মুক্তিপণ না পেয়ে কুকুর লেলিয়ে দিল অপহরণকারীরা, গ্রেপ্তার ১


'পুলিশকর্তার লোক' পরিচয় দিয়ে এক যুবককে বহুতলের ফ্ল্যাটে 'অপহরণ' করে আটকে রেখে তোলাবাজি। 'মুক্তিপণ' না দেওয়ায় তাঁর উপর হিংস্র কুকুর লেলিয়ে দেওয়ার অভিযোগ উঠল অপহরণকারীদের বিরুদ্ধে। এই ঘটনায় দক্ষিণ ২৪ পরগনার সোনারপুর থেকে সুদীপ্ত জানা নামে এক যুবককে দক্ষিণ কলকাতার সার্ভে পার্ক থানার পুলিশ গ্রেপ্তার করেছে। যদিও ধৃতর দাবি, পাওনা টাকা আদায়ের জন্যই দু'জনকে ডেকে  নিয়ে যাওয়া হয়।

পুলিশ জানিয়েছে, দক্ষিণ ২৪ পরগনার ফলতার বাসিন্দা ও বিমা এজেন্ট প্রশান্ত মণ্ডল অভিযোগ জানান, কয়েকদিন আগে তাঁর মোবাইলে একটি ফোন আসে। সুমন জানা নামে এক ব্যক্তি তাঁর সঙ্গে একটি নতুন ব্যবসার বিষয়ে কথা বলতে চায়। ব্যবসার টোপ দিয়েই তাঁকে বাঘাযতীন স্টেশনের অদূরে বাইপাসের উপর একটি নামী বহুতল আবাসন তথা শপিং মলের কাছে আসতে বলে। প্রশান্তবাবু তাঁর অংশীদার প্রদীপ মাইতিকে সঙ্গে নিয়ে বাইকে করে সেখানে পৌঁছন। এক যুবক তাঁদের দু'জনকে শপিং মলের পিছনে একটি বহুতলের পাঁচতলায় একটি ফ্ল্যাটে নিয়ে যায়। সেখানে অপেক্ষা করছিল আরও তিনজন। এদের মধ্যে সুমন জানা নিজেকে ডিএসপি পদের এক পুলিশকর্তার লোক বলে পরিচয় দেয়। তাকে হুমকি দিয়ে বলে, তার বিরুদ্ধে ডায়মন্ডহারবার থানায় অভিযোগ রয়েছে। ওই মামলা থেকে মুক্তি পেতে গেলে তিন লাখ টাকা দিতে হবে। রীতিমতো আকাশ থেকে পড়েন প্রশান্তবাবু ও প্রদীপবাবু। এই টাকা তাঁরা দেবেন কেন, পালটা প্রশ্ন তোলেন। শুরু হয় বাকবিতণ্ডা। এর মধ্যেই ঘরের দরজা ভিতর থেকে বন্ধ করে দেওয়া হয়। তাঁরা বুঝতে পারেন, তাঁদের 'অপহরণ' করা হয়েছে। তাঁদের মারধর করতে শুরু করে অভিযুক্তরা। 'অপহরণকারী'রা তাঁদের এটিএম কার্ড ও বাইকের চাবি ছিনিয়ে নেয়। একটি সাদা স্ট্যাম্প পেপার ও দু'টি ফাঁকা চেকে সই করতে বলে। তাঁরা এতে রাজি না হলে দু'টি পোষা হিংস্র কুকুর তাঁদের দিকে লেলিয়ে দেওয়া হয়। কুকুরের ভয়ে তাঁরা এটিএম কার্ডের পিন জানিয়ে দেন। সেই কার্ড থেকে ৩৩ হাজার টাকা তুলে নেওয়া হয়।

এবার প্রশান্তবাবুর স্ত্রীকে ফোন করে তারা মুক্তিপণ দিতে বলে। তাঁর স্বামীকে খুনের হুমকি দেওয়া হয়। রাতের মধ্যেই এটিএমে গিয়ে একটি বিশেষ অ্যাকাউন্টে ৮৫ হাজার টাকা তাঁরা জমা দেন। প্রশান্তবাবুর অভিযোগ, তাঁর কানে এত জোরে মারা হয় যে, তিনি শ্রবণশক্তি হারানোর মুখে। বাইকটি রেখে দিয়ে ভোররাতে তাঁকে ছেড়ে দেওয়া হয়। ওই ব্যক্তির অভিযোগ, এর পরও 'ব্যানার্জিবাবু' নামে এক ব্যক্তি নিজেকে সোনারপুর থানার অফিসার বলে পরিচয় দিয়ে জানান, সুমন তাঁর কাছে বাইকটি জমা রেখে পালটা ১ লাখ ৭০ হাজার টাকা প্রতারণার অভিযোগ করেছে। সুমনকে জেরা করে বাকিদের সন্ধান চলছে বলে জানিয়েছে পুলিশ।