এ রাজ্যের বাতিল যন্ত্রাং থেকেই মুঙ্গেরে তৈরি হচ্ছে ইনস্যাস, এসএলআর, পিস্তল!

প্রেমচাঁদ কুর্মি ওরফে লাট্টু।

বাতিল যন্ত্রাংশ কিনে দেশি ইনস্যাস, এসএলআর রাইফেল বানাচ্ছে মুঙ্গের, ঝাড়খণ্ডের অস্ত্র কারবারিরা। আর এই যন্ত্রাংশ যাচ্ছে এ রাজ্যের ইছাপুর রাইফেল ফ্যাক্টরি থেকে!

তদন্তে নেমে এমনই চাঞ্চল্যকর তথ্য পেয়েছে কলকাতা পুলিশের স্পেশ্যাল টাস্ক ফোর্স (এসটিএফ)। শুক্রবার রাতে ইছাপুর রাইফেল ফ্যাক্টরি থেকে ওই যন্ত্রাংশ পাচারের সঙ্গে যুক্ত প্রেমচাঁদ কুর্মি ওরফে লাট্টুকে গ্রেফতার করে এসটিএফ। ইছাপুর কুমোরপাড়া নবাবগঞ্জের বাসিন্দা লাল্টু। বেশ কয়েকটি লরি রয়েছে তার। রাইফেল ফ্যাক্টরিতে বাতিল যন্ত্রাংশ নষ্ট করে টেন্ডারের মাধ্যমে বিক্রি করে দেওয়া হয়। সেই বাতিল যন্ত্রাংশ প্রেমচাঁদের গাড়িতে করেই নিয়ে যাওয়া হত।

ঘুর পথে প্রেমচাঁদ ওই যন্ত্রাংশ টাকার বিনিময়ে অস্ত্র কারবারিদের হাতে তুলে দিতেন। অনেক সময়ে যন্ত্রাংশগুলি ঠিক ভাবে নষ্টও করা হত না। ফলে দেশি রাইফেল বা পিস্তল অথবা ইনস্যাস, এসএলআরের মতো দেখতে অস্ত্র তৈরি করতে সমস্যা হত না মুঙ্গেরের ব্যবসায়ীদের।

ইতিমধ্যেই এ বিষয়ে বেশ কিছু চাঞ্চল্যকর তথ্য হাতে এসেছে গোয়েন্দাদের। কিন্তু এ বিষয়ে এখনই কোনও মন্তব্য করতে চাইছেন না তদন্তকারীরা। তাঁদের অনুমান এই চক্রে আরও কয়েকজন জড়িত রয়েছে। এমনকি ইছাপুর রাইফেল ফ্যাক্টরির কোনও কর্মীও জড়িত থাকার সম্ভাবনা রয়েছে।

২০১৭ সালের সেপ্টেম্বর মাসে অর্ডিন্যান্স ফ্যাক্টরির ভিতরে চলা এই দুর্নীতি সামনে আসে। ভিজিল্যান্স অফিসার গৌতম মণ্ডল ফ্যাক্টরিতে চলা অনিয়মের বিষয়টি প্রকাশ্যে আনেন। প্রাথমিক তদন্ত শুরু করে সিবিআই।

পাশাপাশি অস্ত্রপাচার নিয়ে তদন্ত শুরু করে কলকাতা পুলিশের এসটিএফ। ১৭ অক্টোবর গৌতম মণ্ডলের অভিযোগের ভিত্তিতে মামলা শুরু করে সিবিআই। ধরা পড়ে ইছাপুর রাইফেল ফ্যাক্টরির জুনিয়র ইঞ্জিনিয়র শম্ভু ভট্টাচার্য।

শম্ভুকে সঙ্গে নিয়ে গোয়েন্দারা হানা দেন নোয়াপাড়ারই বাসিন্দা দীপক সাউ-এর বাড়িতে যায়। ধৃতদের কাছ থেকে কুড়িটি এসএলআর রাইফেলের ম্যাগাজিন ছাড়াও ইনস্যাসের ট্রিগার, হ্যামার-সহ বিভিন্ন যন্ত্রাংশ উদ্ধার করেন গোয়েন্দারা। এই নোয়াপাড়া থানা এলাকাতেই বাড়ি প্রেমচাঁদের।

কিছুদিন আগে, বাবুঘাটের কাছ থেকে অজয়কুমার পাণ্ডে, উমেশ রায়, জয়শঙ্কর পাণ্ডে এবং কার্তিক সাউ-সহ মোট ছ'জনকে গ্রেফতার করে পুলিশ। তাদের কাছ থেকে বুলেট ও কার্বাইনের দু'টি ম্যাগাজিনও পাওয়া গিয়েছিল। তাদের জেরা করে অর্ডিন্যান্স ফ্যাক্টরির দুই জুনিয়র ওয়ার্কস ম্যানেজার সুখদা মুর্মু এবং সুশান্ত বসুর সন্ধান মেলে। পরে তাদেরও গ্রেফতার করা হয়। এই মামলাতেই এবার গ্রেফতার হল প্রেমচাঁদ।