‘শিল্প আনার হ্যাপা অনেক, গো-পালন ঢের ভাল’, ফের বেলাগাম বিপ্লব

আগেও একাধিকবার বিতর্কিত মন্তব্য করেছেন বিপ্লব দেব।

দেশে শিল্প নেই? বেকারত্ব বাড়ছে? চিন্তা কী? গো-মাতা তো রয়েছেন! তাঁকেই ঘরে আনুন। মন দিয়ে সেবা করুন। সুফল মিলবে ছ'মাসেইা। বিপুল রোজগার হবে। তাতে অভাবও ঘুচবে। আবার স্বাস্থ্যও ফিরবে। না, রাস্তায় ঝোলানো কোনও সস্তা বিজ্ঞাপন নয়, বরং ত্রিপুরার মুখ্যমন্ত্রী বিপ্লবকুমার দেব এমন পরামর্শ দিয়েছেন।তাঁর বক্তব্য, দেশে শিল্প আনার অনেক হ্যাপা। প্রচুর খরচও পডে়। আবার সময়ও লাগে অনেক। তার চেয়ে গো-পালন অনেক সহজ। ছ'মাসে রোজগার নিশ্চিত। ঘরের গরুর দুধ খেয়ে ফিরবে স্বাস্থ্যও। আর অপুষ্টিতে ভুগতে হবে না শিশুদের।

রবিবার ত্রিপুরা প্রদেশ কৃষক মোর্চা কমিটির বৈঠকে বক্তৃতা করছিলেন তিনি। সেখানেই এমন মন্তব্য করেন। বলেন, ''আমি শিল্পের বিরোধী নই। তবে তাতে ১০০০ কোটির বিনিয়োগ লাগে। প্রায় ২ হাজার কর্মী নিয়োগ করতে হয়। তার চেয়ে গো-পালন অনেক সহজ। ৫ হাজার পরিবারকে ১০ হাজার গরু কিনে দিলেই হল। রোজগার শুরু হবে ছ'মাসেই।''

রাজ্যবাসীর স্বার্থে তাঁর সরকার বিশেষ গো-পালন প্রকল্প আনছে বলেও জানান বিপ্লব দেব। বলেন, ''শীঘ্রই একটি প্রকল্প শুরু করছি আমরা। যার আওতায় রাজ্যের ৫ হাজার পরিবারকে গরু দেওয়া হবে। গরু কেনার জন্য ঋণও নিতে পারবেন তাঁরা। তাতে এত রোজগার হবে যে, ঋণ শোধ করতে কোনও অসুবিধা হবে না।''

এ বছর ডিসেম্বর মাস থেকেই প্রকল্পটি শুরু হবে বলে জানিয়েছেন রাজ্য বিজেপির মুখপাত্র নবেন্দু ভট্টাচার্য। কাদের এই প্রকল্পের আওতায় আনা যায়, তার জন্য গ্রামবাসীদের বাছাই শুরু হবে অতি শীঘ্র।  বাছাই করা লোকজনই গরু পাবেন। তাঁদের গোয়াল থেকে  দুধ বাজারে পৌঁছে দেওয়ার দায়িত্ব সরকারের।

তিনি নিজেও গো-পালনে অংশ নেবেন বলে জানিয়েছেন বিপ্লব দেব। আগরতলায় তাঁর বাসভবনের পিছন দিকে একটি গোয়াল তৈরি করা হবে। তাতে রাখা হবে গরু। তাঁর গোটা পরিবার সেখানে উৎপাদিত দুধ  খাবেন । যাতে তাঁদের দেখে ত্রিপুরার মানুষ উৎসাহ পান। অপুষ্টির বিরুদ্ধে লড়াইও সফল হয়।
আগরতলায় মুখ্যমন্ত্রীর আবাসনে সত্যি সত্যিই গোয়াল তৈরি হবে কিনা জানা নেই। তবে তেমনটা হলে আশ্চর্য হওয়ার কিছু নেই।  কারণ নব্বইয়ের দশকে লালুপ্রসাদের বাসভবনেও ছিল বিশাল গোশালা। তবে সে ছিল পারিবারিক অভ্যাস। রোজগারের এমন অভিনব উপায় এর আগে কোনও মুখ্যমন্ত্রীকে বের করতে দেখা যায়নি। এর আগে, এপ্রিল মাসে গ্র্যাজুয়েট ছেলেমেয়েদের চাকরির জন্য হন্যে হয়ে না ঘুরে গরু কেনার পরামর্শ দিয়েছিলেন তিনি। পানের দোকান দিতেও বলেছিলেন। তার জেরে তীব্র সমালোচনার মুখে পড়তে হয় বিপ্লব দেবকে।

তবে একবার দু'বার নয়, মার্চ মাসে ত্রিপুরার ক্ষমতা হাতে পাওয়ার পর থেকে এখনও পর্যন্ত একাধিকবার আলটপকা মন্তব্য করে বিতর্ক বাঁধিয়েছেন তিনি। মহাভারতের সময়ও স্যাটেলাইটের অস্তিত্ব ছিল বলে একবার এক সভায় দাবি করেন তিনি। সে বার তাঁর যুক্তি ছিল, স্যাটেলাইট, ইন্টারনেট না থাকলে ধৃতরাষ্ট্রকে কুরুক্ষেত্র যুদ্ধের লাইভ আপডেট কীভাবে দিচ্ছিলেন সঞ্জয়! সরকারের সমালোচনা করলে নখ উপড়ে নেওয়ার হুমকিও দিতে দেখা গিয়েছে তাঁকে।