্প হতে চলেছে।

এডিবির মতো একটি আন্তর্জাতিক সংস্থা থেকে এই ধরনের অনুদান নিতে কেন্দ্রের অনুমোদন প্রয়োজন। তাই, এই সংক্রান্ত প্রস্তাব কেন্দ্রীয় আবাসন ও নগরোন্নয়ন মন্ত্রকে পাঠাচ্ছে নবান্ন। কেন্দ্রীয় মন্ত্রকের অনুমোদন মেলার এক মাসের মধ্যেই যাবতীয় কাগজপত্র এডিবিতে পাঠাবে রাজ্য সরকার।

নবান্ন সূত্রে খবর, নিম্ন ও মধ্য আয়ের মানুষের জন্য আবাসনের সংস্থানে মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় নিজশ্রী প্রকল্পের সফল ও দ্রুত রূপায়ণে অগ্রাধিকার দিয়েছেন। রাজ্য সরকার ৩৭৮ বর্গ ফুট আয়তনের এক ও ৫৫৯ বর্গফুট আয়তেনর দুই বেডরুমের ফ্ল্যাটের দাম ধার্য করেছে যথাক্রমে ৭ লাখ ২০ হাজার টাকা ও ৯ লাখ ২৮ হাজার টাকা। শুধু শহরে নয়, গ্রামাঞ্চলেও সরকার এই বহুতলগুলি বানাবে। যাঁর নিজের ও পরিবারের কারও নামে পাকা বাড়ি আছে, তিনি এই সুযোগ পাবেন না। 

এই বিষয়ে ৯ অক্টোবর রাজ্য মন্ত্রিসভার বৈঠকের নথিতে বলা হয়েছে, 'সাশ্রয়ী মূল্যে মালিকানা ভিত্তিক 'নিজশ্রী' প্রকল্পে নিম্ন ও মধ্য আয়ভুক্ত শ্রেণির মানুষের জন্য পঞ্চাশ হাজার ফ্ল্যাট নির্মাণের নিমিত্ত এডিবি থেকে ২৯১০ কোটি টাকা সহায়তা প্রাপ্তির প্রস্তাব অনুমোদিত হল।' এর আগে রাজ্যের অর্থদপ্তরও এই প্রস্তাবনায় অনুমোদন দিয়েছে। জনস্বার্থে সরকার এই ফ্ল্যাটগুলির বিক্রয়মূল্যে আবাসনে ভিতরের রাস্তা, বাইন্ডারি ওয়াল, বাইরের ও ক্যাম্পাসের ভিতরের বিদ্যুদয়ন, পয়ঃপ্রণালী ও পানীয় জল সরবরাহে মতো পরিকাঠামোগত খরচ অন্তর্ভুক্ত করছে না। আবার, এক বেডরুমের ফ্ল্যাটের ক্রেতাদের ঋণের ক্ষেত্রে ৪০ শতাংশ ও দুই বেডরুমের ক্রেতাদের ২০ শতাংশ ভর্তুকি মিলবে। টাকার মূল্যে এই ভর্তুকির অঙ্ক যথাক্রমে ২ লাখ ৩০ হাজার ও ১ লাখ ৪৮ হাজার টাকা। এডিবি থেকে নিজশ্রীর উপাদানগত ও পরিকাঠামো খাতে ১৩৬০ কোটি টাকা, ঋণে ভর্তুকি বাবদ ১০৪২ কোটি ও অন্যান্য প্রশাসনিক খরচ বাবদ ৫০৮ কোটি টাকা সহায়তা হিসাবে নেওয়া হবে। প্রথম দুই দফায় ১০০০ কোটি টাকা ও চূড়ান্ত দফায় ৯১০ কোটি টাকা চাওয়া হবে। 

উল্লেখ্য, ২০১৩-এর 'সোশিও ইকনমিক কাস্ট সেনশাস' অনুযায়ী দেশের গ্রামগুলিতে যাঁরা এক বা দুই ঘরের কাঁচা দেওয়াল ও ছাদের বাড়িতে বাস করেন, তাঁদের 'হোমলেস' বা গৃহহীন হিসাবে ধরা হয়। ওই সমীক্ষায় পশ্চিমবঙ্গের গ্রামগুলিতে ৩৫ লাখ ৭ হাজার ৮৩৬ টি এই ধরনের পরিবারের হদিস মিলেছে। সরকারি জমিতেই 'জি প্লাস থ্রি' কাঠামোর বহুতলে অন্তত ১৬ টি করে ফ্ল্যাট থাকবে। সাধারণ মানুষের কথা মাথায় রেখে ওই জমির দাম ক্রেতাদের ক্ষেত্রে ভর্তুকি হিসাবেই ধার্য হবে।