মাকে দাহ করে এসে মৃত্যু ছেলেরও


চৌধুরীপাড়ায় চন্দনের চোলাইয়ের ঠেক থেকে মদ কিনে খেয়েছিলেন মা আর ছেলে দু'জনেই। একটু আগে-পরে। আগে মারা গেলেন মা। তত ক্ষণে বিষমদ ছোবল বসিয়েছে ছেলের শরীরেও। তবু হাসপাতালে না গিয়ে মায়ের মৃতদেহ দাহ করতে গিয়েছিলেন তিনি। তার পর পেটের যন্ত্রণা আর জ্বালায় জ্ঞান হারান। বৃহস্পতিবার দুপুরে মারা গেলেন ছেলেও। 
চৌধুরীপাড়াতেই অনেক দিনের বাস ভালোয়া মাহাতো ও তাঁর ছেলে কৃষ্ণের। আনাজ বিক্রেতা ভালোয়ার স্বামী মারা গিয়েছেন। আছেন আর এক ছেলে গোলাপচাঁদ এবং মেয়ে সোনা। বড় ছেলে কৃষ্ণ অন্যের জমিতে জনমজুরি করতেন। স্ত্রী আশা মাহাতো, তিন বছরের মেয়ে নন্দিনী আর পাঁচ মাসের ছেলে কানহাইয়াকে নিয়ে সংসার।

স্থানীয় সূত্রের খবর, মঙ্গলবার চন্দনের ঠেক থেকে চোলাই কিনেছিলেন ভালোয়া। বুধবার ভোরে আনাজ নিয়ে বালি বাজার যাওয়ার আগে সেই চোলাই খান। তার পর ট্রেনেই অসুস্থ হয়ে পড়েন। উত্তরপাড়া স্টেট জেনারেল হাসপাতালে নিয়ে যাওয়ার পর তাঁর মৃত্যু হয়। 
জানা গিয়েছে, কৃষ্ণও অধিকাংশ দিন সন্ধ্যার পরে চন্দনের ঠেকে যেতেন। মঙ্গলবারও কয়েক জন বন্ধুবান্ধবকে সঙ্গে নিয়ে সেখানে গিয়েছিলেন। বুধবার সকালে মায়ের মৃত্যুসংবাদ আসে। তখনই চন্দনের ঠেকে গিয়ে চোলাই খাওয়ার কথা বাড়িতে জানান কৃষ্ণ। বলেন, তাঁরও শরীর খারাপ লাগছে।

কৃষ্ণের খুড়তুতো দিদি সরস্বতী এ দিন বলেন, ''কাকিমার খবর আসার পরে ভাই জানায়, ওর শরীর খারাপ লাগছে। চাপাচাপি করতে চোলাই খাওয়ার কথা স্বীকার করে। পাড়ায় কত লোক হাসপাতালে ভর্তি হচ্ছে, মারা যাচ্ছে। ভয় পেয়ে ওকে হাসপাতালে যেতে বলি। কিন্তু বলে, 'আগে মাকে নিয়ে আসি তার পর যাব।' কথা না-শুনে বেরিয়ে যায়।''

ভালোয়ার দেহ পেতেই বুধবার সন্ধ্যা সাতটা বেজে যায়। কালনাঘাটে মায়ের দেহ সৎকার করে বৃহস্পতিবার ভোর রাতে বাড়ি ফেরেন কৃষ্ণ। শরীরের অস্বস্তি তখন তীব্র হয়েছে। তাঁর বোন সোনা জানান, সকাল সাতটা নাগাদ পেট ও বুকের জ্বালায় অজ্ঞান হয়ে যান। তাঁকে প্রথমে শান্তিপুর স্টেট জেনারেল হাসপাতালে ও পরে সেখান থেকে শক্তিনগর জেলা হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হয়। সেখানেই দুপুরে মারা যান কৃষ্ণ। হাসপাতালে হাহাকার করছিলেন সোনা, ''মায়ের মৃতদেহ আনার আগে যদি হাসপাতালে যেত হয়তো দাদা প্রাণে বাঁচত।''

বিষ মদ খেয়ে এখনও হাসপাতালে ভর্তি চৌধুরীপাড়ার ২৮ জন। এলাকার মানুষ আতঙ্কিত। না-জানি এ বার কার পালা আসে।