রং কালো বলে নির্যাতন! দেহ উদ্ধার গৃহবধূর


গায়ের রং কালো বলে খোঁটা শুনতে হত শ্বশুরবাড়িতে। মারধর করা হত। মাঝে মধ্যে টাকা চেয়ে ফোন আসত জামাইয়ের। ভ্যানচালক শ্বশুর ক'দিন আগে ৫০ হাজার টাকা দিয়েছিলেন। সেই টাকায় মোটরবাইক কিনে ঘুরত জামাই।

এত সবের পরেও প্রাণে বাঁচল না মেয়ে। সোমবারই শাশুড়িকে ফোন করে জামাই নগদ টাকা চেয়েছিল। বলেছিল, টাকা দিতে না পারলে সে আর সংসার করবে না। পর দিন শ্বশুরবাড়িতে ঝুলন্ত দেহ মিলল পূজা কুণ্ডু (২০) নামে ওই তরুণীর।

মঙ্গলবার সকালে ঘটনাটি ঘটেছে উত্তর ২৪ পরগনার গোপালনগর থানা এলাকার ঘোষপাড়ায়। পূজার মা টুম্পা মণ্ডলের লিখিত অভিযোগের ভিত্তিতে পুলিশ পূজার স্বামী মিঠুন ও শাশুড়ি সবিতার বিরুদ্ধে আত্মহত্যায় প্ররোচনার মামলা রুজু করেছে। সবিতাকে পরে গ্রেফতার করেছে পুলিশ।

টুম্পার দাবি, ''বালিশ চাপা দিয়ে মেরে ফেলা হয়েছে মেয়েকে।'' সেই দাবি খতিয়ে দেখছে পুলিশ। ময়নাতদন্তের রিপোর্ট পাওয়ার পরে মৃত্যুর কারণ বোঝা যাবে বলে জানিয়েছেন তদন্তকারীরা অফিসারেরা। অভিযুক্তদের খোঁজে তল্লাশি চলছে।

গায়ের রং কালো বলে শ্বশুরবাড়িতে অত্যাচারিত হওয়ার বহু ঘটনা নানা সময়ে সামনে এসেছে। পঞ্চমীর দিন শ্বশুরবাড়িতে অগ্নিদগ্ধ হন নিউ ব্যারাকপুরের বধূ সঙ্গীতা রায়। পরে মারা যান হাসপাতালে। গ্রেফতার হয় তাঁর স্বামী। গায়ের রং কালো বলে অত্যাচার চলত সঙ্গীতার উপরেও। সেই সঙ্গে ছিল পণের দাবি।

গোপালনগরের ঘটনায় পুলিশ ও স্থানীয় সূত্রে জানা গিয়েছে, বছর তিনেক আগে বনগাঁর কালিয়ানির বাসিন্দা পূজার বিয়ে হয়েছিল মিঠুনের সঙ্গে। শ্বশুরবাড়ির দাবিমতো বিয়েতে গয়না, আসবাবপত্র, নগদ ১০ হাজার টাকা দিয়েছিল মেয়ের পরিবার। কিন্তু বিয়ের কিছু দিন পর থেকে স্বামী ও শাশুড়ি  পূজার উপরে শারীরিক নির্যাতন শুরু করে। ঠিকমতো খেতে দেওয়া হত না। গায়ের রং কালো বলে খোঁটা দেওয়া হত। জাত তুলেও অপমান করা হত। সেই সঙ্গে ছিল আরও টাকার দাবি।

পূজাকে কয়েকবার মারধর করে বাপের বাড়ি চলে আসতে বাধ্য করা হয়েছিল। বছরখানেক আগে মেয়ে হয় পূজার। তাঁর মা টুম্পা জানিয়েছেন, সন্তানের মুখ চেয়ে শ্বশুরবাড়িতে অনেক অপমান, অত্যাচার সহ্য করে থাকত মেয়ে। তিনি পুলিশকে আরও জানিয়েছেন, সোমবার মিঠুন তাঁকে ফোন করে টাকা চায়। বিয়ের পরে মিঠুনকে আরও ৫০ হাজার টাকা দিয়েছিল পূজার পরিবার। সেই টাকায় মোটরবাইক কিনেছিল জামাই। তার পরেও টাকা চাওয়া বন্ধ হয়নি। পূজার বাবা কৃষ্ণপদ ভ্যান চালান। তাঁদের পক্ষে বার বার এত টাকা দেওয়া সম্ভব ছিল না বলে জানিয়েছেন টুম্পা। কিন্তু টাকা না দিলে পূজার সঙ্গে সংসার করা তার পক্ষে সম্ভব নয় বলে জানিয়ে দেয় মিঠুন।

মঙ্গলবার সকাল ১১টা নাগাদ মিঠুন শাশুড়িকে ফোনে জানায়, মেয়ে গলায় দড়ি দিয়ে আত্মহত্যা করেছে। বাপের বাড়ির লোকজন পৌঁছনোর আগেই পূজাকে বনগাঁ মহকুমা হাসপাতালে নিয়ে যান পড়শিরা। সেখানে চিকিৎসকেরা জানিয়ে দেন, দেহে প্রাণ নেই। টুম্পারা মেয়ের শ্বশুরবাড়িতে পৌঁছে দেখেন, ঘরের দরজায় তালা ঝুলছে। বছরখানেকের নাতনি উঠোনে শুয়ে হাত-পা ছুড়ে খেলছে। তাকে নিজেদের কাছে এনে রেখেছেন টুম্পারা।