একমাত্র মেয়ের হার্ট, কিডনি, চোখ, লিভার দান করে দৃষ্টান্ত স্থাপন সন্তানহারা দম্পতির


শহরে ফের অঙ্গ প্রতিস্থাপনের উদ্যোগ। ব্রেন ডেথ হওয়া তরুণীর হার্ট ও ২টি কিডনি প্রতিস্থাপন করা হল ৩ জনের দেহে। আই ব্যাঙ্কে রাখা রয়েছে চোখ। বুধবার রাতে গ্রিন করিডর করে দেবলীনা ঘোষের অঙ্গগুলি শহরের বিভিন্ন হাসপাতালে নিয়ে যায় কলকাতা পুলিস।

বুধবার রাতে ঢাকুরিয়ার আমরি হাসপাতালে মৃত্যু হয় সোনারপুরের দক্ষিণ পাড়ার বাসিন্দা বছর পঁচিশের দেবলীনা ঘোষের। জন্ম থেকেই স্পেশাল চাইল্ড হিসেবে বড় হয়ে উঠেছিলেন দেবলীনা। পরিবার সূত্রে জানা গিয়েছে, মাত্র আড়াই মাস বয়সে মাথায় জল জমে যায় দেবলীনার। সেইসময় তার মস্তিষ্কে অস্ত্রোপচার হয়। অস্ত্রোপচার করে মাথায় সান টিউব বসানো হয়। যদিও তারপরেও সমস্যা থেকেই গিয়েছিল। শনিবার ফের মাথার যন্ত্রণা শুরু হয় দেবলীনার। বাবার কোলে অজ্ঞান হয়ে যাওয়ায় রবিবারই তাঁকে ভর্তি করা হয় আমরি হাসপাতালে। বুধবার ব্রেন ডেথ ঘোষণা করেন চিকিত্‍সকরা।

পরিবারের একমাত্র সন্তান ছিলেন দেবলীনা। বাবা অরুণ ঘোষ বেসরকারি সংস্থায় কর্মরত। মা কৃষ্ণা ঘোষ একজন গৃহবধূ। তিনিই মেয়ের দেখভাল করতেন। চিকিত্সকরা ব্রেন ডেথ ঘোষণার পরই দেবলীনার বিভিন্ন অঙ্গ প্রতিস্থাপনে সায় দেয় পরিবার। তাঁদের মেয়ে আরও অনেকের মধ্যে বেঁচে থাকুক। একমাত্র সন্তানকে হারানোর শোকের মধ্যেও এই ভাবনা থেকেই মেয়ের অঙ্গ প্রতিস্থাপনে রাজি হয় দেবলীনার বাবা-মা।

পরিবারের সম্মতি মেলায় রাতেই দেবলীনার দুটি কিডনি, হার্ট, লিভার এবং চোখ শহরের বিভিন্ন হাসপাতালে পৌছে দেওয়ার উদ্যোগ নেয় কলকাতা পুলিস। দেবলীনার হার্ট পান বহরমপুরের তনয়া পণ্ডিত। ফর্টিস হাসপাতালে হার্ট প্রতিস্থাপন করা হয়। অন্যদিকে দেবলীনার দুটি কিডনি নিয়ে যাওয়া হয় এসএসকেএম হাসপাতালে। একটি কিডনি প্রতিস্থাপন করা হয় হুগলির ধনেখালির বাসিন্দা বছর পঁয়তাল্লিশের অনিতা ঘোষের দেহে। অপর কিডনিটি পান হুগলির পাণ্ডুয়ার তৃতীয় বর্ষের ছাত্রী কেয়া দাঁ। জানা গিয়েছে, দুজনেই চলতি বছরের জানুয়ারি মাস থেকে কিডনির সমস্যায় ভুগছিলেন।

লিভার পাওয়ার কথা ছিল বারুইপুরের বাসিন্দা জয়প্রতিম ঘোষের। সেইমত কিডনির সঙ্গে লিভারও নিয়ে যাওয়া হয়েছিল এসএসকেএম হাসপাতালে। কিন্তু দেবলীনার লিভার নষ্ট হয়ে যাওয়ায় সেটি আর প্রতিস্থাপন করা যায়নি। আপাতত শঙ্কর নেত্রালয়ের আই ব্যাঙ্কে রাখা হয়েছে চোখ।