লক্ষ টাকা ফেরাতে নির্দেশ দিল ক্রেতা সুরক্ষা কোর্ট


টাক মাথা ভরে যাবে চুলে। বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকরা হেয়ার ট্রান্সপ্ল্যান্টেশনের ব্যবস্থা করে দেবেন। সেটা শেষ হলে কয়েকটা বিশেষ ওষুধ খেতে হবে। তা হলেই বীরেন্দ্র সেওয়াগ থেকে হর্ষ ভোগলের মতো আপনিও পাবেন মাথা ভরা চুল।সেই বিজ্ঞাপন চোখে পড়েছিল ঢাকুরিয়ার আশিস চৌধুরীর। সঙ্গে সঙ্গে ওই বেসরকারি সংস্থায় যোগাযোগ করেছিলেন তিনি। সংস্থার পেশাদার বিশেষজ্ঞরা গোটা প্রক্রিয়াটা ভালো ভাবে বুঝিয়েও দিয়েছিলেন। চুল গজানোর জন্য অগ্রিম টাকা মিটিয়ে দেন আশিস। কার্ড ও নগদে সব মিলিয়ে ১ লক্ষ ১৮ হাজার টাকা। 

তবে শেষমেশ পারিবারিক চিকিৎসকের পরামর্শে আর অপারেশনের পথে হাঁটেননি তিনি। তা হলে টাকা ফেরাবে কে? চুল গজানোর জন্য যে সংস্থায় টাকা দিয়েছিলেন, তারা টাকা ফেরাতে চাইছিল না। কলকাতা জেলা ক্রেতাসুরক্ষা আদালত অবিলম্বে আশিসকে ওই টাকা ফেরানোর নির্দেশ দিয়েছে। শশিকলা বসু, বলাকা চট্টোপাধ্যায় ও অয়ন সিংহের নেতৃত্বাধীন বেঞ্চ জানিয়েছে, একমাসের মধ্যে ওই টাকা ফেরাতে হবে সংস্থাকে। তা না-হলে ওই টাকার উপর ৯ শতাংশ সুদ গুনতে হবে।আদালত সূত্রের খবর, ঘটনার সূত্রপাত গত বছর সেপ্টেম্বরে। গড়িয়াহাটের ওই সংস্থার আধিকারিকরা আশিসকে জানান, হেয়ার ট্রান্সপ্ল্যান্টের পরও বেশ কয়েক মাস ধরে হরমোনাল ওষুধ খেতে হবে। তাঁর পারিবারিক চিকিৎসক আশিসকে বলেন, ওই ওষুধপত্র নিয়মিত খেলে তাঁর শরীরে নানারকম পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া দেখা দিতে পারে। এর আগেও টাকে চুল গজানোর চিকিৎসা করাতে গিয়ে অসুস্থ হয়ে পড়ার ঘটনা ঘটেছে। 

তেমন একজন ভুক্তভোগী ক্রেতাসুরক্ষা আদালতেরও দ্বারস্থ হয়েছিলেন। সেক্ষেত্রে চিকিৎসা করাতে গিয়ে রোগী উচ্চ রক্তচাপ-সহ আরও নানা রকম পার্শ্ব প্রতিক্রিয়ার শিকার হন। আদালত অভিযুক্ত সংস্থাকে ক্ষতিপূরণের নির্দেশ দেয়।আশিস অবশ্য সে ভুল করেননি। চিকিৎসা করানোর আগে তিনি চিকিৎসকের পরামর্শ নিয়েছিলেন। তবে টাকা ফেরাতে কোনও ভাবেই রাজি ছিল না সংস্থাটি। সংস্থার দাবি ছিল, যে টাকা আশিস দিয়েছেন, তা ফেরতযোগ্য নয়। পরিবর্তে তিনি ওই সংস্থা থেকে অন্য কোনও পরিষেবা নিতে পারেন। যদিও তাতে নারাজ আশিস। টাকা ফেরত চেয়ে আইনি চিঠিও দেন তিনি। সংস্থাটি টাকা না-ফেরানোয় আদালতের দ্বারস্থ হন তিনি।

জেলা ক্রেতাসুরক্ষা আদালতে আশিসের তরফে জানানো হয়, তিনি যখন পরিষেবা নেননি তখন টাকা গুনবেন কেন? ওই টাকা তাঁকে ফেরাতে হবে। শুধু তা-ই নয়, এতদিন টাকা না-দিয়ে তাঁকে মানসিক ভাবে হেনস্থার জন্য আরও ৫০ হাজার টাকা ক্ষতিপূরণ দাবি করেন আশিস। আদালতে সংস্থার তরফে বলা হয়, ওই টাকা ফেরতযোগ্য নয়। তিনি টাকা দিয়ে দেওয়ায় অন্য যে কোনও পরিষেবা নিতে পারেন। দু'পক্ষের সওয়াল-জবাব শেষে আদালত জানিয়ে দেয়, আশিস যে ওই সংস্থায় টাকা দিয়েছেন, তার পর্যাপ্ত প্রমাণ রয়েছে। কোনও নথিতে অবশ্য এটা পরিষ্কার নয় ওই অপারেশনটি কবে হওয়ার কথা। আশিস যখন কোনও পরিষেবা নেননি, তখন টাকা ফেরাতে হবে সংস্থাকে। যদিও মানসিক ভাবে হেনস্থার জন্য যে ক্ষতিপূরণ দাবি করেছিলেন আশিস, তা মঞ্জুর করেনি আদালত।