পাকিস্তানে ফের কট্টরপন্থীদের দাপট, প্রাণ বাঁচাতে দেশত্যাগী আসিয়া বিবির আইনজীবী

পাকিস্তানের অধিকাংশ রাস্তা এখন কট্টরপন্থীদের দখলে।

ধর্মদ্রোহ আইনের গিলোটিন থেকে খ্রিস্টান মহিলা আসিয়া বিবিকে বাঁচানোর পরই পাকিস্তান ছাড়লেন তাঁর আইনজীবী। গত বুধবারই তাঁর সওয়ালের ভিত্তিতে আসিয়া বিবির মৃত্যুদণ্ড রদ করে পাক সুপ্রিম কোর্ট। তার পর থেকেই কার্যত কট্টরপন্থীদের দখলে পাকিস্তান। ৪৭ বছর বয়সী এই খ্রিস্টান মহিলাকে মৃত্যুদণ্ডের হাত থেকে বাঁচানোর জন্য তাঁর আইনজীবী সইফুল মুলুককেও নিশানা করেছে কট্টরপন্থী রাজনৈতিক ও জঙ্গি সংগঠনগুলি। শেষ পর্যন্ত নিজের প্রাণ বাঁচাতে শনিবার সকালেই দেশ ছাড়লেন তিনি। একই সঙ্গে তাঁর পরিবারের নিরাপত্তার ব্যবস্থা করার জন্য সরকারের কাছে আবেদন জানিয়েছেন এই পাক আইনজীবী।

২০১০ সালে ধর্মদ্রোহিতার অভিযোগে আসিয়া বিবিকে ফাঁসির সাজা দিয়েছিল পাকিস্তানি আদালত। পাকিস্তান পঞ্জাবের শিকরপুরায় মাঠে বেরি তুলতে গিয়ে দুই প্রতিবেশী মহিলার সঙ্গে বচসা বাধে খ্রিস্টান মহিলা আসিয়া নুরিন ওরফে আসিয়া বিবির। বচসার সময় ইসলাম ধর্মগুরুকে অবমাননা করেছেন, আসিফার বিরুদ্ধে এই অভিযোগ আনা হয়েছিল। যদিও পরে সেই মৃত্যুদণ্ডাজ্ঞায় স্থগিতাদেশ জারি করে লাহৌর হাইকোর্ট।

আসিয়া বিবির মামলা নিঃসন্দেহে গত এক দশকে পাকিস্তানের অন্যতম হাই প্রোফাইল মামলা। তাঁর মুক্তির দাবিতে সরব হয়েছেন সারা দুনিয়ার একাধিক মানবাধিকার সংগঠন। পোপ ষোড়শ বেনেডিক্ট এবং পোপ ফ্রান্সিস, পরপর দুই খ্রিস্টান ধর্মগুরু তাঁর মুক্তির জন্য পাক সরকারের কাছে আবেদন জানিয়েছিলেন। পাশাপাশি, আসিয়ার মৃত্যুদণ্ডের দাবিতে চরমপন্থী অবস্থান নেয় কট্টরপন্থী রাজনৈতিক ও জঙ্গি সংগঠনগুলিও। আসিয়ার মুক্তির দাবিতে সমর্থন জানানোর জন্য আততায়ীদের হাতে খুন হন পাকিস্তানের সংখ্যালঘু বিষয়ক মন্ত্রী শাহবাজ ভাট্টি এবং পঞ্জাবের গভর্নর সলমন তাসির। এই জোড়া খুন সারা দুনিয়াকে দেখিয়ে দিয়েছিল পাকিস্তানে মৌলবাদীদের হাত কতটা দূর যেতে পারে।

গত বুধবার আসিয়া বিবিকে নির্দোষ ঘোষণা করে পাক সু্প্রিম কোর্ট। তার পর থেকেই কট্টরপন্থীদের বিক্ষোভে উত্তাল পাকিস্তান। সেই আন্দোলনের রাশ এখন ইমরানের জোট সরকারের সঙ্গী তেহরিক ই লাবাইকের হাতে। দেশের বিভিন্ন অংশে বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে জাতীয় সড়ক। বন্ধ দেশের অধিকাংশ স্কুল ও বিশ্ববিদ্যালয়। সব কটি বড় শহরে বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে মোবাইল ও ইন্টারনেট পরিষেবা। কট্টরপন্থীদের রোষের মুখে পড়েছেন বিচারপতি ও আইনজীবীরাও। আসিয়ার পক্ষে রায় দেওয়া বিচারপতি ও তাঁর হয়ে আদালতে সওয়াল করা আইনজীবীদের মৃত্যুদণ্ডের দাবি জানিয়েছে মৌলবাদী সংগঠনগুলি। এর পরই দেশ ছাড়ার সিদ্ধান্ত নিলেন সইফুল। যদিও নিরাপত্তার ব্যবস্থা করলে মামলার প্রয়োজনে ফের দেশে ফিরতে হতে পারে বলে জানিয়েছেন সইফুল। তাঁর কথায়,'' আসিয়ার জন্য লড়াইয়ের প্রয়োজনেই আমার বেঁচে থাকা দরকার। তাই দেশ ছাড়ছি।'' পাশাপাশি সুপ্রিম কোর্টের রায় মেনে আসিয়াকে মুক্তি দিতে না পারায় পাক সরকারের ভূমিকার সমালোচনাও করেছেন তিনি।

সংবাদ সংস্থা সূত্রে খবর, কট্টরপন্থীদের বিক্ষোভে রাশ টানতে তাঁদের সঙ্গে সমঝোতার রাস্তাতেই হেঁটেছেন ইমরান খান। পাঁচ দফা সমঝোতার ভিত্তিতে জোটসঙ্গী তেহরিক-ই-লাবাইকের সঙ্গে সন্ধি হয়েছে পাক সরকারের । সুপ্রিম কোর্টে আসিয়া বিবির মুক্তির নির্দেশকে চ্যালেঞ্জ জানানোর রাস্তায় হাঁটতে চাইছে মৌলবাদী সংগঠনগুলি। পাশাপাশি আসিয়া বিবি যাতে দেশ ছেড়ে বেরোতে না পারেন, সেই বিষয়টিও রাখা হয়েছে চুক্তিপত্রে। কট্টরপন্থীদের সবক'টি দাবিই মেনে নিয়েছে ইমরান খান নেতৃত্বাধীন পাক সরকার। যদিও মৌলবাদীদের সঙ্গে পাক সরকারের এই বোঝাপড়ায় হতাশ দেশের উদারমনস্ক মানুষজন। এই চুক্তিকে 'ফের আত্মসমর্পণ'-এর ঘটনা বলেছে পাকিস্তানের সব থেকে পুরনো সংবাদপত্র 'ডন'।