বেশি সোশ্যাল মিডিয়া মানে ক্রমে আরও হতাশ, নিঃসঙ্গ


আপনি কি দিনের অনেকটা সময় ফেসবুক, স্ন্যাপচ্যাট, ইনস্টাগ্রাম-এর মতো সোশ্যাল নেটওয়ার্কিং সাইটের জন্য ব্যয় করেন? উত্তর যদি হ্যাঁ হয়, তা হলে সাবধান! কারণ, বেশি সোশ্যাল নেটওয়ার্কিং সাইট ব্যবহারে আপনার ব্যক্তিগত জীবনে নেমে আসতে পারে হতাশা, নিঃসঙ্গতা, উদ্বেগের মতো মানসিক সমস্যা। পেনসিলভ্যানিয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের মনস্তত্ত্ব গবেষকদের এক সমীক্ষায় এই ছবিটাই উঠে এসেছে। 

এই বিষয় নিয়ে গত কয়েক বছর ধরেই আলোচনা চলছে বটে, তবে এই প্রথম কোনও সমীক্ষায় উঠে এল যে নেতিবাচক ওই সব মানসিক অনুভূতির সঙ্গে অতিরিক্ত সোশ্যাল মিডিয়া ব্যবহারের সম্পর্ক এতটাই সরাসরি এবং নিবিড়। পেনসিলভ্যানিয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের মনস্তত্ত্ব বিভাগের অ্যাসোসিয়েট ডিরেক্টর-ক্লিনিক্যাল ট্রেনিং মেলিসা হান্ট ও তাঁর সহকর্মীরা ব্যক্তি মনস্তত্ত্বের উপর সোশ্যাল মিডিয়ার প্রভাব জানতে একটি সমীক্ষা করেন। সেখানে প্রতিদিন সোশ্যাল মিডিয়া ব্যবহার করেন এমন ১৪৩ জন ছাত্র-ছাত্রীকে বেছে নিয়ে তাঁদের মানসিক অবস্থার পরিমাপ করা হয়। এ বার ওই ছাত্রছাত্রীদের দু'ভাগে ভাগ করে এক ভাগে রাখা হয় তাঁদের, যাঁরা দিনে সর্বোচ্চ ১০ মিনিট সোশ্যাল মিডিয়ায় থাকবেন। অন্য ভাগের ছেলেমেয়েদের বলা হয়, তাঁরা রোজ ইচ্ছামতো ফেসবুক, স্ন্যাপচ্যাট, ইনস্টাগ্রাম ব্যবহার করতে পারেন। তিন সপ্তাহ পর দেখা যায়, যাঁরা দিনে সর্বোচ্চ ১০ মিনিট সোশ্যাল মিডিয়াতে ছিলেন, আগের থেকে তাঁদের হতাশা, নিঃসঙ্গতা এবং উদ্বেগ অনেকটাই কমে গিয়েছে। যাঁরা সোশ্যাল মিডিয়াতে কাটিয়েছেন বেশি সময়, তাঁদের মনে হতাশা, উদ্বেগের পরিমাণ আগের চেয়ে কমেনি।

এই সমীক্ষাতেই প্রমাণিত, মাত্রাতিরিক্ত ফেসবুক, স্ন্যাপচ্যাট, ইনস্টাগ্রাম ব্যবহার মানুষের ভাল থাকার মাত্রা ক্রমেই কমাচ্ছে। গবেষকদের মতে, দিনে সর্বোচ্চ ৩০ মিনিট সোশ্যাল মিডিয়ায় উঁকিঝুঁকি আপনার মানসিক স্বাস্থ্যের উন্নতি ঘটাবে। তার থেকে বেশি সময় থাকলেই হিতে বিপরীত। হান্ট-এর কথায়, 'আমাদের সমীক্ষা অত্যন্ত সুসংহত হওয়ায় ঠিকঠাক ছবিটা উঠে এসেছে। যদি আপনি সোশ্যাল মিডিয়া কম ব্যবহার করেন, তা হলে আপনার ব্যক্তিজীবনে হতাশা ও নিঃসঙ্গতা কমতে বাধ্য।' কিন্তু, সোশ্যাল মিডিয়ার অতিরিক্ত ব্যবহার ব্যক্তির জীবনে হতাশা, নিঃসঙ্গতা, মানসিক ক্লান্তি নিয়ে আসে কেন? হান্ট-এর উত্তর, 'সোশ্যাল মিডিয়াতে ব্যবহারকারীরা নিজেদের মধ্যে প্রভূত পরিমাণে বিভিন্ন সামাজিক তুলনা টানেন। আর যখনই আপনি মনে করবেন অন্য কারও জীবন আপনার থেকে অনেক বেশি স্বচ্ছন্দ, মসৃণ, সে ক্ষেত্রে হতাশা আসতে বাধ্য।' এই সমীক্ষা মনস্তত্ত্ববিদদের খুবই সাহায্য করবে বলেই মনে করেন পিটস্ স্কুলস্ অফ দ্য হেল্থ সায়েন্সেস-এর অ্যাসিস্ট্যান্ট ভাইস-চ্যান্সেলর ব্রায়ান প্রাইম্যাক। তাঁর বক্তব্য, 'মনোবিদেরা যখন কারও কাউন্সেলিং করবেন, তখন হতাশা, নিঃসঙ্গতা, উদ্বেগের সঙ্গে সোশ্যাল মিডিয়ার এই জোরালো সম্পর্কের তথ্যটা খুবই কাজে আসবে। তাঁরা যদি দেখেন, রোগী দিনে অনেকটা সময় সোশ্যাল মিডিয়াতে কাটান, সে ক্ষেত্রে তাঁরা তা কমানোর দাওয়াই দেবেন।'