এ ভাবেও ফিরে আসা যায়!


মণিপুরের প্রত্যন্ত গ্রামের পাহাড়ি জমিতে বাবা আর মায়ের সঙ্গে চাষ করতে করতেই বিশ্বজয়ের স্বপ্ন দেখেছিল ছোট্ট মেয়েটা। অনুন্নয়ন, পিছিয়ে পড়া, জাতিদাঙ্গা আর গোষ্ঠীসংঘর্ষে দীর্ণ মণিপুরে খেলার মাঠই যে নিজেকে প্রমাণ করার একমাত্র জায়গা, এইটুকু বুঝে নিয়েছিল সে। যদিও সেই চলার পথে ছিল একের পর এক কাঁটা। প্রথম কাঁটা লুকনো ছিল নিজের পরিবারেই। বক্সিং করলে মেয়ের বিয়ের জন্য ছেলে পাওয়া যাবে না, তাই আপত্তি তুলেছিলেন বাবা। অগত্যা  লুকিয়ে লুকিয়েই চলত নিজের স্বপ্নের কাছে পৌঁছনোর অনুশীলন। আসলে চলার পথের কণ্টকাকীর্ণ সেই রাস্তায় যতবার রক্তাক্ত হয়েছে মেয়েটা, যতটা রক্তক্ষরণ হয়েছে তার, বক্সিং রিংয়ের ভিতর ঠিক ততটাই ক্ষিপ্র হয়ে উঠত সে। প্রতিটা বাধা কোথাও রাগ হয়ে আছড়ে পড়ত বিপক্ষের ওপর। আর আরও শক্তিশালী হয়ে স্বপ্নের আরও কাছে পৌঁছতেন মেরি কম। সেই লড়াইয়ের ফসলই মেয়েটা ঘরে তুলেছিল মাত্র ১৯ বছর বয়সে বিশ্ব চ্যাম্পিয়ন হয়ে।

২০০২ সালে প্রথম বারের জন্য বিশ্ব চ্যাম্পিয়ন। ২০১০ সালের মধ্যে আরও চার বার। বিশ্বের দরবারে ভারতের পতাকা বয়ে নিয়ে যেতে নিরন্তর দৌড়ে চলেছিলেন ম্যাগনিফিসেন্ট মেরি। সেই দৌড়টা যেন কিছুটা থেমে গিয়েছিল ২০১২ সালে লন্ডন অলিম্পিক্সে ব্রোঞ্জ জেতার পর। সে দিনের কিশোরী যেন কোথাও হয়ে উঠেছিলেন বছর পঁয়ত্রিশের তরুণী। হয়ে উঠেছিলেন তিন সন্তানের জননী। অনেকেই তাই ফেলে দিয়েছিলেন বাতিলের রাস্তায়।

কিন্তু তাঁরা ভুলে গিয়েছিলেন অসম্ভবকে সম্ভব করার নামই হল মেরি কম। যেখানে প্রতিকূলতা, সেখানেই সাফল্যের গন্ধ খুঁজে পান মেরি কম। তাই ফের ফিরে আসা বক্সিং রিং-এ। আর আরও একবার বিশ্বের দরবারে ভারতের পতাকা জড়িয়ে কান্নায় ভেঙে পড়তে দেখা গেল মেরি কমকে। এই নিয়ে ওয়ার্ল্ড বক্সিং চ্যাম্পিয়নশিপে ছ'বারের জন্য সোনা জিতলেন ম্যাগনিফিসেন্ট মেরি কম।

তাঁর এই প্রাপ্তি আজ সারা দেশের। ভারতবর্ষের পিছিয়ে পড়া, না খেতে পাওয়া, বঞ্চিত, শোষিত কোটি কোটি মানুষের কাছে মেরি কম মানেই একটা অনুপ্রেরণা,একটা বাঁচার আশা, একটা লড়াই। সেই লড়াই সমস্ত বাধা অগ্রাহ্য করে এগিয়ে যাওয়ার লড়াই। ধর্মীয় সঙ্কীর্ণতা, উগ্র জাতীয়তাবাদ, হিংসা, গণপিটুনি, ধর্ষণ, মন্দির-মসজিদ দ্বন্দ্বের আঁধার ছাপিয়ে ভারতের আকাশে উজ্জ্বলতম জোতিষ্ক আজ ম্যাগনিফিসেন্ট মেরিই। মেরির সেই অসামান্য লড়াইকে তাই জানাই অভিনন্দন আর শতকোটি কুর্নিশ।