বোনের সঙ্গে সম্পর্ক কেন? কিশোরকে খুন করল দাদা


বোনের সঙ্গে বন্ধুর সম্পর্কটা মেনে নিতে পারেনি সে। তাই 'শাস্তি' দিতে মাঠে ডেকে নিয়ে গিয়ে বছর পনেরোর ওই কিশোর-প্রেমিককে কুপিয়ে খুন করল মেয়েটির দাদা। পুলিশের এমনই অনুমান।

ঘটনাস্থল ফের সুতির আহিরণ। ফল্গু নদীর ধারে মঙ্গলবার বিকেলে, বিশ্বজিৎ মন্ডল (১৫) নামে ওই কিশোরের ক্ষতবিক্ষত দেহ মেলে। পুলিশ রাতেই খুনের অভিযোগে বিশ্বজিতের বন্ধু সৌমেন প্রামাণিককে গ্রেফতার করেছে। আটক করা হয়েছে তার বাবা গৌতম প্রামাণিককেও আটক করেছে পুলিশ।

বুধবার ধৃত সৌমেনকে জঙ্গিপুর মহকুমা আদালতে হাজির করানো হলে বিচারক তাকে সাত দিন পুলিশ হেফাজতে রাখার নির্দেশ দিয়েছেন।

বিশ্বজিতের বাবা অজয় মন্ডল কাজ করেন এক বিড়ি কারখানায়। অন্য সময়ে নিজেরই কেনা টোটো এলাকায় চালান। পড়াশুনো ছেড়ে ইদানী বাবার সেই টোটোই  চালাচ্ছিল বিশ্বজিৎ। বয়সে বছর পাঁচেকের বড় সৌমেনের পরিবার তাঁদেরই প্রতিবেশী। যাত্রীবাহী ম্যাজিক গাড়ির চালক সে। দুই পরিবারের মধ্যে সখ্যও বেশ কিছু দিনের।

সোমবার সন্ধ্যে নাগাদ বাড়িতে  টোটো রেখে দোকান থেকে ময়দা কিনতে বেরিয়েছিল বিশ্বজিৎ। মা শ্যামলী মণ্ডল জানান, ফিরতে দেরি দেখে ছেলেকে ফোন করলে সে জানিয়েছিল সৌমেনের সঙ্গেই রয়েছে সে। রাত বাড়তে থাকে, ছেলে আর ফেরেনি। মঙ্গলবার সকালেও বাড়ি না ফেরায় খোঁজ খবর শুরু হয়। দুপুর পর্যন্ত খোঁজ না মেলায় প্রথমে আহিরন ফাঁড়িতে, পরে সুতি থানায় গিয়ে নিখোঁজ ডায়েরিও করা হয়। বিকেল নাগাদ পরিবার জানতে পারে বাড়ি থেকে খানিক দূরে ফল্গু নদীর ধারে রক্ত পড়ে রয়েছে। তার কিছু দূরে মেলে এক পাটি চটিও। কয়েক হাত পরেই নজরে পড়ে নদীর পাশে ক্ষতবিক্ষত অবস্থায় পড়ে আছে বিশ্বজিতের দেহ। 

খবর পেয়েই আহিরণ ফাঁড়ি থেকে পুলিশ যায় ঘটনাস্থলে। রাত পর্যন্ত বন্ধু সৌমেনের সঙ্গেই ছিল সে। স্বভাবতই বিশ্বজিতের পরিবার ও পুলিশের সন্দেহ গিয়ে পড়ে সৌমেনের উপরই। মৃতদেহ উদ্ধারের সময় বাড়ির পাশেই অভিযুক্ত সৌমেনকেও পেয়ে য়ায় পুলিশ। সঙ্গে সঙ্গেই তাকে গ্রেফতার করা হয়।

বিশ্বজিতের দাদু রামফল মন্ডল বলেন, ''দু'জনের মধ্যে বন্ধুত্ব এমনই ছিল যে, কাজ না থাকলে সৌমেন ও বিশ্বজিতের একসঙ্গেই বসা ওঠা, আড্ডা সবই চলত তাদের মধ্যে। সোমবারও রাত দশটা পর্যন্ত যতবারই ফোন করেছি ততবারই বিশ্বজিৎ জানিয়েছে সৌমেনের সঙ্গে আছে।''

একেবারে হরিহর আত্মা। সেই ছেলেই যে তার বোনের সঙ্গে সম্পর্ক রয়েছে বলে এ ভাবে কাউকে কুপিয়ে খুন করতে পারে, ভাবতেই পারছেন না মণ্ডল পরিবার।

সৌমেনের ছোট বোন এলাকারই এক স্কুলে অষ্টম শ্রেণিতে পড়ে। তাদের বাড়িতে যাতায়াতের সূত্রে বিশ্বজিতের সঙ্গে তার সম্পর্কের কথাও জানত বাড়ির লোক। অজয় বলছেন, ''তা বলে এমন করে খুন করা যায়!''

পুলিশের সন্দেহ এই খুনের ঘটনায়, সৌমেন একা নয়, জড়িত রয়েছে আরও কয়েকজন। তাই সৌমেনের বাবাকেও আটক করে জেরা করা হচ্ছে। জঙ্গিপুরের এসডিপিও প্রসেনজিৎ বন্দ্যোপাধ্যায় বলেন, ''ধৃত সৌমেনের বিরুদ্ধে ৩০২ ও ২০১ ধারায় খুন ও প্রমাণ লোপাটের চেষ্টার অভিযোগ আনা হয়েছে।'